৭৮ বছর ধরে হিন্দু বন্ধুদের অপেক্ষায় বালোচিস্তান

Hindu Baloch friendship: ৭৮ বছর ধরে বালোচিস্তানের এক দোকানদার অপেক্ষা করে আছেন তার হিন্দু বন্ধুর জন্য—যিনি ১৯৪৭ সালের দেশভাগের সময় নিজের ঘরবাড়ি ছেড়ে ভারতে চলে…

Baloch Man Keeps Hindu Friend’s Shop Safe Since 1947, Awaits Reunion

Hindu Baloch friendship: ৭৮ বছর ধরে বালোচিস্তানের এক দোকানদার অপেক্ষা করে আছেন তার হিন্দু বন্ধুর জন্য—যিনি ১৯৪৭ সালের দেশভাগের সময় নিজের ঘরবাড়ি ছেড়ে ভারতে চলে গিয়েছিলেন। এমনই এক হৃদয়স্পর্শী গল্প শেয়ার করলেন স্বাধীন বালোচিস্তান আন্দোলনের মুখপাত্র মীর ইয়ার বালোচ।

এক্স (পূর্বতন টুইটার)-এ তিনি লেখেন, “১৯৪৭ সালে একজন হিন্দু বন্ধু দেশভাগের কারণে বালোচিস্তান ছেড়ে ভারতে চলে যান। যাওয়ার সময় তিনি তার দোকানের চাবি এক বালোচ বন্ধুর হাতে তুলে দেন। সেই বালোচ বন্ধুটি আজও সেই দোকান আগলে রেখেছেন, যত্নে সংরক্ষণ করেছেন। আজও তিনি অপেক্ষা করছেন তাঁর হিন্দু বন্ধুটি ফিরে আসবেন, আর তিনি নিজ হাতে তাঁর সেই দোকানের চাবি ফিরিয়ে দেবেন।”

   

এই আবেগঘন বার্তার সঙ্গে মীর ইয়ার বালোচ লেখেন, “আমরা আশা করি, খুব শিগগির ভারত ও বালোচিস্তানের মানুষ একে অপরের দেশে যেতে পারবেন। স্বাধীন বালোচিস্তানের পর পারস্পরিক সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান হবে, বন্ধুত্ব আরও দৃঢ় হবে।” এই টুইটে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং প্রধানমন্ত্রীর দফতরকেও ট্যাগ করেন, যা এই বার্তার কূটনৈতিক গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দেয়।

দেশভাগের ব্যথা, বন্ধুত্বের আশা
১৯৪৭ সালের দেশভাগ শুধু দুই রাষ্ট্রের সৃষ্টি করেনি, ছিন্ন করেছে লক্ষ লক্ষ মানুষের সম্পর্ক, স্মৃতি এবং শেকড়। কিন্তু মীর ইয়ার বালোচের এই টুইট প্রমাণ করে, সম্পর্কের সেই বন্ধন এখনও অনেক ক্ষেত্রে অটুট রয়েছে। এই গল্প শুধু এক বালোচ আর এক হিন্দু বন্ধুর নয়—এটি দক্ষিণ এশিয়ার বহু মানুষের ভাগ্য, স্মৃতি আর আবেগের প্রতিচ্ছবি।

কেন এই বার্তা গুরুত্বপূর্ণ?
মীর ইয়ার বালোচ স্বাধীন বালোচিস্তানের দাবিদার এবং এই অঞ্চলের পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলনের একজন পরিচিত মুখ। তাঁর এমন বার্তা নিছক আবেগ নয়, বরং এটি ভারতের প্রতি তাঁর রাজনৈতিক আস্থা ও কৌশলগত সমর্থনের প্রতীক।

ভারত সরকারের কাছে বার্তাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সংকেত হিসেবেও দেখা হচ্ছে, যেখানে বালোচ নেতৃত্ব সরাসরি দিল্লির সমর্থন প্রত্যাশা করছে।

ভারত-বালোচিস্তান সম্পর্ক: নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত
ভারত সরকার বরাবরই আন্তর্জাতিক মঞ্চে বালোচিস্তানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রশ্ন তুলেছে। এমনকি ২০১৬ সালে স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী মোদীও বালোচিস্তানের নাম উল্লেখ করেছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় মীর ইয়ার বালোচের এই বার্তা ভারতের জন্য এক নতুন কূটনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে।

সাংস্কৃতিক যোগাযোগের স্বপ্ন
মীর ইয়ার বালোচ তাঁর টুইটে ভবিষ্যতের একটি শান্তিপূর্ণ, কূটনৈতিক সম্পর্কের কথা বলেন, যেখানে ভারত ও বালোচিস্তান একে অপরের সংস্কৃতি, মানুষ ও ইতিহাসকে সম্মান জানিয়ে নতুন অধ্যায় শুরু করবে।

তিনি লেখেন, “আমরা আশা করি খুব শিগগির ভারত ও বালোচিস্তানের মানুষ একে অপরের দেশে সফর করবেন, পারস্পরিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।”

একটি চাবি, একটি দোকান, দুই বন্ধু আর সাত যুগের অপেক্ষা—এই গল্প যেন ইতিহাসের পাতা ছেড়ে এসে আজকের রাজনৈতিক বাস্তবতাকে আবেগের ছোঁয়ায় স্পর্শ করল। মীর ইয়ার বালোচের বার্তা শুধু অতীতের স্মৃতিই নয়, ভবিষ্যতের এক নতুন সম্পর্কের পথও দেখাল।