জয়নগরে তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি খুনে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে। সইফুদ্দিন লস্কর খুনে ধৃত সাহারুল শেখ যুক্ত তৃণমূলের সঙ্গেই এমনই ইঙ্গিত দিলেন ধৃতের মেসো-মাসির। ডায়মন্ডহারবারে নেতারা এলাকায় মামার বাড়ি থাকতেন সাহারুল শেখ। কিন্তু বিয়ের পর থেকে শ্বশুরবাড়ি সংগ্রামপুরে থাকতে শুরু করে। তবে এই প্রথম না,এর আগেও দৃষ্কৃতিমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকায় আটক করা হয়েছিল সাহারুলকে।
সইফুদ্দিন খুনে জড়িত সন্দেহে দুই যুবককে ধাওয়া করে ধরেন স্থানীয়রা। তাদের মধ্যে পিটিয়ে মেরা ফেলা হয় সহাবুদ্দিন শেখকে। তাঁর স্ত্রীয়ের দাবি স্বামী সহাবুদ্দিনও তৃণমূল করত। এই দাবিতে জোরালো হয়েছে বাম অভিযোগ। খুনের ঘটনায় প্রথম থেকেই সিপিআইএমের দাবি, তৃণমূলের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই খুন করা হয় সইফুদ্দিন লস্করকে।
জয়নগরের ঘটনায় সিপিআঅএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘যে কোনও মৃত্যু দুঃখজনক, কিন্তু অন্য কারও ঘাড়ে দোষ চাপাবার কোনও মানে হয় না। তৃণমূলের নিজেদের সমস্যার কারণেই এই ঘটনা।’
ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৪ কিমি দূরের গ্রামে আগুন লাগানো হয়েছে। কিন্তু কেন ? সেই প্রশ্নও উঠছে। গ্রামের মানুষের দাবি আমরা সিপিআইএম করি বলেই গ্রাম পোড়ানো হল। পার্টি করা কি অন্যায় ? প্রশ্ন গ্রামবাসীদের। তাদের দাবি ওই এলাকা সিপিআইএমের শক্ত ঘাঁটি।
পঞ্চায়েত ভোট মিটলেও রাজ্যে খুনোখুনির রাজনীতি যে থামল না সেটাই প্রমান করল জয়নগর। সোমবার ভোরবেলা তৃণমূল নেতাকে গুলি করে খুন করা হয়। সেখানেই শেষ নয়। তৃণমূল নেতা খুনের বদলা নিতে আইন হাতে নিয়ে অভিযুক্তকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ। সব মিলিয়ে জোড়া খুনে অগ্নিগর্ভ জয়নগর। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরের ঘটনার তৃণমূল নেতা খুনের দেড় বছর আগে বীরভূমের বগটুইয়ের স্মৃতি ফিরল।
তৃণমূল নেতা সৈফুদ্দিন লস্কর খুনের ঘটনায় অভিযোগ নেতা খুন হওয়ার পর পুলিশ এবং দমকল আটকে রেখে দোলুয়াখাঁকি গ্রাম জুড়ে চলে তাণ্ডব। একের পর এক বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় ধানের গোলায়। গ্রামের মহিলারা পুকুর থেকে জল তুলে কোনো রকমে আগুন নেভায়। একটি বাড়ি নয় , কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০টি বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়েছে।
এমন দৃশ্যে কান্নায় ভেঙে পড়েছে গ্রামের পরিবারগুলো। এক মহিলা কাঁদতে কাঁদতেই বলে চলেন, “সব জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। ঘরদোর, জিনিসপত্র কিচ্ছু নেই। দোকানও জ্বলেছে। একটা বাচ্চাকে যে পরাব সেই জামাটুকু নেই। গায়ে যেগুলো আছে, ওইটুকুই সম্বল। আমাদের আর কিচ্ছু নেই।”প্রতিশোধের আগুন থেকে মহিলা, শিশু ছাড় পায়নি কেউ। খোলা আকাশের নিচে বসে তারা। অনিশ্চয়তার আঁধার দিনেরাতে।