দক্ষিণবঙ্গের চারটি কেন্দ্রের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের মাদারিহাট (Madarihat) কেন্দ্রও বিজেপির হাতছাড়া হয়েছে, যা তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য একটি বড় রাজনৈতিক সাফল্য। প্রথমবারের মতো মাদারিহাটে জয়ী হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) প্রার্থী জয়প্রকাশ টোপ্পা। প্রায় ২৮ হাজার ভোটের ব্যবধানে তিনি বিজেপির প্রার্থী রাহুল লোহাকে পরাজিত করেছেন। জয়প্রকাশ টোপ্পা মোট ৭৯ হাজার ১৮৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন, অন্যদিকে রাহুল লোহার প্রাপ্ত ভোট ছিল মাত্র ৫১ হাজার ১৮। এই ফলাফল তৃণমূলের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত, কারণ মাদারিহাটে এই প্রথম তাদের জয় অর্জিত হলো, যা বিজেপির দীর্ঘকালীন শক্ত ঘাঁটি ছিল।
২০১১ সালের পর উত্তরবঙ্গ ও জঙ্গলমহলে বিজেপির শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছিল, তবে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল এই অঞ্চলের হারানো জমি পুনরুদ্ধার করেছে। বিশেষ করে, লোকসভা নির্বাচনে কোচবিহার এবং জঙ্গলমহল এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেসের সাফল্য বিজেপির কাছে একটি বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়ায়। যদিও আলিপুরদুয়ারে বিজেপির ঘাঁটি অটুট ছিল, মাদারিহাটের এই জয় তৃণমূলের শক্তিশালী অগ্রগতি এবং জঙ্গলমহল ও উত্তরবঙ্গে তাদের প্রভাবের পুনঃপ্রতিষ্ঠা প্রমাণ করে।
এছাড়া, সাম্প্রতিক উপনির্বাচনে তৃণমূলের কৌশলও বিজেপিকে চাপে ফেলেছে। বিশেষ করে চা বলয়ের এলাকায় তৃণমূলের নানা উন্নয়নমূলক কার্যক্রম, যেমন পাট্টা বিলি, চা সুন্দরী প্রকল্পে বাড়ি তৈরি, এবং বন্ধ চা বাগান খুলে দেওয়ার উদ্যোগ, ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এই ধরনের উদ্যোগগুলির মাধ্যমে তৃণমূলের জনপ্রিয়তা বেড়েছে এবং বিজেপি তা ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে। তৃণমূলের রাজনৈতিক কৌশল মাদারিহাটে বড় ভূমিকা রেখেছে, যেখানে বাগান পিছু এলাকায় নেতাদের দায়িত্ব ভাগ করে তাদের সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করা হয়েছে।
কোচবিহারের সিতাই আসনেও তৃণমূল দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বজায় রেখেছে। সেখানে সম্প্রতি রাজনৈতিক কর্মসূচি বৃদ্ধি করে বুথ স্তরের সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করা হয়েছে। তৃণমূলের এই সংগঠনের শক্তি আজ তাদের নির্বাচনী সাফল্যের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। অন্যদিকে, বাঁকুড়ার তালডাংরায়ও তৃণমূলের জয়ের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। তৃণমূলের ক্রমবর্ধমান সাফল্য বিজেপির জন্য অবশ্যই চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে, বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার শিলিগুড়িতে বলেছেন, “উপনির্বাচনের ফলাফলে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। ২০২৬ সালে বিজেপি সরকার গঠন করবে।”
তবে, সাম্প্রতিক নির্বাচনী ফলাফল যে বিজেপির জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা একেবারেই স্পষ্ট। মাদারিহাটে তৃণমূলের বিজয়ের পাশাপাশি, তৃণমূল কংগ্রেসের দৃঢ় সংগঠন এবং কার্যক্রমের সাফল্য বিজেপির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে, যা আগামী নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে।