দুর্গাপুজোর আর মাত্র কয়েকদিন বাকি, কিন্তু সবজির দামের (Vegetable Prices) ঊর্ধ্বগতি যেন থামার নামই নিচ্ছে না। কলকাতা ও শহরতলির বিভিন্ন বাজারে সবজির দাম এমনভাবে বেড়েছে যে, সাধারণ ক্রেতারা প্রয়োজনীয় নিত্যপ্রয়োজনীয় সবজি কিনতেও হাত সঙ্কোচ করছেন। বর্ষার কারণ দেখিয়ে বিক্রেতারা দাম বাড়ানোর যুক্তি দিলেও, ক্রেতাদের অভিযোগ, দাম নিয়ন্ত্রণে কলকাতার একাধিক বাজারে টাস্ক ফোর্স নামলেও কোনও ফল হয়নি।
আলু থেকে ধনেপাতা, সব কিছুর দামই যেন আকাশছোঁয়া। পুজোর মরসুমে বাঙালির পাতে পঞ্চব্যঞ্জন রান্নার পরিকল্পনা এই দাম বৃদ্ধির কারণে মার খাচ্ছে। কলকাতার বিভিন্ন বাজারে এবং শহরতলির মানিকতলা, গড়িয়া, বাগবাজার, বেলেঘাটার মতো এলাকায় সবজির দাম গত কয়েকদিনে লাফিয়ে বেড়েছে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় আলু, যা কয়েকদিন আগেও ৩৭-৩৮ টাকা কেজি ছিল, তা এখন ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ধনেপাতার দাম তো যেন সোনার দাম ছাড়িয়ে গেছে—৩০০ টাকা কেজি! ক্যাপসিকামের দাম ১৫০ টাকা কেজি ছাড়িয়েছে। পটল, ঝিঙে, উচ্ছে এই সবজিগুলির দাম বর্তমানে ৪০ থেকে ৬০ টাকা কেজির মধ্যে ঘোরাফেরা করছে।
গাজর, টমেটো এবং বাঁধাকপির দামও কেজি প্রতি ৫০ টাকায় পৌঁছেছে। বেগুনের দাম ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি, এমনকি বড় সাইজের বেগুন ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ফুলকপি প্রতি পিস ৫০ টাকা, আর কুমড়ো, চালকুমড়ো, থোড় এবং মোচার দামও কেজি প্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। গড়ে প্রতিটি সবজির দাম কেজি প্রতি ২০ টাকা বেড়েছে, যা সাধারণ ক্রেতাদের পকেটে বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করছে।
বিক্রেতারা দাবি করছেন, টানা বর্ষার কারণে কৃষকদের ফসল মাঠেই নষ্ট হয়ে গেছে। বৃষ্টির ফলে অনেক সবজি পচে যাওয়ায় বাজারে জোগান কমেছে। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর এবং হাওড়ার মতো এলাকায় শীতকালীন সবজি চাষ করা হয়েছিল, কিন্তু অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে সেগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ফলে, বাজারে সবজির সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে। বিক্রেতারা আরও জানিয়েছেন, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি এবং জোগানের ঘাটতির কারণে দাম এখনই কমার সম্ভাবনা নেই। কৃষকরা জানিয়েছেন, বর্ষার কারণে ফসলের উৎপাদন খরচ বেড়েছে, এবং ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের কারণে তাঁদেরও লোকসান হচ্ছে।
দাম নিয়ন্ত্রণে রাজ্য সরকার কলকাতার বিভিন্ন বাজারে টাস্ক ফোর্স মোতায়েন করেছে। এই টাস্ক ফোর্সের কাজ হলো বাজারে মজুতদারি এবং কৃত্রিম দাম বৃদ্ধি রোধ করা। কিন্তু ক্রেতাদের অভিযোগ, টাস্ক ফোর্সের তৎপরতা সত্ত্বেও দামের উপর কোনও প্রভাব পড়ছে না। মানিকতলা বাজারের একজন ক্রেতা বলেন, “প্রতিদিন বাজারে গিয়ে দেখি দাম আরও বাড়ছে।
টাস্ক ফোর্স কী করছে, বোঝা যাচ্ছে না।” আরেকজন ক্রেতা জানান, “পুজোর সময় আমরা পরিবারের সঙ্গে ভালো খাবার খেতে চাই, কিন্তু এই দামে তিন-চারটে সবজি কিনলেই পকেট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।” দুর্গাপুজো বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব, এবং এই সময়ে পঞ্চব্যঞ্জন রান্না করে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে পাত পড়ে খাওয়ার রীতি রয়েছে।
কিন্তু সবজির এই অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি সাধারণ মানুষের পুজোর আনন্দে ছায়া ফেলছে। মধ্যবিত্ত পরিবারগুলি এখন চিন্তিত যে, বাজেটের মধ্যে থেকে পুজোর জন্য প্রয়োজনীয় সবজি কীভাবে কিনবেন। বিশেষ করে ধনেপাতা, বেগুন, ফুলকপির মতো সবজি, যা পুজোর রান্নায় অপরিহার্য, তাদের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।
জিএসটি সংস্কার নিয়ে আর কোনো দ্বিমত নেই, দাবি অর্থমন্ত্রীর
কলকাতার তুলনায় জেলার বাজারগুলিতে সবজির দাম কিছুটা কম হলেও, সেখানেও দাম বৃদ্ধির প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। উত্তর ২৪ পরগনার বারাসাত, বসিরহাট এবং হাওড়ার উলুবেড়িয়ার মতো বাজারে আলু ৩৫-৩৮ টাকা, বেগুন ৭০-৮০ টাকা এবং টমেটো ৪৫-৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। তবে, জেলার ক্রেতারা জানিয়েছেন, কলকাতার তুলনায় দাম কিছুটা কম হলেও, তা এখনও সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার তুলনায় বেশি।