বাংলাদেশ সরকার পতনের ঘণ্টা বেজেছে! ইউনূসের পাশে ছাত্রদের অবস্থান

Dhaka political unrest: বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা নতুন মাত্রা লাভ করেছে। প্রাক্তন শাসক দল আওয়ামি লিগের বিচার ও দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে রাজধানী…

Bangladesh Student Protest Demands Ban on Awami League

Dhaka political unrest: বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা নতুন মাত্রা লাভ করেছে। প্রাক্তন শাসক দল আওয়ামি লিগের বিচার ও দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে রাজধানী ঢাকায় ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে শিক্ষার্থীদের এক বিক্ষোভ কর্মসূচি দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত দশটা থেকে জাতীয় সরকার গঠনের প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত প্রধান উপদেষ্টা ড. মহম্মদ ইউনুসের বাসভবন যমুনার সামনে এই অবস্থান শুরু হয় এবং এখনও তা অব্যাহত রয়েছে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়েছে।

এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা আওয়ামি লিগের বিরুদ্ধে একাধিক স্লোগান দেন। ‘ওয়ান টু থ্রি ফোর, আওয়ামি লিগ নো মোর’, ‘খুনি লিগের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না’, ‘আওয়ামি লিগ নিষিদ্ধ করতে হবে, ক্ষমতা না জনতা, জনতা জনতা’— এমন স্লোগান যেন উপস্থিত শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ ও প্রতিবাদের ভাষা হয়ে উঠেছে।

   

এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন ছাত্র ও সামাজিক সংগঠন। উল্লেখযোগ্যভাবে উপস্থিত ছিল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জুলাই ঐক্য শিবির, আপ বাংলাদেশ, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, ইনকিলাব মঞ্চ, ছাত্রপক্ষ এবং কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। অংশগ্রহণকারীদের তালিকায় ছিল এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, আপ বাংলাদেশের আলি আহসান জুনায়েদ, রাফে সালমান রিফাত, শিবিরের দপ্তর সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ, ইনকিলাব মঞ্চের শরিফ ওসমান হাদি এবং অন্যান্য কওমি শিক্ষার্থীরা।

এই অবস্থান কর্মসূচিতে নেতৃত্বদানকারী অন্যতম সংগঠন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারি, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক তাসনিম জারা, যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন, নুসরাত তাবাসসুম, তাজনুভা জাবিন, ও সারোয়ার তুষার— সকলে একযোগে আওয়ামি লিগকে নিষিদ্ধ করার জন্য একটি ‘সুস্পষ্ট রোডম্যাপ’ ঘোষণার দাবি জানান।

অন্যদিকে, সরকারের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত এই বিক্ষোভের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র‍্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছেন এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

এই ঘটনাকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দেশের নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক চেতনার প্রকাশ বলে মনে করছেন। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বহু আন্দোলন হয়েছে, কিন্তু শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সরাসরি কোনো শাসক দলের নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবিতে এমন জোরালো অবস্থান কর্মসূচি বিরল।

আন্দোলনকারীরা দাবি করছেন, আওয়ামি লিগ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে গণতন্ত্রকে অবরুদ্ধ করেছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, বিরোধী মত দমন করেছে এবং নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে। এইসব অপরাধের জন্য তাদের বিচার হওয়া জরুরি। সেইসঙ্গে ভবিষ্যতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যাতে এমন কোন দল আর সেই সুযোগ না নিতে পারে, সেজন্য দলটিকে নিষিদ্ধ করা একান্ত প্রয়োজন।

এই আন্দোলন কতদূর এগোবে এবং কতটা প্রভাব ফেলবে— তা ভবিষ্যতের বিষয়। তবে এটি স্পষ্ট, বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতি ও নাগরিক আন্দোলন এক নতুন দিগন্তে প্রবেশ করছে। নতুন প্রজন্মের কণ্ঠস্বর এখন আরও সংগঠিত ও সরব। এটাই বর্তমান সময়ের গুরুত্বপূর্ণ বার্তা।

Advertisements