দেশের সংকট মোকাবিলায় সেনাবাহিনীর ‘হস্তক্ষেপে’র আহ্বান আওয়ামী লীগের

awami-league-message-armed-forces-day-bangladesh-2025

বাংলাদেশের (Bangladesh) সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। দলের কেন্দ্রীয় বিবৃতিতে স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে দেশের বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতি—সবকিছুর প্রেক্ষাপটে সশস্ত্র বাহিনীর ঐতিহাসিক ভূমিকা ও ভবিষ্যৎ দায়িত্বের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

Advertisements

আওয়ামী লীগের বিবৃতিতে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ২১ নভেম্বর ১৯৭১ একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন—যেদিন মুক্তিবাহিনী ও তৎকালীন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা একযোগে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযান চালিয়েছিলেন। দলের ভাষ্যমতে, এই সমন্বিত আঘাত পাকিস্তানি বাহিনীর শক্তি ভেঙে দেয়, যা শেষ পর্যন্ত ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়ে পৌঁছায়।

   

বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্ব, তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, এবং স্বাধীনতার পর আধুনিক সশস্ত্র বাহিনী গঠনে তাঁর উদ্যোগও বিশেষভাবে স্মরণ করা হয়।

আওয়ামী লীগের মতে, আধুনিক বাহিনী গঠনে শেখ হাসিনার ভূমিকা

বিবৃতিতে তুলে ধরা হয়েছে যে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীকে প্রযুক্তিনির্ভর, আধুনিক ও কৌশলগতভাবে আরও শক্তিশালী করার পরিকল্পনা নেন। এতে সামরিক সরঞ্জাম, প্রশিক্ষণ, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা অভিযানে অংশগ্রহণের সক্ষমতা বাড়ে।

আওয়ামী লীগের ভাষ্য—

“জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান দেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক মঞ্চে উজ্জ্বল করেছে।”

বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি—বিবৃতির সবচেয়ে আলোচিত অংশ

বিবৃতিতে দেশের “বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতি” নিয়ে কড়া ভাষায় মন্তব্য করা হয়েছে। দলটি অভিযোগ করেছে যে—

  • বর্তমানে বাংলাদেশ একটি “অবৈধ, অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক শাসনের” অধীনে

  • জনগণের জীবন ও সম্পত্তি সুরক্ষিত নয়

  • প্রতিদিন লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও সহিংসতা ঘটছে

  • রাষ্ট্রযন্ত্র “সন্ত্রাসী কায়দায়” ব্যবহৃত হচ্ছে

এই অংশটি রাজনৈতিক মহলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।

দলের দাবি—

Advertisements

“জনগণের নিরাপত্তা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সশস্ত্র বাহিনী জাতির শেষ ভরসা।”

এই বক্তব্যকে কেউ কেউ রাজনৈতিক আবহে সেনাবাহিনীর প্রতি প্রত্যক্ষ আহ্বান হিসেবে দেখছেন, যদিও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এটি জাতীয় স্বার্থে “দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি আস্থা” হিসেবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।

সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি দলের প্রত্যাশা

বিবৃতিতে বলা হয়—

  • সশস্ত্র বাহিনী মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অনুপ্রাণিত থাকবে

  • পেশাদারিত্ব, শৃঙ্খলা ও জনগণের সেবার আদর্শ বজায় রাখবে

  • দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো ও আইনের শাসন রক্ষা করবে

  • সংকটময় সময়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা রাখবে

মুক্তিযুদ্ধ ও ইতিহাসের স্মরণ

বিবৃতির একটি বড় অংশ উৎসর্গ করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও সশস্ত্র বাহিনীর বীরত্ব স্মরণে।

দলটি শহীদ সেনা সদস্যদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেছে—যুদ্ধকালীন তাদের ত্যাগই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ভিত্তি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতামত (নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে)

নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকদের মতে—

  • বিবৃতিটি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করছে

  • সামরিক বাহিনীর প্রতি আস্থা প্রকাশ একদিকে স্বাভাবিক হলেও, অন্যদিকে তা রাজনৈতিক চাপের ইঙ্গিতও হতে পারে

  • দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই বার্তা সমানভাবে গুরুত্ব পাবে

সশস্ত্র বাহিনী দিবসের তাৎপর্য

২১ নভেম্বর বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরেই সামরিক বাহিনীর আত্মত্যাগ, বীরত্ব ও অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে উদযাপিত হয়। রাষ্ট্রও দিনটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে মহিমান্বিত করে। তবে এবারের বিবৃতিতে স্পষ্টভাবে রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রতি ইঙ্গিত থাকায় এটি বিশেষভাবে আলোচনায় এসেছে।

আওয়ামী লীগের বিবৃতি শুধু আনুষ্ঠানিক শুভেচ্ছা নয়, বরং রাজনৈতিক সংকট, ইতিহাস, সামরিক শক্তি ও ভবিষ্যৎ জাতীয় স্থিতিশীলতার প্রশ্নের এক সমন্বিত বার্তা। দেশের সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা, ঐতিহাসিক দায়িত্ব ও বর্তমান বাস্তবতার সাথে এই বার্তার সম্পর্ক আগামী দিনে আরও আলোচনার জন্ম দেবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।