বঙ্গ রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িকতার ছোয়া লেগেছে বহু আগেই। সামনেই রথযাত্রা (Rath-Yatra) এবং এই রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চর্চা। সমাজ মাধমের একটি পোস্টে রথযাত্রার একটি পোস্টার ঘিরে সূত্রপাত এই বিতর্কের। পোস্টারটিতে দেখা যাচ্ছে রথ মেলা উর্দুতে লেখা এবং রথের মেলাটি হতে চলেছে হওয়া ময়দানে। বিরোধী দল বিজেপির দাবি রথযাত্রার মতো হিন্দু উৎসবের বিজ্ঞপ্তি কেন উর্দুতে লেখা হবে।
বিরোধী দল বিজেপি (Rath-Yatra) এবং স্থানীয় হিন্দু সংগঠনগুলি দাবি করছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকার হিন্দু সংস্কৃতির বিরুদ্ধে ‘জেহাদি তোষণ’ এবং ‘উর্দুকরণ’ নীতি গ্রহণ করেছে। রথযাত্রার প্রসাদে ‘হালাল মিষ্টি’ বিতরণ এবং দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের রথযাত্রাকে ঘিরে তৃণমূলের রাজনৈতিক কর্মসূচির সমালোচনা তীব্র হয়েছে। এই ঘটনাগুলি স্বামী বিবেকানন্দ ও চৈতন্য মহাপ্রভুর বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উপর আঘাত বলে অভিযোগ করছে বিরোধীরা।
মালদার রথ মেলা বন্ধের অভিযোগ (Rath-Yatra)
মালদা জেলার কালিয়াচক থানার অধীন জালালপুর গ্রামে শ্রী মহাপ্রভু মন্দির সংলগ্ন রথযাত্রা মেলা শতাব্দী ধরে চলে আসছে। স্থানীয় ঐতিহাসিকদের মতে, এই উৎসব মোঘল আমলেরও আগে শুরু হয়েছিল, যা ৬২৯ বছরের ঐতিহ্যের সাক্ষী। এই মেলায় ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন।
কিন্তু এবার কালিয়াচক (Rath-Yatra) থানা পুলিশ মেলার অনুমতি দিতে অস্বীকার করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রথযাত্রা উৎসব কমিটির সম্পাদক গৌতম মণ্ডল জানিয়েছেন, “এই মেলা ৯ দিন ধরে চলে এবং বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ আসেন। কিন্তু পুলিশ আইনশৃঙ্খলার কারণ দেখিয়ে অনুমতি দিচ্ছে না।” তিনি আরও বলেন, “এটি আমাদের সংস্কৃতির অংশ। পুলিশের এই সিদ্ধান্ত ঐতিহ্যের উপর আঘাত।”
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এই ঘটনাকে ‘ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “মোঘলরাও এই মেলা বন্ধ করতে পারেনি। কিন্তু মমতা সরকার হিন্দু সংস্কৃতির উপর কোপ বসিয়েছে।” এক্স-এ বিজেপির অফিসিয়াল হ্যান্ডেলে পোস্ট করা হয়েছে, “জেহাদি তোষণ করতে গিয়ে ৬০০ বছরের হিন্দু সংস্কৃতিতে কোপ, মমতার রাজ্যে হিন্দু হলে উৎসব করতে অনুমতি লাগে, দাঙ্গা করতে না।”
হালাল প্রসাদ নিয়ে বিতর্ক
বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী রথযাত্রার (Rath-Yatra) প্রসাদে ‘হালাল মিষ্টি’ বিতরণের অভিযোগ তুলেছেন। তিনি দাবি করেছেন, “মমতা সরকার জগন্নাথের প্রসাদের নামে হালাল মিষ্টি খাওয়াচ্ছে, যা হিন্দু ভক্তদের ধর্মীয় অনুভূতির উপর আঘাত।”
এই অভিযোগ রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিজেপি নেতারা বলছেন, এটি হিন্দু ঐতিহ্যকে কলুষিত করার প্রচেষ্টা এবং ‘উর্দুকরণ’ নীতির অংশ। এক্স-এ একাধিক পোস্টে এই বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, “মমতার সরকার বাংলার হিন্দু ঐতিহ্য ধ্বংস করতে মরিয়া।”
দিঘার রথযাত্রা ও রাজনৈতিক উত্তাপ
দিঘায় নবনির্মিত জগন্নাথ মন্দিরে এই প্রথম রথযাত্রার আয়োজন হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২৭ জুন এই রথযাত্রায় অংশ নিতে পারেন বলে জানা গেছে। তৃণমূল সূত্রে জানা গেছে, দলের নেতা-কর্মীদের পুরীর পরিবর্তে দিঘায় রথযাত্রায় অংশ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে(Rath-Yatra)। এই সিদ্ধান্তকে বিরোধীরা ‘হিন্দু-বিরোধী’ এবং ‘বাংলা-বিরোধী’ বলে সমালোচনা করছে। বিজেপি দাবি করেছে, “মমতা দিঘার রথযাত্রাকে রাজনৈতিক মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করছেন এবং পুরীর ঐতিহ্যকে অবমাননা করছেন।”
দিঘার রথযাত্রার জন্য প্রশাসন বিশেষ প্রস্তুতি নিয়েছে। এক কিলোমিটার দীর্ঘ রথের রশি বিছিয়ে দেওয়া হবে এবং কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে, বিরোধীরা বলছে, এই আয়োজন তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতির অংশ। তমলুকে তৃণমূলের নতুন কর্মসূচিতে রথযাত্রার প্রসাদ বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েও বিতর্ক শুরু হয়েছে।
তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া
তৃণমূল নেতা অতীন ঘোষ বলেন, “জগন্নাথ দেব সর্বত্র বিরাজমান। আমরা দিঘায় রথযাত্রার আয়োজন করছি, এতে কোনো ভুল নেই।” তিনি বিজেপির অভিযোগকে ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তৃণমূলের দাবি, তারা হিন্দু ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং দিঘার রথযাত্রা সাংস্কৃতিক ঐক্যের প্রতীক। তবে, মালদার রথ মেলা বন্ধের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।
সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ
এক্স-এ এই বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “মমতা সরকার হিন্দু ঐতিহ্য ধ্বংস করছে। ৬০০ বছরের রথ মেলা বন্ধ করা হল, আর দিঘায় রাজনৈতিক রথযাত্রা চালানো হচ্ছে।” আরেকজন লিখেছেন, “বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির উপর এই উর্দুকরণ মেনে নেওয়া যায় না।”
শিলিগুড়ি-কোচবিহার রুটে চালু AC বাস, যোগাযোগে স্বস্তি
হিন্দু ঐতিহ্যের উপর প্রভাব
বিজেপি নেতারা দাবি করছেন, মমতা সরকারের (Rath-Yatra) নীতি হিন্দু ঐতিহ্যের প্রতি আঘাত হানছে। তারা বলছেন, “স্বামী বিবেকানন্দ ও চৈতন্য মহাপ্রভুর বাংলা কখনো এই সাংস্কৃতিক আগ্রাসন মেনে নেবে না।” বিশেষ করে এই পোস্টার যেখানে ইংরেজি এবং উর্দুতে রথযাত্রা এবং রথমেলার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে তা নিয়েও রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
মালদার রথ মেলা বন্ধ,(Rath-Yatra) দিঘার রথযাত্রা এবং সর্বোপরি এই ধরণের পোস্টার কে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়িয়েছে যা বাংলার সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় পরিচিতিতে আঙ্গুল তুলছে । বিজেপি এবং হিন্দু সংগঠনগুলি মমতা সরকারের বিরুদ্ধে ‘জেহাদি তোষণ’ এবং ‘উর্দুকরণ’ নীতির অভিযোগ তুললেও, তৃণমূল দাবি করছে, তারা সকল ধর্মের প্রতি সমান শ্রদ্ধাশীল। এই বিতর্ক বাংলার রাজনৈতিক মেরুকরণকে আরও তীব্র করেছে। আগামী দিনে এই ঘটনার প্রভাব রাজ্যের রাজনীতি ও সামাজিক সম্প্রীতির উপর কী প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে জল্পনা চলছে।