ধংস হয়ে গেছে পাকিস্তান কেটে বাংলাদেশ (Bangladesh) তৈরির অন্যতম ঐতিহাসিক নিদর্শন ‘ধানমন্ডির ৩২ নম্বর’ সড়কের বিশ্ববিখ্যাত বাড়ি। এই বাড়ি বাংলাদেশের ‘জাতির পিতা’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। এটি ছিল রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি। বাড়িটি ‘স্বৈরাচারের গর্ভগৃহ’ বলে চিহ্নিত করে হাজার হাজার জনতা বুলডোজার এনে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে।
গত বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) থেকে চলে হামলা। শুক্রবার পুরোপুরি ধংস। উল্লসিত জনতা বাড়ি ভেঙে একটি গরু জবাই করেন। শুরু হয় গণভোজ। ‘এটি উৎসবের মুহূর্ত। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ও শেখ পরিবারের স্বৈরশাসনের কোনো চিহ্ন থাকবে না’ এমন বলছেন হামলাকারীরা।
হামলাকারী বলেন শেখ মুজিবের নেতৃত্বেই পাকিস্তান কেটে সশস্ত্র সংগ্রাম করে বাংলাদেশ তৈরি হয়েছিল। তবে বাংলাদেশের ক্ষমতা নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গণতন্ত্রকে কবর দিয়েছিলেন। তিনি বাংলাদেশে প্রথম স্বৈরাচারী শাসক। হামলাকারীদের অ়ভিযোগ, শেখ মুজিবের কন্যা শেখ হাসিনা টানা তিন দফায় সরকার চালিয়ে তার পিতার থেকেও আরো বড় স্বৈরাচারী শাসক ছিলেন। হাসিনাকে শিক্ষা দিতেই ‘ধানমন্ডির ৩২’ বাড়িটি ভাঙা হয়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, গতবছর (২০২৪) সালের ৫ আগস্ট রক্তাক্ত গণবিদ্রোহের ধাক্কায় টানা ১৬ বছরের ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। বাংলাদেশে পালাবদলের সেই দিনেও ঢাকার ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িটি পোড়ানো হয়েছিল। ঐতিহাসিক বাড়িটিতে থাকা কোনো স্মারকই অবশিষ্ট ছিল না। সেই বাড়ি এখন ধুলিসাৎ। বাংলাদেশ জুড়ে থাকা শেখ পরিবারের আত্মীয়দের বাড়িগুলো ধংস করা হয়েছে।
সামাজিক মাধ্যমে দেখা গেছে বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে হাজার হাজার জনতা ঢাকার ধানমন্ডিতে শেখ মুজিবুরের বাড়ি ধংস করার মাঝে গরু জবাই করেন। সেখানেই গরুর মাংস রান্না করা হয়। বিরাট বিরাট হাঁড়িতে রান্না হয় খিচুড়ি। শুরু হয় গণভোজ। উল্লসিত জনতা খেতে খেতে বলেছেন গণহত্যাকারী শেখ হাসিনার যেদিন ফাঁসি হবে সেদিনও হবে গরু মাংসের ভুরিভোজ।
বাংলাদেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের বাসস্থান ঢাকার ৩২ নম্বর ধানমন্ডির ঐতিহাসিক বাড়ি গুঁড়িয়ে উল্লসিত জনতার চিৎকার ‘ঈদ মোবারক’। আসন্ন ঈদ উৎসবের আগেই অকাল শুভেচ্ছা বিনিময় চলে।
‘জাতির পিতা’র বাসভবন ধংস করার প্রতিক্রিয়ায় ‘ভারতবাসী ‘শেখ হাসিনা বলেছেন, “ইতিহাস প্রতিশোধ নেয়, বঙ্গবন্ধু হৃদয়ে। দালান ভাঙলেও ইতিহাস মুছতে পারবে না।”
শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক বাসভবন ভাঙার দ ঘটনাকে ‘দুঃখজনক’ বলে আখ্যা দিয়েছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। বিদেশ মন্ত্রক মুখপাত্র রণধীর জওসওয়াল বলেছেনন, “শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক বাসভবন, যা বাংলাদেশের জনগণের বীরত্বপূর্ণ প্রতিরোধের প্রতীক, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ তারিখে ধ্বংস করা হয়েছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।” তিনি আরও বলেন, “বাংলা পরিচয়ের আত্মগৌরব যে স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছিল, তার গুরুত্ব সকলেই বোঝেন। বাংলাদেশের জাতীয় চেতনার এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক এই বাসভবন। এই ধ্বংসাত্মক কাজ কঠোরভাবে নিন্দনীয়।”
নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার জানিয়েছে, শেখ হাসিনার উসকানিমূলক মন্তব্যের জন্যই জনতা উত্তেজিত হয়েছে।
বাংলাদেশের বিদেশ উপদেষ্টা মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ভারতে অবস্থানরত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্মকাণ্ডকে উসকানিমূলক বলে মনে করাে নয়া দিল্লিকে প্রতিবাদ জানিয়েছে। ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনারের কাছে একটি প্রতিবাদলিপি হস্তান্তর করা হয়েছে। তৌহিদ হোসেন বলেন, শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বক্তব্য খুবই ‘আক্রমণাত্মক’, যা তরুণ প্রজন্মের অনুভূতিতে আঘাত করে থাকতে পারে। তিনি বলেন, ঢাকা ভারতকে অনুরোধ করে যাচ্ছে যাতে হাসিনা এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকেন। আমরা দেখব ভারত কী পদক্ষেপ নেয়।
১৯৭১ সালে পাকিস্তান কেটে বাংলাদেশের জন্মের রাজনৈতিক ঘটনার সঙ্গে জড়িত ঢাকার ৩২ নম্বর ধানমন্ডির এই বাড়ি। এই বাড়িতেই ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের অভ্যুত্থানকারী সেনা অফিসাররা গুলি করে সপরিবারে খুন করেন বাংলাদেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে। শেখ মুজিবুরকে খুন বিশ্বের অন্যতম রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। পাকিস্তান কেটে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের আহ্বান জানানোর পর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকেই শেখ মুজিবুরকে গ্রেফতার করেছিল তৎকালীন পাকিস্তান সরকার।