ভুল কফিন হাতে পেল পরিবার, এয়ার ইন্ডিয়া দুর্ঘটনায় নয়া বিতর্ক

নয়াদিল্লি: ব্রিটেনে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবারগুলির দুঃখের মাঝে যেন নতুন করে নেমে এল বিভ্রান্তি। অন্তত দু’টি পরিবার তাঁদের প্রিয়জনের দেহ না পেয়ে পায়…

Air India Crash Body Mix-up

নয়াদিল্লি: ব্রিটেনে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবারগুলির দুঃখের মাঝে যেন নতুন করে নেমে এল বিভ্রান্তি। অন্তত দু’টি পরিবার তাঁদের প্রিয়জনের দেহ না পেয়ে পায় একটি অচেনা কফিন, আর এক পরিবারের হাতে পৌঁছয় এক কফিনে দু’জনের দেহাবশেষ!

ভুলচুক সামনে এসেছে

এই মর্মান্তিক ভুলচুক সামনে এসেছে লন্ডনের ইনার ওয়েস্টের কোরোনার ডঃ ফিয়োনা উইলকসের ডিএনএ পরীক্ষায়। ভারতের আহমেদাবাদ থেকে সিল করা কফিনে করে দেহ পাঠানো হয়েছিল, যা পরিবারের হাতে পৌঁছয়, কিন্তু পরবর্তীতে জানা যায়, ডিএনএ মিলছে না।

   

আইনি প্রতিনিধিত্ব করা কিস্টোন ল’-র এক আইনজীবী জানান, “এক পরিবার তো শেষকৃত্যের প্রস্তুতি নেওয়ার পর জানতে পারে, কফিনে যার দেহ রয়েছে, সে তাঁদের আত্মীয়ই নয়।” অপর এক পরিবারের ক্ষেত্রে এক কফিনে দু’জনের দেহাবশেষ মিশে গিয়ে ছিল, যাদের ডিএনএ আলাদা করে তবেই অন্ত্যেষ্টি সম্পন্ন করা হয়।

আহমেদাবাদে বিমান দুর্ঘটনায় Air India Crash Body Mix-up

প্রসঙ্গত, গত ১২ জুন আহমেদাবাদের কাছে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় লন্ডনগামী AI171 ফ্লাইট ভেঙে পড়ে। নিহত হন ২৬০ জন যাত্রী ও কর্মী, যার মধ্যে ৫৩ জন ছিলেন ব্রিটিশ নাগরিক।

দেহগুলি এতটাই ঝলসে গিয়েছিল যে, আহমেদাবাদ সিভিল হাসপাতাল ডিএনএ পরীক্ষা করে তবেই কফিন প্রস্তুত করেছিল বলে ভারতীয় সূত্র দাবি করেছে। দেহ হস্তান্তরের পুরো প্রক্রিয়ায় এয়ার ইন্ডিয়ার কোনও সক্রিয় ভূমিকা ছিল না বলে জানানো হয়েছে। তাঁদের তরফে শুধুমাত্র পরিবারগুলিকে সহায়তার জন্য Kenyons International Emergency Services নামক সংস্থাকে নিয়োগ করা হয়েছিল।

Advertisements

গাফিলতির দায় এড়ানো সম্ভব নয়

তবু এই গাফিলতির দায় এড়ানো সম্ভব নয় বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিমান আইন বিশেষজ্ঞ জেমস হিলি-প্র্যাট, যিনি ব্রিটিশ পরিবারগুলির পক্ষে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাঁর কথায়, “অনেক পরিবার এখনও জানেই না তাঁদের প্রিয়জনের দেহ কোথায়! ভুল কফিন এসেছে, কেউ দেহ পায়নি, এটা মেনে নেওয়া যায় না।”

এই ঘটনায় কেবল এক পরিবার নয়, যাঁরা ভুল দেহ পেয়েছেন বা দেহ পাননি, তাঁদের মানসিক যন্ত্রণার কোনও পরিমাপ নেই। আলতাফ তাজু, যিনি তাঁর বাবা-মা ও ভাইঝিকে হারিয়েছেন, Daily Mail-কে বলেন, “আমরা দেহ দেখার অনুমতিই পাইনি। শুধু আইডি নম্বর লেখা কাগজ দেওয়া হয়েছিল।”

এই ঘটনা আবারও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্ন তোলে: কীভাবে এত সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ দেহ শনাক্তকরণের প্রক্রিয়ায় এমন ভয়াবহ গাফিলতি হতে পারে? এখনও পর্যন্ত ভারত বা এয়ার ইন্ডিয়া, কেউই এই ভুলের জন্য সরাসরি দায় স্বীকার করেনি, যদিও তদন্ত চলছে বলে সূত্রের দাবি।

এখনো বহু প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। কে কার দেহ নিয়ে গেল? কফিনে কে রয়েছেন? আর যাঁদের দেহ মেলেনি, তাঁদের পরিবার কতটা অপেক্ষা করবে? উত্তর চাইছে পরিবার, উত্তর চাইছে বিবেক।