Bangladesh: ভিক্ষে করে গহের আলি গড়েছেন বজ্রপাত রোধক তাল সাম্রাজ্য!

এক তাল দু তাল তিন তাল ….গোনা কঠিন। তাল সারি চলে গেছে দূর দিগন্তে মিশে যাওয়া পথের প্রান্তে কোনও এক সুদূর গাঁয়। ‘যেথা সন্ধ্যাদীপ ভালে…

এক তাল দু তাল তিন তাল ….গোনা কঠিন। তাল সারি চলে গেছে দূর দিগন্তে মিশে যাওয়া পথের প্রান্তে কোনও এক সুদূর গাঁয়। ‘যেথা সন্ধ্যাদীপ ভালে তারার টিপ’। এই তাল সারি বজ্রপাতের প্রাকৃতিক বর্ম। আবার তাল প্রজাতি বাঁচিয়ে রাখারও চেষ্টা। এই চেষ্টা যিনি করেছেন তিনি কোনও উদ্ভিদ বিজ্ঞানী নন এক গেঁয়ো ভিক্ষুক। বাংলাদেশি গহের আলির অবদান প্রকৃতি বিজ্ঞান গবেষণার এক চমক। বাংলাদেশ (Bangladesh) সরকার তাঁকে দিয়েছে বিশেষ সম্মান। লিখলেন সৌমিতা পাল।

রাজশাহী মহাসড়ক ধরে যত এগিয়ে যাবেন নওগা জেলার শিবপুর গ্রামে দেখতে পাবেন রাস্তার দুপাশে উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সারি তাল গাছ। তাল গাছের সারি দেখে বুঝে যাবেন এসে পড়েছেন গহের আলির তাল সাম্রাজ্যে। ১০৬ বছরের গহের আলি শীর্ণকায়।সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেনা, কুঁজো হয়ে হাঁটতে হয়‌। বয়সের ভারে জীর্ণ এই মানুষ অনন্য নজির সৃষ্টি করেছেন।

গহের আলি সরকারি জমিতে ১২ হাজার তাল গাছ লাগিয়েছেন। উদ্দেশ্য পথচারীদের রোদের খর তাপ থেকে বাঁচানো। কাঠের গাছ লাগানোর ইচ্ছা ছিল গহের আলির। চারা কেনার সামর্থ্য তার নেই। নিজেই চলেন ভিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে। তাই ভিক্ষার পাশাপাশি লোকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তালের আঁটি চেয়ে নিয়ে আসতেন তিনি। সেগুলিই রাস্তার ধারে পুঁতে রাখেন। আসতে আসতে গাছ বড় হয়‌ । আশেপাশের গ্রামগুলিতেও গহের আলির তাল সাম্রাজ্য ছড়িয়ে পড়ে। সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থ ভাবে গহের আলি তাল গাছ লাগাচ্ছেন।

একসময় দিনমজুরি করতেন‌, এখন বয়স হওয়ায় ভিক্ষাবৃত্তি তার সম্বল‌। তার তাল গাছ লাগানো এলাকায় অনেক পরিবর্তন এনে দিয়েছে। তাল গাছের ফল, তালের শাঁস এলাকাবাসীরাই খান। তারাও গহের আলির গর্বে গর্বিত। এখন গহের আলির সময় কাটে বসত বাড়ির বারান্দায় বসে। কখনো ছোটো তাল গাছ পরিচর্যায় নিজেই নেমে পড়েন‌। কুড়ি বছর আগে যে স্বপ্ন নিয়ে গহের আলি তাল গাছ লাগিয়েছিলেন, এখন তার স্বপ্ন অনেকটাই পূর্ণ। গহের আলি বলেছেন, ” আমি বেঁচে থাকব না, তালগাছ বেঁচে থাকবে।”

পথচারীরা তালগাছের ছায়া পান আর গ্রামবাসী পায় ফল। গহের আলির তাতেই সুখ। একদিন অন্যকে ছায়া দেওয়ার জন্য যে তাল গাছ লাগিয়েছিলেন এখন জীবনের শেষে এসে তালগাছের নীচে নিজেই বসে থাকেন। গাছের ছায়ায় বসে অদ্ভুত আত্মতৃপ্তিতে ভরে ওঠে তার বুক।