কাবুল: ভয়াবহ ভূমিকম্পে ফের কেঁপে উঠল আফগানিস্তান। বুধবার দুপুরে ৪.৩ মাত্রার এক ভূমিকম্প আঘাত হানে মধ্য আফগানিস্তানের পার্বত্য অঞ্চলে। ভারতের ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজি (NCS) জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির কেন্দ্রস্থল ছিল ৩৭.৩৩° উত্তর অক্ষাংশ এবং ৬৯.৯৩° পূর্ব দ্রাঘিমাংশে, মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরে যা এটিকে একটি ‘shallow earthquake’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
এই অগভীর গভীরতাই আতঙ্ক বাড়িয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। কারণ ভূ-বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এমন ধরনের ভূমিকম্পের কম গভীরতা মানে ভূমির ওপরে আরও জোরালো কম্পন এবং অধিক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা। স্থানীয় সূত্রে খবর, যদিও বড়সড় প্রাণহানির ঘটনা এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি, তবে বিভিন্ন প্রদেশে বাড়িঘর কেঁপে ওঠে এবং মানুষ ঘর ছেড়ে খোলা জায়গায় ছুটে যায়। আফগানিস্তানের পূর্ব ও উত্তরাঞ্চলে এই ভূমিকম্পের প্রভাব বেশি অনুভূত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দিয়েছেন, গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই আফগানিস্তানে একাধিক ছোট ও মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হচ্ছে। এর আগে ২৪ অক্টোবর, ভোরের দিকে ৩.৭ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প হয়েছিল, তখন সেটি ছিল ৮০ কিলোমিটার গভীরে। ভূমিকম্পের মাত্রা কম হলেও পরপর কম্পন আফগানিস্তানের অত্যন্ত ভূমিকম্প-প্রবণ ভূপ্রকৃতির কথা আবারও মনে করিয়ে দিয়েছে।
ভূ-বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান মিলে এক অত্যন্ত সংবেদনশীল ভূতাত্ত্বিক অঞ্চলে অবস্থিত — যেখানে ভারতীয় ও ইউরেশীয় প্লেটের সংঘর্ষ ঘটে। এই কারণেই প্রায়ই মাঝারি থেকে প্রবল ভূমিকম্প এই অঞ্চলে দেখা যায় এবং অনেক সময় সীমান্ত পেরিয়ে ভারতেও অনুভূত হয়।
ভূমিকম্পের পরই কাবুল ও আশপাশের এলাকায় দেখা দিয়েছে আতঙ্কের আবহ। এক স্থানীয় বাসিন্দা সংবাদমাধ্যমে বলেন, “প্রথমে মাটি দুলে উঠেছিল, তারপর দরজা-জানালা কাঁপতে শুরু করে। আমরা সবাই বাড়ির বাইরে ছুটে যাই। কয়েক সেকেন্ডের কম্পন মনে হচ্ছিল ঘন্টার মতো দীর্ঘ।” এই প্রেক্ষিতে ভারতের পক্ষ থেকে আবারও মানবিক সহানুভূতির বার্তা এসেছে। রাষ্ট্রসংঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি হরিশ পর্বথনেনি সম্প্রতি রাষ্ট্রসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে আফগানিস্তান নিয়ে আলোচনায় বলেন,
“আফগানিস্তানে ভারতের তাত্ক্ষণিক অগ্রাধিকার হলো মানবিক সহায়তা প্রদান এবং আফগান জনগণের জন্য সক্ষমতা বৃদ্ধির কর্মসূচি বাস্তবায়ন।” তিনি আরও যোগ করেন যে, ভারত UN Assistance Mission in Afghanistan (UNAMA)-এর প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে এবং আফগান জনগণের পাশে মানবিক সহায়তায় অংশীদার থাকবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আফগানিস্তানের পাহাড়ি ভূপ্রকৃতি ও দুর্বল অবকাঠামোর কারণে এমনকি মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পও ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে। স্থানীয় প্রশাসন ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি ইতিমধ্যেই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের এই ধাক্কায় যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের দুর্দশা আরও বাড়বে কিনা, সেই আশঙ্কায় গোটা অঞ্চল তাকিয়ে আছে কাবুলের দিকে।


