বাংলাদেশের (Bangladesh) রাজধানী ঢাকা (Dhaka) রূপ নিচ্ছে এক নিরাপত্তা বলয়ে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষণার আগে শহরজুড়ে চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করেছে প্রশাসন। একইসঙ্গে আওয়ামী লীগের ঘোষিত লকডাউন কর্মসূচি ঘিরে উত্তেজনা ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বেড়ে চলেছে।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মহানগর ও আশপাশের জেলাগুলিতে পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (RAB) এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (BGB)-এর বিপুল বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। শহরের প্রধান মোড়, আদালত চত্বর, সচিবালয় এবং বিমানবন্দর অঞ্চলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কড়া করা হয়েছে।
🚨 রায়ের আগে উত্তেজনা চরমে
দেশের রাজনৈতিক মহল ও সাধারণ মানুষের চোখ এখন আদালতের দিকে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চলা মামলাটির রায় ঘোষণা হওয়ার কথা আজ বা আগামীকাল। মামলার রায়কে কেন্দ্র করে ঢাকা ও দেশের অন্যান্য অঞ্চলে অস্বাভাবিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে।
বিশেষ সূত্রের খবর অনুযায়ী, ঢাকা মহানগরের সংবেদনশীল এলাকাগুলিতে সিসিটিভি নজরদারি বাড়ানো হয়েছে, এবং বেশ কয়েকটি স্থানে মোবাইল নেটওয়ার্ক নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
🧭 আওয়ামী লীগের লকডাউন কর্মসূচি
আওয়ামী লীগের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে সারাদেশব্যাপী লকডাউন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি, যা মূলত রায় ঘোষণার আগে সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক চাপে রাখার উদ্দেশ্যে।
দলটির এক শীর্ষ নেতা বলেছেন,
“আমরা গণতান্ত্রিকভাবে আমাদের দাবিদাওয়া জানাব। তবে কোনো বিশৃঙ্খলা চাই না।”
তবে প্রশাসন মনে করছে, এই কর্মসূচি ঘিরে সংঘাত বা সহিংসতার সম্ভাবনা রয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার জানিয়েছেন,
“যে কোনো প্ররোচনা বা অবৈধ সমাবেশ কঠোরভাবে দমন করা হবে। নিরাপত্তা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।”
🔒 আদালত চত্বরে নজিরবিহীন নিরাপত্তা
ঢাকার আদালত এলাকায় প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। শুধুমাত্র অনুমোদিত ব্যক্তিরাই প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছেন। আদালত ভবনের চারপাশে র্যাবের আর্মড ভ্যান, বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট এবং কাউন্টার টেররিজম স্কোয়াড মোতায়েন করা হয়েছে।
রায় ঘোষণার সময় সাংবাদিকদের প্রবেশের জন্য বিশেষ পাস প্রদান করা হচ্ছে। আদালতের আশেপাশে দোকানপাটও আংশিকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।
🧠 সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ
রায়ের আগে ঢাকাবাসীর মধ্যে অস্বস্তি ও উৎকণ্ঠা স্পষ্ট। অনেকেই আগেভাগে অফিস ছুটি নিচ্ছেন, অনেকে দোকান আগে বন্ধ করছেন। শহরের গণপরিবহন আংশিকভাবে সীমিত করা হয়েছে।
এক বাসচালক বলেন,
“রাস্তায় পুলিশ-র্যাব যেভাবে ঘুরছে, মনে হচ্ছে বড় কিছু ঘটতে চলেছে।”
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলিতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।
📜 মামলার প্রেক্ষাপট
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এই মামলাটি গত কয়েক বছর ধরেই রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে। অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রিত্বের সময় কিছু অর্থনৈতিক অনিয়ম ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে বিরোধীরা তাঁকে অভিযুক্ত করেছে। আওয়ামী লীগের দাবি, এটি “রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা।”
রায়ে যদি হাসিনা দোষী সাব্যস্ত হন, তবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড় ধাক্কা লাগতে পারে। অন্যদিকে, তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হলে তাঁর রাজনৈতিক দল নতুন উদ্দীপনায় মাঠে নামবে বলেই মনে করছে বিশ্লেষকরা।
🗣️ রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
বিরোধী দল বিএনপি ইতিমধ্যেই রায় ঘোষণাকে “জাতীয় রাজনীতির মোড় ঘোরানো মুহূর্ত” বলে মন্তব্য করেছে। দলটির এক মুখপাত্র বলেছেন,
“এই রায় বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গণতন্ত্রের দিক নির্ধারণ করবে।”
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অবশ্য বলেন,
“আমরা বিচারব্যবস্থার ওপর আস্থা রাখি। যে কোনো সিদ্ধান্তই জনগণের সামনে গ্রহণযোগ্য হবে।”
🌍 আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ঢাকায় অবস্থিত বিভিন্ন বিদেশি দূতাবাস ও আন্তর্জাতিক সংগঠন ইতিমধ্যেই নাগরিকদের সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে। জাতিসংঘের ঢাকাস্থ মিশন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে,
“বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আমরা ঘনিষ্ঠ নজর রাখছি। শান্তিপূর্ণ ও আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সব পক্ষের উচিত সমাধান খোঁজা।”
বর্তমানে ঢাকা কার্যত এক সশস্ত্র নিরাপত্তা বলয়ে ঘেরা শহর। রায় ঘোষণার আগে রাজনৈতিক উত্তাপ, প্রশাসনিক তৎপরতা এবং সাধারণ মানুষের উদ্বেগ—সব মিলিয়ে বাংলাদেশের রাজধানী এখন এক অনিশ্চিত অপেক্ষায়।
সব নজর এখন আদালতের দিকে—শেখ হাসিনা রায়ের দিনই ঠিক করবে বাংলাদেশের আগামী রাজনীতির পথ।


