বিধানসভায় মান বাঁচাতে ব্রহ্মাস্ত্র- বাহাত্তর হাজার লক্ষীর ভান্ডার?

২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর বাড়ছে (Trinamool)। তৃণমূল হোক বা বিরোধী বিজেপি সবাই ব্যস্ত নিজের নিজের স্ট্রাটেজি সাজাতে। তৃণমূলের বিভিন্ন প্রকল্পগুলির মধ্যে অন্যতম…

Trinamool lokkhi bhandar

২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর বাড়ছে (Trinamool)। তৃণমূল হোক বা বিরোধী বিজেপি সবাই ব্যস্ত নিজের নিজের স্ট্রাটেজি সাজাতে। তৃণমূলের বিভিন্ন প্রকল্পগুলির মধ্যে অন্যতম লক্ষ্মীর ভান্ডার। এবং বাংলার মহিলামহলে বেশ জনপ্রিয় ও বটে। আজ তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই লক্ষ্মীর ভান্ডার নিয়েই একটি বড় ঘোষণা করেছেন।

তিনি রাজ্যের ৭২,০০০-এরও বেশি মহিলার জন্য লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করেছেন। এই পদক্ষেপকে বিরোধী মহল তৃণমূলের ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ হিসেবে দেখছে। বিরোধী মহলের মতে লক্ষ্মী ভান্ডারকে হাতিয়ার করেই তৃণমূল আসন্ন নির্বাচনে ভোটব্যাংক শক্তিশালী করতে চাইছে। তার সাথে রাজ্যে তাদের মান বাঁচাতে চাইছে।

   

লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প, যা ২০২১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে শুরু হয়েছিল, তৃণমূলের নির্বাচনী কৌশলের একটি মূল অংশ হয়ে উঠেছে।লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের অধীনে, সাধারণ শ্রেণির মহিলারা প্রতি মাসে ১,০০০ টাকা এবং তফসিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ের মহিলারা ১,২০০ টাকা আর্থিক সহায়তা পান।

সম্প্রতি নবান্ন সূত্রে জানা গেছে যে, বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই প্রকল্পের আওতায় সুবিধাভোগীদের জন্য সহায়তার পরিমাণ বাড়ানো হবে। যারা এখন ১,০০০ টাকা পান, তারা ১,৫০০ টাকা এবং যারা ১,২০০ টাকা পান, তারা ২,০০০ টাকা পাবেন। এই ঘোষণার মাধ্যমে তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যের মহিলা ভোটারদের মধ্যে তাদের সমর্থন আরও জোরদার করার চেষ্টা করছে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ঘোষণা রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প তৃণমূলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। রাজ্যের প্রায় ২ কোটি মহিলা এই প্রকল্পের সুবিধাভোগী, যা তৃণমূলের ভোটব্যাংকের একটি বড় অংশ। এই প্রকল্পের মাধ্যমে মহিলাদের আর্থিক স্বাধীনতা এবং ক্ষমতায়নের লক্ষ্য নিয়ে তৃণমূল সরকার কাজ করে যাচ্ছে।

নতুন ঘোষণার মাধ্যমে সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৭২,০০০-এরও বেশি বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে, যা রাজ্যের গ্রামীণ ও শহুরে মহিলা ভোটারদের মধ্যে তৃণমূলের প্রভাব আরও বাড়িয়ে তুলবে।রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার তৃণমূলের নির্বাচনী কৌশলের একটি মূল অস্ত্র।

Advertisements

এই প্রকল্পের মাধ্যমে দলটি শুধু মহিলা ভোটারদেরই নয়, তফসিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ের মধ্যেও তাদের সমর্থন বাড়াতে চাইছে। তবে, বিরোধী দল, বিশেষ করে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি), এই প্রকল্পকে ‘ভোট কেনার কৌশল’ হিসেবে সমালোচনা করেছে। বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেছেন যে, তৃণমূল সরকার তফসিলি সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচার চালাচ্ছে এবং লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মতো প্রকল্পগুলি কেবল রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহৃত হচ্ছে।

তিনি দাবি করেছেন যে, এই প্রকল্পের সুবিধা সঠিকভাবে সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছাচ্ছে না এবং তৃণমূলের নেতারা এই প্রকল্পের নামে দুর্নীতি করছেন।তবে, তৃণমূলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প রাজ্যের মহিলাদের জন্য একটি গেম-চেঞ্জার। এই প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ মহিলারা তাদের পরিবারের আর্থিক চাহিদা মেটাতে পারছেন এবং ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করছেন।

সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প তৃণমূলের জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায়। তবে, বিরোধীরা দাবি করছেন যে, এই প্রকল্পের সুবিধা সবার কাছে সমানভাবে পৌঁছাচ্ছে না এবং তৃণমূলের সমর্থকদের প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এই বিতর্ক সত্ত্বেও, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ঘোষণা রাজ্যের রাজনৈতিক সমীকরণে নতুন গতি এনেছে।

বিশেষ নিবিড় সংশোধন নাকি উৎপীড়ন?

সমালোচকদের মতে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের জয় নিশ্চিত করতে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে। তবে, এই প্রকল্পের সফলতা নির্ভর করবে এর সঠিক বাস্তবায়ন এবং স্বচ্ছতার উপর। আবার অনেকে বলছেন রাজ্যের মহিলা ভোটারদের সমর্থন ধরে রাখতে এবং তফসিলি সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রভাব বাড়াতে তৃণমূলের এই কৌশল কতটা কার্যকর হবে, তা আগামী দিনে স্পষ্ট হবে।