নারী নির্যাতনের মামলায় সাজার হারে দেশের তলানিতে বাংলা

west-bengal-conviction-rate-crimes-against-women-2023

কলকাতা: নারী নিরাপত্তা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে দিল ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর (NCRB) সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান। ২০২৩ সালে দেশের ৩৬টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের স্থান ৩৫তম, অর্থাৎ একেবারে শেষের দিকেই।

Advertisements

নারী নির্যাতনের মামলায় রাজ্যের দণ্ডের হার মাত্র ৩.৭ শতাংশ, যা জাতীয় গড়ের (প্রায় ২৬%) অনেক নিচে। প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৮ সাল থেকে প্রতি বছর গড়ে ৩০,০০০-এরও বেশি নারী নির্যাতনের মামলা রাজ্যে নথিভুক্ত হয়েছে। অথচ দোষীদের সাজা হয়েছে হাতেগোনা কয়েকজনের। বর্তমানে রাজ্যে ৩ লক্ষ ৬৮ হাজার মামলা বিচারাধীন, যা ২০১৭ সালের তুলনায় ৫৬ শতাংশ বেশি।

কালীপুজোয় বিশেষ পরিষেবার ঘোষণা মেট্রো কর্তৃপক্ষের

বিশেষজ্ঞদের মতে এই বিপুল সংখ্যক বিচারাধীন মামলার পিছনে লুকিয়ে আছে অব্যবস্থার ছবি। আদালত ও তদন্ত সংস্থার সীমিত সক্ষমতা, পুলিশি দেরি, এবং সাক্ষী সুরক্ষার অভাবের কারণে অধিকাংশ মামলাই বছরের পর বছর ঝুলে থাকে।

অনেক সময় নির্যাতিতারা ন্যায়বিচারের আশাই ছেড়ে দেন। আইনি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দণ্ডের হার এত নিচে থাকা মানে আইন প্রয়োগে বড় ব্যর্থতা। তদন্তে ত্রুটি, প্রমাণের অভাব, এবং সাক্ষীদের ভয় দেখানো এই তিনটি কারণই সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে নারী নির্যাতন মামলাগুলিতে।

Advertisements

তবে রাজনৈতিক মহলের একাংশ বলছেন “এটা কেন্দ্রের রিপোর্ট, কিন্তু বিচারাধীন মামলার সংখ্যা বৃদ্ধির মানে মানুষ এখন সাহস করে অভিযোগ জানাচ্ছেন। আমরা প্রতিটি ঘটনায় কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছি।” তথ্য বলছে, কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সবচেয়ে বেশি সংবেদনশীল। নারী নির্যাতন, গার্হস্থ্য হিংসা, স্টকিং, ও যৌন হেনস্থার ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে এই দুই জেলায়। সমাজকর্মীরা বলছেন, শুধু প্রশাসনিক পদক্ষেপ নয়, সমাজের মানসিক পরিবর্তনও জরুরি।

তবে তুলনা মূলক বিশ্লেষণের ভিত্তিতে দেখা যাচ্ছে রাজ্যের দণ্ডের হার যখন ৩.৭ শতাংশ, তখন রাজস্থান, কেরালা, তেলেঙ্গানা, ও গুজরাটের দণ্ডের হার ৩০-৪৫ শতাংশের মধ্যে। অর্থাৎ বাংলার তুলনায় প্রায় দশগুণ বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ থেকে পরিষ্কার যে আইন আছে, কিন্তু তার প্রয়োগে ভয়াবহ ঘাটতি।

নারী নির্যাতন কেবল আইনশৃঙ্খলার বিষয় নয়, এটি সমাজের মানসিকতারও প্রতিফলন। পশ্চিমবঙ্গের মতো সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ রাজ্যে যদি মহিলারা এখনও নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন, তবে সেটি নিঃসন্দেহে গভীর সংকটের ইঙ্গিত। দোষীদের দ্রুত শাস্তি ও অভিযোগকারীদের সুরক্ষা — এই দুই ক্ষেত্রেই এখন সবচেয়ে বেশি নজর দেওয়া জরুরি।