পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR) নিয়ে প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে নির্বাচন কমিশনের। আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচন সামনে রেখে ভোটার তালিকা শুদ্ধিকরণকে এখন অগ্রাধিকার দিচ্ছে কমিশন। সূত্রের খবর, এসআইআরের চূড়ান্ত তালিকা ধরেই আগামী পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা ভোট করাতে চায় তারা, ঠিক যেমন বিহারে হচ্ছে।
রাজ্যের অনেকের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে, এই এসআইআরে ঠিক কী কী নথি প্রয়োজন? কারা তালিকা থেকে বাদ পড়বেন? বিদেশি বা অবৈধ ভোটার শনাক্ত হবে কীভাবে? আবার নতুন করে নাম তোলা যাবে কি?
কেন দরকার এসআইআর?
প্রতি বছরই নাম তোলা ও বাদ দেওয়ার কাজ হয়, কিন্তু কমিশনের মতে, প্রচলিত প্রক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ এবং যথেষ্ট ‘নিবিড়’ নয়। তাই এবার সারা রাজ্যে ভোটার তালিকার আমূল পুনর্বিবেচনা করা হবে। এই বিশেষ সংশোধনের লক্ষ্য দুটি—
১. যেন কোনও বৈধ নাগরিক বাদ না পড়েন।
২. যেন কোনও অবৈধ নাম তালিকায় না থাকে।
২০০২ সালে শেষবার রাজ্যে এই ধরনের বিশেষ সংশোধন হয়েছিল। দীর্ঘ ২৩ বছর পর ফের এই কাজ শুরু হচ্ছে, যা কমিশনের এক শীর্ষ আধিকারিকের ভাষায়, “নির্বাচনী স্বচ্ছতা ও নাগরিক যাচাইয়ের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।”
কী কী নথি লাগবে West Bengal Voter List SIR
কমিশন ১১টি নথি নির্দিষ্ট করেছে, যেগুলির যেকোনও একটি দিলেই নাগরিকত্ব যাচাই হবে। এর মধ্যে রয়েছে—
- জন্ম শংসাপত্র
- পাসপোর্ট
- ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসের পুরনো নথি (১ জুলাই ১৯৮৭–এর আগে)
- শিক্ষাগত শংসাপত্র
- রাজ্য সরকারের বাসস্থানের শংসাপত্র
- ফরেস্ট রাইট সার্টিফিকেট
- জাতিগত শংসাপত্র
- ন্যাশনাল রেজিস্ট্রার
- পারিবারিক রেজিস্ট্রার
- জমি বা বাড়ির দলিল
- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের পরিচয়পত্র বা পেনশন কার্ড
এছাড়া আধার কার্ডও দেখানো যাবে, যদিও তা নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে নয়—শুধু পরিচয়পত্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
কে পাবেন এনুমারেশন ফর্ম
যাঁদের নাম বর্তমান ভোটার তালিকায় রয়েছে, তাঁদের বাড়িতে পৌঁছে যাবে ‘এনুমারেশন ফর্ম’। ফর্মে ভোটারের নাম, ঠিকানা, জন্মতারিখ, এপিক নম্বরসহ প্রায় ৯০ শতাংশ তথ্য মুদ্রিত থাকবে। ফর্ম পূরণ করে উপযুক্ত নথি সংযুক্ত করতে হবে।
রাজ্যে প্রায় ৭.৬৫ কোটি ভোটার, ফলে কমিশন তার দ্বিগুণ ফর্ম ছাপার প্রস্তুতি নিয়েছে।
কারা বাদ পড়তে পারেন
২০০২ সালের ভোটার তালিকায় পরিবারের কারও নাম নেই এবং নাগরিকত্ব প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছেন—তাঁদের নাম বাদ পড়বে। একইভাবে মৃত, অবৈধ, বা স্থানান্তরিত ভোটারদের নামও মুছে ফেলা হবে। কমিশনের অনুমান, ৭৫ লক্ষ থেকে ১ কোটি নাম বাদ যেতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে মৃত ভোটার ও সম্ভাব্য অনুপ্রবেশকারী।
নতুন নাম তোলা যাবে কি?
যাঁদের নাম কোনও ভোটার তালিকায় নেই, তাঁরা ৬ নম্বর ফর্মে আবেদন করে নতুন করে নাম তুলতে পারবেন। তবে তাঁদের এনুমারেশন ফর্ম দেওয়া হবে না।
এসআইআরে অংশ না নিলে কী হবে
২০২৬ সালে নতুন ভোটার তালিকা প্রকাশের সময় যদি কেউ এসআইআরে অংশ না নেন, তবে তাঁর নাম নতুন তালিকা থেকে বাদ যাবে। অর্থাৎ, তিনি পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন না।
কমিশনের অগ্রগতি ও ম্যাপিং প্রক্রিয়া
২০০২ সালে রাজ্যে ভোটার ছিল ৪.৫৮ কোটি, এখন তা বেড়ে ৭.৬৫ কোটির কাছাকাছি। এই দুই তালিকা মিলিয়ে চলছে ‘ম্যাপিং’ প্রক্রিয়া—যাঁদের নাম দুই তালিকাতেই রয়েছে, তাঁদের নাগরিকত্ব নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে।
শেষ দফার প্রস্তুতি
সম্প্রতি দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের বৈঠক, যেখানে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার ও রাজ্যের সিইও মনোজ আগরওয়াল উপস্থিত ছিলেন। জানা গিয়েছে, বিএলও নিয়োগে কিছু প্রশাসনিক সমস্যা থাকলেও বাকিটা প্রস্তুতি প্রায় শেষ।


