Bangladesh: কৃষক নিজেকে বিক্রি করছেন! ক্রীতদাস ব্যবসার নথি উদ্ধারে মোড় নিল ইতিহাস

তখন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন। ‘সিপাহী বিদ্রোহ’ হবার পঞ্চাশ বছর আগের কথা। কোম্পানি শাসনামলে অবিভক্ত ভারত জুড়ে কৃষকদের কেনা বেচার অতি গুরুত্ব দাসখতনামা বা…

তখন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন। ‘সিপাহী বিদ্রোহ’ হবার পঞ্চাশ বছর আগের কথা। কোম্পানি শাসনামলে অবিভক্ত ভারত জুড়ে কৃষকদের কেনা বেচার অতি গুরুত্ব দাসখতনামা বা দলিল উদ্ধার হয়েছে বাংলাদেশ (Bangladesh) থেকে। অতি গুরুত্বপূর্ণ এই দলিল (Historical Evidence) আর্থ-সামাজিক ইতিহাস গবেষণার মোড় ঘুরিয়ে দিচ্ছে। এই নথি উদ্ধার করা হয়েছে সিলেটের (Sylhet) সরকারি মহাফেজখানার প্রাচীন দলিলের পাহাড় থেকে। যেখানে লেখা আছে ধানের দামে নিজেদের বিক্রি করছেন কৃষকরা।

বাংলাদেশের সংবাদপত্র ‘প্রথম আলো’ এই চাঞ্চল্যকর ক্রীতদাস কেনা বেচার নথি সহ বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদক সাদিয়া মাহজাবীন ইমাম।

প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, কৃষকদের ক্রীতদাস বানিয়ে কেনা বেচার বিবরণ। মোট চারটি দলিল মিলেছে। পরে সেই দলিলগুলো শ্রীহট্ট সংস্কৃত কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এবং আইনজীবী দিলীপ কুমার দাশ চৌধুরী খতিয়ে দেখেন। তিনি জানিয়েছেন, এসব দলিলে অসমিয়া, সংস্কৃত ও নাগরী লিপির ব্যবহার হয়েছে। মানুষ বেচাকেনার এই দলিলগুলো লেখার সময় তিনজন করে সাক্ষী রাখা হয়েছিল। নিয়ম ছিল বেচাকেনা হওয়ার এক মাসের মধ্যে এগুলো নথিভুক্ত করতে হবে।

https://video.incrementxserv.com/vast?vzId=IXV533296VEH1EC0&cb=100&pageurl=https://kolkata24x7.in&width=300&height=400

সিলেটর সাবরেজিস্ট্রি অফিসের মহাফেজখানা থেকে মিলেছে  ক্রীতদাস তথা মানুষ কেনাবেচার তিনটি দলিল। এই দলিলগুলি অনুযায়ী দুশো বছর আগের ভারতীয় তথা গ্রাম বাংলার এক করুণ দিকের নথিভুক্ত প্রমাণ হাতে এসেছে গবেষকদের।

দলিলে লিখিত ১৮০৬ সালের হিসেব অনুযায়ী কৃষককে ক্রীতদাস হিসেবে কেনার মূল্য ছিল তৎকালীন সময়ের হিসেবে ২৫ টাকা পর্যন্ত। দলিলে লিখিত এমনই কৃষক গনাই ভান্ডারি নিজেকে বিক্রি করে এই টাকা পান। আরও কয়েকজন ১০-১৫ টাকার মধ্যে নিজেদের বিক্রি করেছিলেন। নিজেরাই নিজেদের বিক্রি করছেন এই মর্মে দলিলে স্বীকারোক্তি করতে হয়েছে।ক্রেতারা ছিলেন একই জেলার বিভিন্ন স্থানের বাসিন্দা।

দলিল থেকে মিলেছে তথ্য বাংলায় দাস হিসেবে সবচেয়ে কম মূল্য ছিল শিশুদের। এক শিশু দাসকে ৫০ বছরের জন্য কেনার তৎকালীন মূল্য ছিল সোয়া ১ টাকা।   ঋণ শোধের জন্য মা সহ এক সন্তানের বিক্রির নথি ধরা আছে দলিলে। ১৮০৬ খ্রিষ্টাব্দ, বাংলা ১২১৩ সালের ১ পৌষ সিলেটে আইনি প্রক্রিয়ায় নথিভুক্ত হয়েছিল এই দলিল।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ঠিক পরের বছর ১৮০৭ সালে পরপর দুদিন মানুষ বিক্রির আরও দুটি দলিল লেখা হয়েছিল।  ক্রীতদাস কিনেছিলেন কেন্দরাম ও গঙ্গারাম নামে দুই ভাই।

বংশ পরম্পরায় ক্রীতদাস কেনার শর্তগুলি লিখিত আছে দলিলে। এও এক অতি গুরুত্বপূর্ণ নথি বলে মনে করছেন গবেষকরা

অধিকাংশ দলিল নাগরী লিপি, উর্দু, ফারসি, ব্রজবুলি ও সংস্কৃত ভাষায় লেখা। সেগুলি বিশ্লেষণ করেন সিলেটের  হরিপুরের বাসিন্দা অশিতীপর দলিল লেখক আজিজুর রহমান। তিনি নাগরি ও সংস্কৃত ভাষায় দলিল পড়ে  প্রাথমিকভাবে জানান মানুষ কেনাবেচার তথ্য লিখিত আছে। এরপর সিলেটের প্রবীণ আইনজীবী ও অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক  দিলীপ কুমার দাশ চৌধুরী অনুবাদ করেন দলিলের বয়ান। এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের সহযোগিতায় চূড়ান্ত পরীক্ষা করা হয়। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত হয় এই দিনগুলিতে মানুষ বিক্রির প্রামাণ্য নথি।