সোনারপুরে একটি বিধবা মহিলার কাছ থেকে টাকা দাবির অভিযোগ এবং শ্লীলতাহানির অভিযোগ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে রাজপুর সোনারপুর পুরসভার এক কাউন্সিলরের (Sonarpur Councillor) বিরুদ্ধে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই মহিলা পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগের ভিত্তিতে মহিলা জানিয়েছেন, কাউন্সিলর তাঁকে ৫০ হাজার টাকা দাবির চেষ্টা করেছেন। টাকা না দিলে কাউন্সিলর শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তাব দিয়েছেন। এই ঘটনার প্রেক্ষাপট আরও জটিল, কারণ মহিলার স্বামী জীবিত থাকাকালীন স্থানীয় বাজারে তিনি একটি দোকান পরিচালনা করতেন। স্বামীর মৃত্যুর পর মহিলা প্রথমে সবজি বিক্রি শুরু করেন। পরে জামা-কাপড়ের ব্যবসা শুরু করায় অভিযোগ অনুযায়ী, তখন থেকেই বিভিন্নভাবে তাঁকে চাপ দেওয়া শুরু হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই শ্লীলতাহানির মামলা রুজু করা হয়েছে এবং প্রাথমিক তদন্ত শুরু হয়েছে। সোনারপুর থানা পুলিশের বক্তব্য, “আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছি। তদন্ত অব্যাহত রয়েছে এবং অভিযোগকারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।”
অভিযোগ করা মহিলা জানিয়েছেন, “আমি প্রথমে ভয়ে কাউকে কিছু বলিনি। তবে পরে বুঝতে পারলাম, কাউন্সিলরের এ ধরনের আচরণ আমার জন্য এবং অন্যান্য মহিলাদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে। তাই পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছি।”
অন্যদিকে, অভিযোগপ্রাপ্ত কাউন্সিলর এই সব অভিযোগকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, “এই ধরনের কোনও ঘটনা ঘটেনি। আমাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ফাঁসানো হচ্ছে। আমি চাই, ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত হোক এবং সত্য প্রকাশ্যে আসুক। আমি মহিলাকে চিনি না, পরিচিতও নই।”
এই ঘটনার ফলে রাজনৈতিক চাপানউতোরও শুরু হয়েছে। বিজেপি নেতা সুনীপ দাস অভিযোগ করেছেন, কাউন্সিলর সোনারপুর দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়কের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। তিনি দাবি করেছেন, অবিলম্বে কাউন্সিলরকে গ্রেফতার করা উচিত।
সিপিএম নেতাও সমালোচনা করেছেন। সিপিএম নেতা সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “জনপ্রতিনিধি শব্দটাকে গালাগালির পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। একজন গরিব মহিলাকে কুপ্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে এবং ৫০ হাজার টাকা দাবি করা হচ্ছে। বিধায়কের হাত এই কাউন্সিলরের মাথায় আছে।”
স্থানীয় জনগণও এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, “এই ধরনের ঘটনা এলাকার ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর। সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।”
এই ঘটনায় পুলিশের তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে, কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাজনৈতিক চাপ ও বিতর্ক সত্ত্বেও পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত নিরপেক্ষভাবে পরিচালিত হবে।
সোনারপুরের এই ঘটনা সমাজে নারীর প্রতি নিরাপত্তা ও জনপ্রতিনিধিদের দায়বদ্ধতার প্রশ্নও তুলেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, “এ ধরনের ঘটনা বন্ধ করতে সরকার এবং প্রশাসনের উচিত কড়া পদক্ষেপ নেওয়া এবং জনগণের আস্থা ফিরিয়ে দেওয়া।”
এই ঘটনায় এখন প্রত্যক্ষ নজর রয়েছে রাজ্যের রাজনৈতিক এবং সামাজিক মহলের। তদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে, যাতে ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি আর সৃষ্টি না হয়।