ফের মার্কিন মুলুকে পাক সেনাপ্রধান মুনির, কূটনৈতিক বার্তা দিয়ে দুই মাসে দ্বিতীয় সফর

ওয়াশিংটন: পাক-আমেরিকা কূটনৈতিক ইতিহাসে নতুন অধ্যায়। মাত্র দু’মাসের ব্যবধানে ফের মার্কিন মুলুকে পা রাখতে চলেছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির (Asim Munir to visit…

Asim Munir to visit US again

ওয়াশিংটন: পাক-আমেরিকা কূটনৈতিক ইতিহাসে নতুন অধ্যায়। মাত্র দু’মাসের ব্যবধানে ফের মার্কিন মুলুকে পা রাখতে চলেছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির (Asim Munir to visit US again)। ওয়াশিংটনের সামরিক ও কৌশলগত পরিসরে তাঁর এই উপস্থিতি, দুই দেশের ঘনিষ্ঠতার ইঙ্গিত দিচ্ছে বারবার।

এই সফরে মুনির অংশ নেবেন সেন্ট্রাল কমান্ড (CENTCOM)-এর বিদায়ী কমান্ডার জেনারেল মাইকেল কুরিলার আনুষ্ঠানিক বিদায় সভায়। মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার মার্কিন কৌশলগত দায়িত্বে থাকা কুরিলা, পাকিস্তানকে সম্প্রতি বর্ণনা করেছিলেন “সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ের এক অসামান্য অংশীদার” হিসেবে। তাঁর সেই মন্তব্য যে ভারতের কূটনৈতিক বৃত্তে অস্বস্তি তৈরি করেছিল, তা আর আলাদা করে বলার প্রয়োজন পড়ে না।

   

পুরনো সমীকরণে ফিরছে ওয়াশিংটন?

এই সেই সময়, যখন দিল্লি জোরদার প্রচারে ব্যস্ত, বিশ্বসভায় পাকিস্তানের সন্ত্রাসমদতকারীর মুখোশ উন্মোচনে। তার মধ্যেই কুরিলার প্রশংসা, “পাকিস্তান আমাদের অসাধারণ সঙ্গী”, এমনকি “ভারত-পাকিস্তান দু’জনের সঙ্গেই আমাদের সম্পর্ক থাকা উচিত”, এই মন্তব্যে আবারও যেন ফিরে এল সেই পুরনো হাইফেনেটেড (India-Pak) দৃষ্টিভঙ্গি, যা ভারতের কূটনীতি বহু আগেই ছুঁড়ে ফেলেছে।

জবাবে পাকিস্তানও যথেষ্ট রাজনৈতিক বুদ্ধিদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে, জুলাইয়ে ইসলামাবাদে কুরিলাকে দেওয়া হয়েছে ‘নিশান-এ-ইমতিয়াজ’, দেশের অন্যতম সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান।

হোয়াইট হাউসে সেনাপ্রধান, ছায়ায় নেই কোনও সরকার

সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা অবশ্য ঘটে জুন মাসে। হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে একান্ত মধ্যাহ্নভোজে মিলিত হন পাক সেনাপ্রধান আসিম মুনির। কোনও রাজনৈতিক প্রতিনিধি নয়, প্রশাসনিক মহল নয়, এই প্রথম, শুধুমাত্র একজন সেনাপ্রধানের সঙ্গে সরাসরি বৈঠকে বসলেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি। এবং তিনি প্রকাশ্যেই বললেন, “ওঁকে ডেকেছি কারণ আমি কৃতজ্ঞ—ওই সময় যুদ্ধ না করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছেন উনিই।”

Advertisements

নোবেল পুরস্কারের দৌঁড়ে ট্রাম্প? উদ্যোগ পাকিস্তানের

ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের পরে পাল্টা কূটনৈতিক সৌজন্যে মুনির বলেন, “এই উপমহাদেশকে যুদ্ধ থেকে রক্ষা করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, তাঁর নাম নোবেল শান্তি পুরস্কারে থাকাই উচিত।” পাকিস্তান সরকার কয়েক দিনের মধ্যেই সেই মনোনয়নপত্র পাঠিয়ে দেয় নরওয়েতে।

অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বারবার দাবি করছেন, মে মাসে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে যুদ্ধ পরিস্থিতি তিনি নিজেই রুখে দেন, পাকিস্তানকে বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েই। যদিও ভারত সাফ জানিয়েছে, কোনও তৃতীয় পক্ষ নয়, দুই দেশের মধ্যেই সরাসরি কূটনৈতিক যোগাযোগেই তৈরি হয়েছে যুদ্ধবিরতি।

নতুন সমীকরণে পুরনো সতর্কতা

টানা দুই মাসে সেনাপ্রধানের মার্কিন সফর, CENTCOM প্রধানের পাকিস্তানপ্রেম, হোয়াইট হাউসের ব্যতিক্রমী বৈঠক সব মিলিয়ে পাকিস্তান-আমেরিকা সামরিক সম্পর্কের ভিত যে দৃঢ় হচ্ছে, তা স্পষ্ট। একইসঙ্গে উদ্বেগও তৈরি হচ্ছে দিল্লিতে বিশেষত, যখন ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্য ক্রমে পূর্বাভিমুখী।

এ সফর নিছক বিদায়ী কমান্ডারের অনুষ্ঠান নয়, বরং, ভবিষ্যতের মার্কিন-পাক কৌশলগত সমীকরণের দিকনির্দেশ হয়ে উঠতে পারে বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

আমাদের Google News এ ফলো করুন

২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।

Google News Follow on Google News