Bangladesh 50: পাক বিমানের অপহরণকারী চাইল বাংলাদেশের জন্য ওষুধ, কমান্ডোরা হতবাক

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: ডিসেম্বরের সকাল। শীতের প্যরিস শহর। জনচঞ্চল ফ্রান্সের রাজধানীতে ঘটে গেল রোমহর্ষক ঘটনা। প্যারিস বিমানবন্দর থেকে এসেছে বিপদবার্তা। ফরাসি কমান্ডোদের তৈরি হতে বলা হল।…

Jean Kay

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: ডিসেম্বরের সকাল। শীতের প্যরিস শহর। জনচঞ্চল ফ্রান্সের রাজধানীতে ঘটে গেল রোমহর্ষক ঘটনা। প্যারিস বিমানবন্দর থেকে এসেছে বিপদবার্তা। ফরাসি কমান্ডোদের তৈরি হতে বলা হল। নির্দেশ এসেছে উদ্ধার করতে হবে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স (পি আই এ) যাত্রীদের। তাঁরা পণবন্দি হয়েছেন। ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর সকালটা এমনই ছিল ফ্রান্সে।

প্যারিস থেকে করাচি। তখন চলছে ফোনাফুনি। অপহরণকারীর কবল থেকে যাত্রীদের বাঁচাতে পাকিস্তান সরকার চাইল সাহায্য। ফরাসি কমান্ডোরা প্যারিসের অর্লি বিমান বন্দরে দাঁড়িয়ে থাকা বিমান ঘিরতে শুরু করলেন।

বিমানের ভিতর আরও এক কান্ড। যাত্রীরা দেখছেন এক যুবক চিৎকার করে বলছে বিমান হাইজ্যাক। বেগড়বাঁই করলে বিস্ফোরণ ঘটানো হবে। ফ্রান্স সরকারের কাছে কিছু বলতে চায় সে। পি আই এ ৭২০ বোয়িং পাইলটের গলার কাছে শক্ত করে অস্ত্র। অপহরণকারীর নির্দেশে পাইলট বার্তা পাঠালেন।

Jean Kay

অপহরণকারীর নাম জ্যঁ ক্যুয়ে। সে চায় পূর্ব পাকিস্তানের মাটিতে লড়াই করা বাঙালি মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতে শরণার্থীদের জন্য ওষুধ। চমকে গেল ফ্রান্স সরকার। ততক্ষণে ফরাসি সংবাদ মাধ্যমে বিমান অপহরণের সরাসরি সম্প্রচার শুরু হয়েছে। গোটা বিশ্ব দেখছে সেই ছবি। জ্যঁ ক্যুয়ের বার্তা ছড়াতে শুরু করল।

পডুন : Bangladesh 50: ভয়ঙ্কর লালডেঙ্গার মিজো বিদ্রোহীদের টুকরো করেছিল ‘তিব্বতি ভূত’ বাহিনী

ফ্রান্স সরকার ও জ্যঁ ক্যুয়ের মধ্যে প্রায় ৫ ঘণ্টা চলল সেই টানাপোড়েন। জ্যঁ ক্যুয়ের দাবি করে, এই বিমানেই সব ওষুধ পাঠাতে হবে। তার ব্যক্তিগত কোনও চাহিদা নেই। অবশেষে ফ্রান্সের সরকার রাজি হয় সব শর্তে।

কথাবার্তায় চালানোর ফাঁকে ফরাসি কমান্ডোরা ঘিরতে শুরু করছিলেন পি আই এ বিমানটি। সংকেত আসতেই আক্রমণ শুরু হয়। ওষুধ পাঠানোর জন্য রেডক্রস কর্মীদের সঙ্গে ছদ্মবেশে দুই ফরাসি পুলিশ কমান্ডো ঢুকে পড়েন বিমানের ভিতর। অপহরণকারীকে বাগে আনতে বেশি বেগ পেতে হয়নি। তাকে কাবু করতে গিয়ে হতবাক কমান্ডোরা! তল্লাশিতে কোনও বোমা বা অস্ত্র মেলেনি। ছিল একটি বাইবেল আর বৈদ্যুতিক তার, একটি ইলেকট্রিক শেভার।

টানা ৫ ঘণ্টার সেই রুদ্ধশ্বাস বিমান অপহরণ ঘটনার জেরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পরিস্থিতি বিশ্বজুডে আরও আলোড়ন ফেলে দেয়। বিমান অপহরণ করার চেষ্টা অভিযোগে জ্যঁ কুয়ে হন বন্দি। তাঁকে ৫ বছরের কারাদণ্ডের সাজা দেওয়া হয়।

এই ঘটনার পর ফ্রান্সের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মাইক পম্পেদু সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করবার। সেই ভুয়ো অপহরণকারী জ্যঁ কুয়েরের ইচ্ছেকে মর্যাদা দিয়ে ফরাসি সরকার ভারতে থাকা ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানের শরণার্থীদের জন্য ২০ টন ওষুধও চিকিৎসা সামগ্রী পাঠায়। রাষ্ট্রসংঘে ফ্রান্স সরকার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নেয়। পূর্ণ মেয়াদে জেল খেটে মুক্তি পান জ্যঁ ক্যুয়ে। তিনি একজন লেখক। ২০১২ সালে তিনি প্রয়াত হন।

জ্যঁ ক্যুয়ের যখন পাক যাত্রী বিমান অপহরণের হুমকি দিয়েছিলেন, তখন পাকিস্তান ছিল বিমান হামলায় মত্ত। ৩ ডিসেম্বর পাক বিমান বাহিনী সরাসরি আকাশ সীমা লঙ্ঘন করে ভারতে ঢুকে পরপর বোমা হামলা শুরু করে। কলকাতায় ছিলেন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। অনুষ্ঠানসূচি বাতিল করে দ্রুত দিল্লি ফিরে যান তিনি। সেই রাতে ভারত সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল।