ডায়মন্ড হারবার: বঙ্গোপসাগর ও সুন্দরবনের নদী ব্যবস্থায় ইলিশ মাছের প্রজননের উপযুক্ত পরিবেশ বজায় রাখা এবং ফিমেল ইলিশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে রাজ্য মৎস্য দফতর এ বছরও কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। মৎস্য দফতরের (Fisheries department) জারি করা নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী, ২ অক্টোবর থেকে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত টানা ১১ দিনের জন্য সমস্ত মাছ ধরায় সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।
সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে, ইলিশের প্রজনন মরশুমে ফিমেল মাছকে রক্ষা করা এবং ভবিষ্যতের উৎপাদন বাড়ানোই এই সিদ্ধান্তের মূল উদ্দেশ্য। এই সময়কালে বঙ্গোপসাগরের উপকূল এলাকা এবং সুন্দরবনের নদীতে কোনও ধরণের ট্রলার, ট্রলি, ভুটভুটি বা ডিঙি নৌকা মাছ ধরতে যেতে পারবে না।
জেলা মৎস্য দফতরের পক্ষ থেকে সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলের সমস্ত মৎস্যজীবী সংগঠনগুলির কাছে এই সংক্রান্ত নির্দেশিকা ইতিমধ্যে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। দফতর স্পষ্ট করে দিয়েছে, যদি কেউ সরকারি নির্দেশ অমান্য করে গোপনে মাছ ধরতে যায়, তা পশ্চিমবঙ্গ সামুদ্রিক মৎস্য শিকার নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯৩ এবং ১৯৯৫ অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য হবে। এর পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বোট বাজেয়াপ্ত করা হবে এবং মালিক ও মৎস্যজীবীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মৎস্যজীবীদের সংগঠনগুলির দাবি, এই মরশুমের শুরুতে গভীর সমুদ্র থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ইলিশ ধরা গেলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ইলিশের সংখ্যা হ্রাস পেতে শুরু করেছে। ছোট আকারের ইলিশের সংখ্যাই বেশি ধরা পড়ছে। তার উপর ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের জেরে বহুবার খালি হাতে ফিরে আসতে হয়েছে জেলেদের। সেই কারণে তারা মনে করছেন, মাছ ধরার উপর এই ১১ দিনের নিষেধাজ্ঞা ভবিষ্যতে ইলিশের সংখ্যা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা নেবে।
রাজ্য মৎস্য দফতরের এক সিনিয়র আধিকারিক বলেন, “প্রজনন মৌসুমে ফিমেল ইলিশকে সুরক্ষিত রাখতে না পারলে আগামী বছর উৎপাদন মারাত্মকভাবে কমে যাবে। তাই প্রজননের সময় মাছ ধরা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত ইলিশ সংরক্ষণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
অন্যদিকে, সম্প্রতি খোকা ইলিশ পাচারের ঘটনায় যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল, তাও এই সিদ্ধান্তের পেছনে অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। কিছুদিন আগেই নাগেন্দ্রবাজার মাছের আড়তে পুলিশ ২৪০ কেজি ইলিশ বাজেয়াপ্ত করেছিল, যার মধ্যে অনেক মাছের ওজন ছিল মাত্র ২৫০ গ্রাম। সেই ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জেলেরা পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান এবং ‘ইলিশ চোর’ বলেও কটাক্ষ করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শেষে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করতে হয়।
প্রশাসনের মতে, ওই ঘটনা প্রমাণ করে দিয়েছে যে ইলিশ সংরক্ষণের জন্য কড়া পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবি। মৎস্য দফতর আশা করছে, এই নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়িত হলে বঙ্গোপসাগর ও সুন্দরবনের জলাশয়ে ইলিশের প্রজনন প্রক্রিয়া আরও জোরদার হবে এবং আগামী মরশুমে রাজ্যের বাজারে পর্যাপ্ত ও উন্নত মানের ইলিশ সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।