সন্দেশখালিতে টর্নেডোর তাণ্ডবে শতাধিক বাড়ি ধ্বংস, আহত অন্তত ৬ জন

সন্দেশখালি: দশমীর বিকেলে দুর্গাপুজোর আনন্দের মাঝেই প্রকৃতির রোষে কাঁপল উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালি (Sandeshkhali)। হঠাৎ করেই শুরু হওয়া ঘূর্ণিঝড়ে মুহূর্তের মধ্যে তছনছ হয়ে গেল একাধিক…

সন্দেশখালি: দশমীর বিকেলে দুর্গাপুজোর আনন্দের মাঝেই প্রকৃতির রোষে কাঁপল উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালি (Sandeshkhali)। হঠাৎ করেই শুরু হওয়া ঘূর্ণিঝড়ে মুহূর্তের মধ্যে তছনছ হয়ে গেল একাধিক গ্রাম। শতাধিক বাড়ি ভেঙে পড়ল, উড়ে গেল ছাদ, আহত হলেন অন্তত ছয়জন। বিদ্যুতের খুঁটি ও তার ছিঁড়ে গিয়ে অন্ধকারে ডুবে গেল গোটা এলাকা।

Advertisements

হাওয়া অফিস আগে থেকেই সতর্কবার্তা জারি করেছিল যে গভীর নিম্নচাপের জেরে আগামী তিন দিন রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সেই বৃষ্টির মধ্যেই বৃহস্পতিবার বিকেলে সন্দেশখালি ১ নম্বর ব্লকের আগারহাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের পাথরঘাটা এলাকায় আচমকা টর্নেডো আঘাত হানে। স্থানীয় সময় বিকেল চারটা নাগাদ শুরু হয় প্রবল ঝোড়ো হাওয়া। কয়েক মিনিটের মধ্যেই তার প্রভাব পড়ে আশপাশের এলাকায়।

   

স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, ঘূর্ণিঝড় এত দ্রুত গতিতে ছুটে আসে যে অনেকে ঘর থেকে বেরোতেই পারেননি। মুহূর্তে উড়ে যায় টিন ও টালির ছাদ, ভেঙে পড়ে প্রাচীর। প্রায় শতাধিক বাড়ি পুরোপুরি বা আংশিকভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। বিদ্যুতের প্রায় ১৫ থেকে ২০টি খুঁটি উপড়ে পড়ায় এবং বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে যাওয়ায় গোটা এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

এই তাণ্ডবে আহত হয়েছেন অন্তত ৬ জন। তাঁদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এক মহিলা এবং এক পুরুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে গেলে দ্রুত তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। স্থানীয় মানুষদের দাবি, আচমকা এই ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারত, কিন্তু অনেকেই সময়মতো ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন।

ঘূর্ণিঝড়ের খবর পাওয়া মাত্রই ঘটনাস্থলে পৌঁছান সন্দেশখালির বিধায়ক সুকুমার মাহাতো এবং সন্দেশখালি ১ নম্বর ব্লকের বিডিও সায়ন্তন সেনের প্রতিনিধিরা। পরিস্থিতি পরিদর্শন করে বিধায়ক জানান, “এই দুর্যোগে বহু মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। আমরা তাঁদের পাশে আছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত ত্রাণ ও সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হবে।”

প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে খাবার, জল ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা শুরু হয়েছে।

বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীরাও মাঠে নেমেছেন। খুঁটি ও তার মেরামতির পাশাপাশি বিদ্যুৎ সংযোগ পুনঃস্থাপনের কাজ চলছে যুদ্ধকালীন তৎপরতায়। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।

এদিকে হাওয়া অফিস আরও সতর্ক করে জানিয়েছে, নিম্নচাপের প্রভাবে আগামী তিন দিন রাজ্যের দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় ভারী বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

দুর্গাপুজোর আনন্দ মুহূর্তেই দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে সন্দেশখালির মানুষের কাছে। ঘূর্ণিঝড়ে ভিটেমাটি হারিয়ে এখন তাঁদের চোখ সরকারের ত্রাণ ও পুনর্বাসন ব্যবস্থার দিকে। প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে, দ্রুততম সময়ের মধ্যেই ক্ষতিপূরণের টাকা ও সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হবে।