পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে (Balochistan) বড়সড় দখলদারির দাবি করল বালোচ লিবারেশন আর্মি (BLA)। সংগঠনটি দাবি করেছে, তারা কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ সুরাব শহরের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। শহরটি বেলুচিস্তানের কোয়েটা-কড়াচি মহাসড়কের পাশে অবস্থিত এবং প্রায় ৪০,০০০ জনসংখ্যা বিশিষ্ট।
দখলে পুলিশ স্টেশন, ব্যাংক, সরকারি দফতর
BLA-এর তরফে জানানো হয়েছে, তারা সুরাব শহরের সমস্ত পুলিশ ও লেভিস স্টেশন, বড় সরকারি ভবন, এমনকি বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকও দখলে নিয়েছে। শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগুন ও কালো ধোঁয়ার ছবি ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। একাধিক থানা, প্রশাসনিক ভবনে আগুন লাগিয়ে দেয় বলে দাবি করেছে সংগঠনটি।
পাকিস্তানি সেনা ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, নিহত SHO
প্রচণ্ড সংঘর্ষের পর পাকিস্তানি বাহিনীকে পিছু হটতে বাধ্য করা হয়েছে বলে জানিয়েছে BLA। সংঘর্ষে এক স্টেশন হাউস অফিসার (SHO)-কে হত্যা করা হয়েছে এবং একাধিক পুলিশ সদস্যের অস্ত্রও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
মহাসড়ক নিয়ন্ত্রণে, বসেছে চেকপোস্ট ও টহলদারি
দখলের পরে, BLA মুখপাত্র জয়ন্দ বালোচ জানিয়েছেন, সুরাব শহরের মূল সরকারি স্থাপনাগুলো এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে। এছাড়া কোয়েটা-কড়াচি এবং সুরাব-গাড্ডার রোডের উপর চেকপোস্ট বসানো হয়েছে এবং নিয়মিত টহলদারি চালানো হচ্ছে, যাতে পাকিস্তানি বাহিনী ফের ঢুকতে না পারে।
সমন্বিত হামলা ও জিম্মি অবস্থা
শুক্রবার সন্ধ্যায় বড়সড় অস্ত্রধারী গোষ্ঠী একযোগে একাধিক সরকারি দফতরে আক্রমণ চালায়। স্থানীয় সূত্র অনুযায়ী, এই হামলায় বেশ কয়েকজন সরকারি কর্মচারীকে জিম্মি করা হয়েছে এবং বহু সরকারি গাড়িতে আগুন লাগানো হয়েছে। পাকিস্তান সরকার এখনো পর্যন্ত এই ঘটনায় কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
পটভূমি: বেলুচিস্তানের দীর্ঘকালীন বিদ্রোহ
বেলুচিস্তান পাকিস্তানের বৃহত্তম প্রদেশ হলেও বছরের পর বছর ধরে বঞ্চনা ও নিপীড়নের অভিযোগ জানিয়ে এসেছে বালোচ জনগণ। ১৯৪৮ সালে জোরপূর্বক দখলের অভিযোগ তুলে ইতিপূর্বে পাঁচবার বড়সড় বিদ্রোহ হয়েছে। বর্তমানে চলা বিদ্রোহটি সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ও সহিংস।
BLA কে নিয়ে আশঙ্কা
পাকিস্তান সরকার BLA-কে একটি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসাবে চিহ্নিত করেছে। তবে সংগঠনটি নিজেকে স্বাধীনতার লড়াইয়ে যুক্ত বলে দাবি করে। চীনের সাথে গড়ে ওঠা CPEC প্রকল্প এবং পাকিস্তানি সামরিক ঘাঁটিতেও অতীতে বহু হামলা চালিয়েছে এই গোষ্ঠী।
পাকিস্তানের অখণ্ডতা নিয়ে প্রশ্ন
বিশ্লেষকদের মতে, সুরাব শহর দখলের ঘটনা পাকিস্তানের অখণ্ডতার ওপর বড়সড় আঘাত। বেলুচিস্তানের পাশাপাশি সিন্ধ, খাইবার পাখতুনখাওয়া এবং পাক-অধিকৃত কাশ্মীরেও বিদ্রোহের সম্ভাবনা বেড়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে, দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা আরও ঘনীভূত হতে পারে।
এই ঘটনার পরে পাকিস্তানের সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের দিক থেকে কী প্রতিক্রিয়া আসে, সেদিকে এখন আন্তর্জাতিক মহল ও সংবাদমাধ্যমের কড়া নজর। পাকিস্তান কি পারবে এই সংকট সামাল দিতে, নাকি সত্যিই শুরু হল দেশের অখণ্ডতা ভাঙনের দিকেই যাত্রা—তা সময়ই বলবে।