প্রকাশ্যে হিন্দু ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে খুন, দেহের উপর নাচ আততায়ীদের

ঢাকা: বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ফের বর্বর আক্রমণ। রাজধানী ঢাকার বুকে, শত মানুষের ভিড়ে, প্রকাশ্য রাস্তায় পিটিয়ে খুন করা হল হিন্দু ব্যবসায়ী (Hindu businessman)…

প্রকাশ্যে হিন্দু ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে খুন, দেহের উপর নাচ আততায়ীদের

ঢাকা: বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ফের বর্বর আক্রমণ। রাজধানী ঢাকার বুকে, শত মানুষের ভিড়ে, প্রকাশ্য রাস্তায় পিটিয়ে খুন করা হল হিন্দু ব্যবসায়ী (Hindu businessman) লালচাঁদ সোহাগকে। শুধু খুনই নয়—তাঁকে নৃশংসভাবে হত্যা করার পর, খুনিরা মৃতদেহের উপর উঠে নাচানাচি করে। সেই বিভীষিকাময় ঘটনার ভিডিও ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে এবং দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে।

কী ঘটেছিল সেই দিন?
জানা গিয়েছে, নিহত লালচাঁদ সোহাগ ঢাকার বাসিন্দা এবং মূলত ভাঙারির ব্যবসায় (Hindu businessman) যুক্ত ছিলেন। গত বুধবার (৯ জুলাই) সন্ধ্যায় ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে তাঁকে ঘিরে ধরে কয়েকজন দুষ্কৃতী। প্রথমে তাঁকে ঘুষি, লাথি মেরে মারধর করা হয়। পরে রাস্তায় ফেলে ইট ও পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে তাঁকে খুন করে দুষ্কৃতীরা। শুধু তাই নয়, হত্যার পর সেই মৃতদেহের উপর চড়ে আনন্দে নৃত্য করতে দেখা যায় অভিযুক্তদের।

   

এই মর্মান্তিক দৃশ্যের ভিডিও ভাইরাল হতেই দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখান। তাঁরা সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, সংখ্যালঘুদের জীবন নিয়ে এমন নিষ্ঠুর খেলাকে প্রশ্রয় দেওয়া চলবে না।

রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব কি হত্যার কারণ?
সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, লালচাঁদ এক সময় বিএনপির সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তিনি বিএনপি নেতা ইসহাকের পক্ষে চাঁদা তুলতেন। সম্প্রতি দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে তাঁকে সেই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর তিনি দলের অন্য নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলার চেষ্টা করলে, ইসহাকের অনুগামীরা ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে। রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব এবং ব্যক্তিগত রেষারেষির জেরেই তাঁকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে বলে অনুমান তদন্তকারীদের।

সরকারি প্রতিক্রিয়া ও আইনি পদক্ষেপ
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গির আলম চৌধুরী এই ঘটনাকে ‘বর্বর’ ও ‘সভ্য সমাজের কলঙ্ক’ বলে আখ্যা দেন। তিনি জানান, সরকার এই ঘটনায় অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে। পুলিশ ইতিমধ্যেই সাতজন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। আরও ২০ জনের বিরুদ্ধে অজ্ঞাত পরিচয়ে মামলা রুজু হয়েছে।

Advertisements

মামলাটি বিশেষ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে যাতে দ্রুত বিচার সম্পন্ন হয় এবং ভুক্তভোগী পরিবারের প্রতি সুবিচার হয়। একই সঙ্গে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

এই ঘটনার পর নতুন করে প্রশ্ন উঠছে—বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা আদৌ আছে কি না? সামাজিক মাধ্যম থেকে শুরু করে সংবাদমাধ্যম, সর্বত্রই এখন ঘৃণা, শঙ্কা ও প্রতিবাদের সুর। অনেকেই বলছেন, এই ঘটনা কেবল একটি হত্যাকাণ্ড নয়, বরং একটি গোটা সম্প্রদায়কে ভয় দেখানোর বার্তা।

পরিস্থিতি যে কতটা জটিল, তা বুঝিয়ে দিচ্ছে এই ঘটনা। সরকার ও প্রশাসনের উপর চাপ বাড়ছে, যাতে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি আটকানো যায়।