লেগিংস আর ছোট হাতার জামা নিষিদ্ধ? উল্টো স্রোতে বাংলাদেশ!

বর্তমান বাংলাদেশে নারীর পোশাক নিয়ে বিতর্ক যেন থামছেই না। ধর্মের দোহাই দিয়ে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা চাপানো হচ্ছে মহিলাদের উপর। সর্বশেষ সংযোজন — বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের…

লেগিংস আর ছোট হাতার জামা নিষিদ্ধ? উল্টো স্রোতে বাংলাদেশ!

বর্তমান বাংলাদেশে নারীর পোশাক নিয়ে বিতর্ক যেন থামছেই না। ধর্মের দোহাই দিয়ে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা চাপানো হচ্ছে মহিলাদের উপর। সর্বশেষ সংযোজন — বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের একটি বিতর্কিত সার্কুলার। সেখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, অফিসে মহিলারা আর শর্ট স্লিভ বা হাঁটুর ওপর লেন্থের পোশাক পরতে পারবেন না। নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে লেগিংস পরার উপরেও। এমন নির্দেশিকাকে ঘিরেই দেশজুড়ে ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে, বিশেষ করে শহুরে, শিক্ষিত মহল এবং সচেতন নাগরিকদের মধ্যে।

এই নির্দেশনার খবর প্রকাশ্যে আসতেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে — বাংলাদেশ কি তালিবানি আদর্শে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে? কোথাও কি আফগানিস্তানের পথেই হাঁটছে এই দক্ষিণ এশীয় দেশটি? অনেকেই বলছেন, এটি শুধু পোশাকের বিধিনিষেধ নয়, বরং মহিলাদের উপর সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও কর্মক্ষেত্রের এক ধরনের নিয়ন্ত্রণ চাপানোর এক প্রবণতা। যা স্বাধীনতা এবং সমানাধিকারের বিপরীত।

   

পোশাকের ওপর নিষেধাজ্ঞা: আধুনিকতার মুখে চপেটাঘাত?

বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক দেশের কেন্দ্রীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান। সেখান থেকে এমন একটি সিদ্ধান্ত আসা নিঃসন্দেহে একটি গভীর বার্তা বহন করে। ব্যাঙ্কের সার্কুলারে বলা হয়েছে, কর্মরত নারীরা যেন ‘সামাজিক ও ধর্মীয় শালীনতা’ বজায় রেখে পোশাক পরিধান করেন। অথচ এমন ‘শালীনতার’ সংজ্ঞা কে নির্ধারণ করছে? ধর্মীয় গোঁড়ামি না কি পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা?

বলা বাহুল্য, কর্মক্ষেত্রে পেশাদারিত্ব এবং দক্ষতা নির্ধারিত হয় কর্মীর কাজের মান ও আচরণে, পোশাকে নয়। বিশ্বজুড়ে বহু দেশে কর্মরত নারীরা আধুনিক পোশাকে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কাজ করছেন। অথচ বাংলাদেশে আজও নারীর শরীরকে কেন্দ্র করেই সমস্ত নীতি নির্ধারিত হচ্ছে।

‘তালিবানিস্তান’ তকমা কতটা যুক্তিসঙ্গত?

Advertisements

আফগানিস্তানে তালিবান ক্ষমতায় আসার পর নারীদের শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও স্বাধীন চলাফেরার অধিকারের উপর যে নিষ্ঠুর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, তা আন্তর্জাতিক মহলের নিন্দার কারণ হয়েছে। বাংলাদেশ এখনই সেই অবস্থানে পৌঁছয়নি ঠিকই, তবে গত কয়েক বছরে যেভাবে নারীর পোশাক, শিক্ষা, চলাফেরা নিয়ে একের পর এক ‘ফতোয়া’ জারি হচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অনেকে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ চেতনা থেকে সরে গিয়ে যখন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো ধর্মের নিরিখে নীতি নির্ধারণে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, তখনই ‘তালিবানাইজেশন’-এর আশঙ্কা জোরালো হয়। বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের এই সিদ্ধান্ত সেই দিকেই এক বড় পদক্ষেপ বলে মনে করছেন অনেকেই।

সামাজিক প্রতিক্রিয়া

সামাজিক মাধ্যমে ইতিমধ্যেই এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বহু নারী অধিকারকর্মী, সাংবাদিক ও শিক্ষাবিদ এই সার্কুলারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। কেউ লিখেছেন, “পোশাক দিয়ে শালীনতা মাপা যায় না”, আবার কেউ বলছেন, “ব্যাঙ্ক কি নৈতিক পুলিশের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে?”

তরুণ সমাজ, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীরাও এই ধরনের নির্দেশিকাকে প্রত্যাখ্যান করছে। তাঁদের মতে, এটি কেবল একটি সার্কুলার নয়, বরং স্বাধীন মত প্রকাশ ও পছন্দের অধিকারের উপর সরাসরি হস্তক্ষেপ।