২০২৫ সালের স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশন (SIR) ঘিরে রাজ্যের ভোটার তালিকা সংশোধন কার্যক্রমে নতুন বিতর্ক। অতীতে একাধিকবার ভোটার তালিকা সংশোধন হলেও, এবার যেন পরিস্থিতি অন্য মাত্রা নিয়েছে। একদিকে মাঠপর্যায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত BLO (Booth Level Officer)-দের অনীহা, অন্যদিকে তাঁদের কাজের পদ্ধতি নিয়ে উঠছে একের পর এক অভিযোগ, এমন প্রেক্ষাপটে ৮ জন BLO-কে সরকারি দায়িত্বে গাফিলতির জন্য শোকজ নোটিস জারি করেছে নির্বাচন কমিশন।
চায়ের দোকান, স্থানীয় ক্লাবে বসে ফর্ম বিলি
প্রাথমিক অভিযোগ অনুযায়ী, বহু BLO এলাকায় বাড়ি বাড়ি না গিয়ে চায়ের দোকান, স্থানীয় ক্লাব কিংবা রাস্তার ধারে বসেই ফর্ম বিলি করছেন। দুর্গাপুরে দেখা গেছে, বাসস্ট্যান্ডে টেবিল–চেয়ার পেতে ফর্ম বিলি করছেন এক BLO। পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলী, উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুর এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর থেকেও একই ধরনের অভিযোগ উঠে এসেছে। দাসপুরের ঘটনায় আবার অভিযোগ, BLO-র দায়িত্বে থাকা এক সরকারি কর্মীর পরিবর্তে তাঁর স্বামী, স্থানীয় তৃণমূল নেতা নিজে ফর্ম বিলি করেছেন।
কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, জাতীয় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী এবার ‘বিহার মডেল’ অনুসরণ করে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ চলছে। প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে ফর্ম বিতরণ ও সংগ্রহ করতে হবে BLO-দের। এক কমিশন আধিকারিকের কথায়, “যাঁরা দায়িত্বে গাফিলতি করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটি সরকারি দায়িত্ব, রাজনৈতিক পক্ষপাত বা সুবিধাবাদ কোনওভাবেই সহ্য করা হবে না।”
খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম West Bengal Voter List Revision
নজরদারি জোরদার করতে প্রতি জেলায় খোলা হয়েছে বিশেষ কন্ট্রোল রুম। প্রতি ১০ জন BLO-র জন্য একজন করে সুপারভাইজার নিয়োগ করা হয়েছে, যাঁরা সরেজমিনে নজর রাখবেন তাঁদের কাজের উপর। পাশাপাশি, সাধারণ ভোটারদের অভিযোগ জানানোর জন্য চালু করা হয়েছে বিশেষ হেল্পলাইন নম্বর, যেখানে ফোন করে BLO-সংক্রান্ত অনিয়ম সরাসরি কমিশনকে জানানো যাবে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে ইঙ্গিত, আগামী দিনে আরও কঠোর মনিটরিং হবে মাঠপর্যায়ের কাজের উপর। একাধিক জেলা থেকে রিপোর্ট তলব করা হয়েছে, এবং প্রয়োজনে BLO পরিবর্তন বা স্থগিতাদেশের সিদ্ধান্তও নেওয়া হতে পারে।
রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়া ঘিরে এই বিতর্কে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে—কমিশনের নিরপেক্ষতা ও প্রশাসনিক দক্ষতা কি সত্যিই মাঠে রক্ষা করা যাচ্ছে?
