ঢাকা: বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গন থেকে উদ্বেগজনক খবর সামনে উঠে এসেছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে দেশে বিভিন্ন ধর্মীয় ও সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ওপর হামলার অভিযোগের পাশাপাশি এবার বাউল গানের শিল্পীদের ওপরও হামলা ও হয়রানির ঘটনা সামনে আসছে।
অভিযোগ, কিছু উগ্রবাদী গোষ্ঠী বাউল সংগীতকে “ধর্মবিরোধী” বলে আখ্যা দিয়ে শিল্পীদের ওপর প্রকাশ্যে হামলা চালাচ্ছে। আরও উদ্বেগের বিষয় আতঙ্কিত শিল্পীদের রক্ষা করার বদলে তাঁদেরই আটক করা হচ্ছে, এমন অভিযোগ তুলেছেন মানবাধিকারকর্মী ও সাংস্কৃতিক জগতের মানুষজন।
“মামাবাড়ির” নয়া সিদ্ধান্তে ভয়ে কাঁপছে অনুপ্রবেশকারীরা
গত এক সপ্তাহে বিভিন্ন জেলায় বাউল শিল্পী ও তাঁদের অনুষ্ঠানস্থলে হামলার খবর পাওয়া গেছে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিওতে দেখা গেছে, কিছু গোষ্ঠী বাউল শিল্পীদের ঘিরে ধরে তাঁদের গান বন্ধ করানোর পাশাপাশি হুমকি ও আক্রমণের চেষ্টা করছে। বেশ কিছু জায়গায় পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলেও শিল্পীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়নি — এমন দাবি করেছেন সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
বাংলাদেশের বাউল গান শুধু সংগীত নয় এটি দেশের লৌকিক সংস্কৃতি, মানবতাবাদ ও ভক্তিবাদের গভীর ঐতিহ্য। লালন শাহ, হাসন রাজা ও আরও বহু সাধকের দর্শন থেকে উদ্ভুত এই ধারাকে UNESCO ও বিশ্ব সংস্কৃতির অংশ হিসেবেও স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এজন্য সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলি বলছে “বাউল শিল্পীদের হামলার লক্ষ্যবস্তু করা মানে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আত্মা ও বৈশ্বিক ঐতিহ্যের ওপর আঘাত।”
জাতীয় শিল্পকলা একাডেমি, বাউল সংগঠন, নাট্যদল, সংগীতশিল্পীদের সংগঠনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। তাঁরা বলছেন শিল্পীদের রক্ষা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। তারা আরও বলেছেন মতপ্রকাশ ও গানের স্বাধীনতায় আঘাত সংবিধানবিরোধী উগ্রতা ও সহিংসতা কখনোই সংস্কৃতি দমন করার বৈধ মাধ্যম হতে পারে না।
সবচেয়ে বিতর্কিত অভিযোগ এসেছে এখানে। কয়েকজন বাউল শিল্পী দাবি করেছেন হামলার পর তাঁরা পুলিশের কাছে সাহায্য চাইলে উল্টে তাঁদেরই আটক করা হয়েছে বা অনুষ্ঠান বন্ধ করতে বাধ্য করা হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থার প্রশ্ন “শিল্পীদের অপরাধ কী? গান গাওয়া? নাকি আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ করা?”
দেশের মানবাধিকার কর্মী ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের বক্তব্য সংখ্যালঘু ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা উদ্বেগজনক। হামলার ঘটনার বিচার না হলে উগ্রতা আরও বাড়বে এবং সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা ক্ষতিগ্রস্ত হলে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বিপর্যস্ত হবে। কিছু আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, যদিও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি এখনও আসেনি।
এ মুহূর্তে বাংলাদেশে তিনটি দাবি জোরালোভাবে উঠছে বাউল শিল্পীদের ওপর হামলার নিরপেক্ষ তদন্ত। নিরপরাধ শিল্পীদের বিরুদ্ধে মামলা বা আটকাদেশ প্রত্যাহার এবং অসাম্প্রদায়িক সাংস্কৃতিক পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের দৃঢ় ভূমিকা দেশের সাংস্কৃতিক জগতের মানুষের ভাষায় “বাংলাদেশের পরিচয় শুধু ধর্ম নয়, শুধু রাজনীতি নয় এর সবচেয়ে বড় পরিচয় এর বহুমাত্রিক সংস্কৃতি।
এই সংস্কৃতির ওপর আঘাত মানে জাতির শিকড়ে আঘাত।” পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে, তা সময়ই বলবে। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট বাউলদের নিরাপত্তা প্রশ্ন আজ আর কেবল সাংস্কৃতিক ইস্যু নয়, মানবাধিকার ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের পরীক্ষাপত্রে পরিণত হয়েছে।
