Bangladesh: এস পড়ি…দিনমজুর জয়নাল গড়ে ফেললেন বিরাট গ্রন্থাগার

এক দিনমজুর যিনি বিরাট এক গ্রন্থাগার বানিয়েছেন।  গ্রন্থনীড় নাম। এখানে আছে কমপক্ষে সাড়ে তিন হাজার বই। বিপুল বইয়ের সম্পদ নিয়ে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছেন (Bangladesh) বাংলাদেশি …

এক দিনমজুর যিনি বিরাট এক গ্রন্থাগার বানিয়েছেন।  গ্রন্থনীড় নাম। এখানে আছে কমপক্ষে সাড়ে তিন হাজার বই। বিপুল বইয়ের সম্পদ নিয়ে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছেন (Bangladesh) বাংলাদেশি  জয়নাল।  লিখলেন ডল চক্রবর্তী।

দিনমজুরি করে চালাতে হয় সংসার। বাংলাদেশের রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রাম জেলার বাসিন্দা জয়নাল আবেদিন দিনমজুরি করেন। একদিন কাজ না করলে জোটেনা খাবার। এমনই জয়নাল কিন্তু বিশাল বই রাজত্বের রাজা। দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া এই যুবককে পঞ্চম শ্রেণিতে তার পড়াশোনার ইতি টানতে হয়েছে। অভাবের কারণে দিনমজুরি শুরু করেন তিনি। কিন্তু এই হতদরিদ্র দিনমজুরই ৩ হাজার ৫০০ বই নিয়ে গড়ে তুলেছেন একটি লাইব্রেরি। 

কুড়িগ্রাম জেলা শহর থেকে সাতভিটা গ্রামের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। এই গ্রামেই গ্রন্থনীড় নামের লাইব্রেরিটি তৈরি করেছেন জয়নাল। হাল্কা নীল রঙের গ্রন্থনীড়ের ভিতরে কাঠের আলমারিতে সারি সারি সাজানো রয়েছে অসংখ্য বই। পাশের দেয়ালে টানানো আছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, সুফিয়া কামাল, শামসুর রাহমান ও সৈয়দ শামসুল হকের মত বিখ্যাত লেখকদের ছবি।

জয়নাল আবেদীন জানিয়েছেন, তিনি কাজের সন্ধানে যখনই গাজীপুর গিয়েছেন, বই কেনার চেষ্টা করেছেন। গাজীপুরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশন, টঙ্গী কলেজ গেট থেকে পুরোনো বই কিনতেন তিনি। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তার বইয়ের সংগ্রহ। এরপর তিনি পাঠাগার করার উদ্যোগ নেন। তিনি তার জমানো টাকা দিয়ে টিনের চালা তৈরি করেন। সেখানে ছোট একটি বই রাখার র‍্যাক, কয়টা চেয়ার ও একটি টেবিলও রাখেন। ২০১১ সালের ১৫ নভেম্বর তার সাতভিটা গণপাঠাগারের উদ্বোধন হয়।

২০১৩ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে একজন মারা যাওয়ার পরে সাতভিটা গ্রামটি  পুরুষশূন্য হয়ে পড়ে। একসময় প্রায় বন্ধ হয়ে যায় জয়নাল আবেদীনের কষ্ট করে গড়ে তোলা পাঠাগারটি। ২০১৫ সালে তিনি আবার নতুন করে লাইব্রেরি গড়ার পরিকল্পনা করেন। এবার তিনি প্রতিবেশির কাছ থেকে জমি কিনে লাইব্রেরি তৈরি করেন। অবশেষে ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করা হয় ‘সাতভিটা গ্রন্থনীড়’ নামের লাইব্রেরিটি।

বাংলাদেশ  সরকারের যুগ্ম সচিব এনামুল হাবিব গ্রন্থনীড়কে পাকা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে আধা পাকা ঘর, আসবাব, কিছু বই, চেয়ার–টেবিল তৈরি করে দেন তিনি। পরবর্তীতে ৬ অক্টোবর নতুন গ্রন্থনীড়ের উদ্বোধন হয়। জয়নাল আবেদীনের গ্রন্থনীড়ে প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ জন পাঠক বই পড়েন। প্রতি মাসে বই নিয়ে যান ৫৫০ থেকে ৬০০ জন পাঠক।  লাইব্রেরিটি কেবল বিকেল বেলা খোলা হয়। তবে শুক্রবার সকাল-বিকেল খোলা থাকে। বর্তমানে লাইব্রেরি নিয়েই দিন কাটান তিনি। ভবিষ্যতে একটি আলোর স্কুল এবং বিজ্ঞান ক্লাব করতে চান এই স্বপ্নের কারিগর।