কৃষকদের জন্য বিরাট ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর, ব্যাঙ্কে ঢুকছে ২,৯৩০ কোটি টাকা

কলকাতা: টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত রাজ্যের বিস্তীর্ণ কৃষিজমি। কোথাও জলে ডুবে নষ্ট হচ্ছে বীজতলা, কোথাও আলু ফেলে যেতে হচ্ছে হিমঘরে কারণ নেই ক্রেতা, নেই দাম। এর…

West Bengal farmer financial aid

কলকাতা: টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত রাজ্যের বিস্তীর্ণ কৃষিজমি। কোথাও জলে ডুবে নষ্ট হচ্ছে বীজতলা, কোথাও আলু ফেলে যেতে হচ্ছে হিমঘরে কারণ নেই ক্রেতা, নেই দাম। এর মাঝেই রাজ্যের কৃষকদের জন্য বড় সুখবর আনলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কৃষক বন্ধু (নতুন) প্রকল্পের অধীনে খরিফ মরসুমের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেল বলে তিনি মঙ্গলবার এক্স হ্যান্ডলে ঘোষণা করেন (West Bengal farmer financial aid)।

মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, “আমি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, আসন্ন খরিফ মরসুমের জন্য কৃষক বন্ধু (নতুন) প্রকল্পে সহায়তা প্রদান আজ থেকে শুরু করা হল… এবারে রাজ্যের ১ কোটি ৯ লক্ষ কৃষক ও বর্গাদার এই সহায়তা পাচ্ছেন। তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে মোট ২,৯৩০ কোটি টাকা সরাসরি দেওয়া হচ্ছে।”

   

এই বিপুল অঙ্কের অর্থ রাজ্যের প্রত্যন্ত গ্রামের কৃষকদের কাছে পৌঁছবে সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষিজীবী পরিবারগুলোর কাছে এই অনুদান আপাতত যেন আশার আলো।

প্রকল্পের খতিয়ান: শুধুই অনুদান নয়, এক দীর্ঘস্থায়ী প্রতিশ্রুতি

২০১৯ সালে চালু হওয়া ‘কৃষক বন্ধু (নতুন)’ প্রকল্পের আওতায় বছরে দুই কিস্তিতে কৃষকদের দেওয়া হয় আর্থিক সহায়তা।

  • এক একর বা তার বেশি জমির মালিক কৃষকরা বছরে পান ১০,০০০ টাকা
  • এক একরের কম জমির মালিকদের দেওয়া হয় অনুপাতিক হারে কমপক্ষে ৪,০০০ টাকা

এই প্রকল্পের আওতায় বর্তমানে রাজ্যে সহায়তা পাচ্ছেন ১ কোটি ৯ লক্ষ কৃষক ও বর্গাদার। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি অনুযায়ী, প্রকল্প শুরু হওয়ার পর থেকে মোট ২৪,০৮৬ কোটি টাকা রাজ্যের কৃষকদের হাতে পৌঁছে দিয়েছে সরকার।

তবে এখানেই শেষ নয়। প্রকল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল সামাজিক সুরক্ষা। যদি কোনও কৃষক ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেন, তাঁর পরিবার পায় ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ। ইতিমধ্যেই প্রায় ১.৪৬ লক্ষ কৃষক পরিবার এই অনুদান পেয়েছে, যার আর্থিক মূল্য ২,৯২০ কোটি টাকা।

Advertisements

এই আর্থিক সহায়তা এখন কতখানি জরুরি?

পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব বর্ধমান, হুগলি সহ একাধিক কৃষিপ্রধান জেলায় গত কয়েক সপ্তাহের অতিবৃষ্টিতে ধান চাষ মার খাচ্ছে। পাশাপাশি, হিমঘরে থাকা আলুর দাম পড়ে গিয়েছে মাত্র ৬ টাকা কেজি, যার ফলে মাথায় হাত আলুচাষিদের। এই সময় চাষের খরচ জোগাতে যে নগদ অর্থের প্রয়োজন, সেই প্রয়োজন মেটাতে পারে ‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্পের এই কিস্তি।

কীভাবে জানবেন টাকা ঢুকেছে কি না?

১. কৃষকবন্ধু প্রকল্পের ওয়েবসাইটে যান: krishakbandhu.net
২. ভোটার আইডি নম্বর দিন
৩. ‘Transaction Successfully’ লেখা এলে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে লগ ইন করে দেখুন অর্থ এসেছে কি না
৪. এছাড়াও ফোনে আসা ব্যাঙ্ক মেসেজ দেখেও টাকার তথ্য পাওয়া সম্ভব

যদি কোনও তথ্য না মেলে, তাহলে নিকটবর্তী CSC সেন্টার অথবা কৃষি সহকারী পরিচালকের দপ্তরে যোগাযোগ করতে হবে।

এই প্রকল্প আর শুধুমাত্র আর্থিক সহায়তা নয়, এ এক সামাজিক সুরক্ষা বলয়, যা বাংলা কৃষকদের মরসুমী চাষভিত্তিক অনিশ্চয়তা থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা করতে সক্ষম হচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, 
“আমাদের কৃষকরা আমাদের সম্পদ, আমাদের গর্ব। আমাদের সরকার আগামীদিনেও এভাবেই তাঁদের সার্বিক কল্যাণের উদ্দেশ্যে কাজ করে যাবে।”