আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন ও Special Intensive Revision (SIR) শুরুর আগে রাজ্য সরকার একযোগে ১০ জেলার জেলাশাসক বদল করল। সোমবার নবান্ন (Nabanna) থেকে প্রকাশিত এক নির্দেশিকায় এই রদবদলের কথা জানানো হয়। নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, SIR শুরু হয়ে গেলে জেলাশাসকদের বদলি করা যায় না। তাই সময় নষ্ট না করে তড়িঘড়ি এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্রে খবর।
রাজ্য প্রশাসনের মতে, এই বদলি রুটিন ট্রান্সফার হলেও, রাজনৈতিক মহলে তীব্র জল্পনা শুরু হয়েছে। নির্বাচনের আগে জেলার শীর্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের এমন পরিবর্তন অনেক তাৎপর্য বহন করে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, যে ১০টি জেলায় বদল হয়েছে, সেগুলি রাজ্যের ভোট প্রস্তুতির দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উত্তর ২৪ পরগনা: বর্তমান জেলাশাসক শরৎকুমার দ্বিবেদীকে স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব করা হয়েছে। তাঁর স্থানে নতুন জেলাশাসক হিসেবে যোগ দিচ্ছেন শশাঙ্ক শেট্টি।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা: জেলাশাসক সুমিত গুপ্তাকে বদলি করা হয়েছে। তাঁর জায়গায় এসেছেন কোচবিহারের প্রাক্তন DM অরবিন্দ কুমার মিনা।
কোচবিহার: অরবিন্দ কুমার মিনা দক্ষিণ ২৪ পরগনায় যোগ দেওয়ায়, এখানে নতুন জেলাশাসকের নাম এখনও ঘোষণা হয়নি।
মুর্শিদাবাদ: জেলাশাসক রাজশ্রী মিত্র বদলি হয়েছেন। তাঁর স্থানে মালদার প্রাক্তন DM নীতিন সিংহানিয়া দায়িত্ব নিচ্ছেন।
মালদা: নীতিন সিংহানিয়া মুর্শিদাবাদে চলে যাওয়ায়, নতুন DM হলেন প্রীতি গোয়েল, যিনি দার্জিলিংয়ের প্রাক্তন জেলাশাসক।
পুরুলিয়া: রজত নন্দাকে সরিয়ে নতুন জেলাশাসক করা হয়েছে কনঠাম সুধীরকে, যিনি ছিলেন হলদিয়া ডেভেলপমেন্ট অথরিটির সিইও।
দার্জিলিং: প্রীতি গোয়েল মালদায় গেছেন, ফলে এখানকার DM পদ আপাতত শূন্য।
বীরভূম: বিধানচন্দ্র রায়কে বদলি করে কলকাতা মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের কমিশনার ধবল জৈনকে জেলাশাসক করা হয়েছে।
পূর্ব মেদিনীপুর: পূর্ণেন্দু কুমার মাঝিকে বদলি করে নতুন জেলাশাসক করা হয়েছে ইউনিস রিসিন ইসমাইলকে।
ঝাড়গ্রাম: সুনীল আগারওয়াল বদলি হয়েছেন। বসিরহাটের অতিরিক্ত জেলাশাসক আকাঙ্ক্ষা ভাস্কর ঝাড়গ্রামের নতুন জেলাশাসক হিসেবে দায়িত্ব নিচ্ছেন।
প্রশাসনিক মহলে এই রদবদলকে ভোট-পূর্ব কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। সূত্রের খবর, নির্বাচনের আগে প্রতিটি জেলায় প্রশাসনিক দক্ষতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত রাখতেই সরকার এমন ব্যবস্থা নিয়েছে।
রাজ্যের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিকের কথায়, “SIR শুরু হওয়ার পর কোনো জেলার জেলাশাসককে বদলি করা যায় না। তাই নির্বাচন কমিশনের সময়সূচি ঘোষণার আগেই পদক্ষেপ করা হয়েছে।”
রাজনৈতিক মহল অবশ্য বলছে, এটি শুধুমাত্র প্রশাসনিক পরিবর্তন নয়— নির্বাচনের আগে মাঠে নামার প্রস্তুতির অংশ। কারণ উত্তর ২৪, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মালদা ও মুর্শিদাবাদ— এই চারটি জেলা ভোটের দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে জানিয়েছে, SIR চলাকালীন বৈধ ভোটারদের নাম কোনোভাবেই বাদ যাবে না। এই সময়ের মধ্যে ভোটার তালিকা সংশোধন, নাম অন্তর্ভুক্তি, এবং তথ্য যাচাই চলবে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পদক্ষেপ রাজ্যের প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে। নতুন জেলাশাসকরা যাতে দ্রুত নিজ নিজ জেলার দায়িত্ব বুঝে নিতে পারেন এবং ভোটের প্রস্তুতিতে অংশ নিতে পারেন, সেই লক্ষ্যে নবান্ন আগেভাগেই রদবদলের নির্দেশ জারি করেছে।


