পরিযায়ী শ্রমিক নিগ্রহের প্রতিবাদে মেয়ো রোডে শশী পাঁজার নেতৃত্বে তৃণমূলের বিক্ষোভ

তৃণমূল কংগ্রেসের জাতীয় মুখপাত্র এবং রাজ্যের মন্ত্রী ড. শশী পাঁজার (Shashi Panja)নেতৃত্বে তৃণমূল মহিলা কংগ্রেস মায়ো রোডের গান্ধী মূর্তির সামনে একটি বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেছে…

Shashi Panja protest

তৃণমূল কংগ্রেসের জাতীয় মুখপাত্র এবং রাজ্যের মন্ত্রী ড. শশী পাঁজার (Shashi Panja)নেতৃত্বে তৃণমূল মহিলা কংগ্রেস মায়ো রোডের গান্ধী মূর্তির সামনে একটি বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেছে । এই প্রতিবাদের উদ্দেশ্য ছিল বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলোতে বাংলা ভাষী অভিবাসী শ্রমিকদের উপর নির্যাতন এবং গ্রেফতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ।

ড.পাঁজা এই ঘটনাকে “ভাষাগত সন্ত্রাস” হিসেবে অভিহিত করে বলেন, “এটি কোনো অনিচ্ছাকৃত ভুল নয়। এই ভাষাগত সন্ত্রাস বাংলা ভাষা এবং বাঙালি জনগণকে অপমান করার নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো এখন বাংলাদেশি ভাষা বোঝার জন্য দোভাষী চাইছে। বাংলা ভাষী মানুষের উপর এই ইচ্ছাকৃত হয়রানি একটি অপমান। তাদের এই চিঠি প্রত্যাহার করতে হবে এবং নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে।”

   

প্রতিবাদের পটভূমি

তৃণমূল কংগ্রেস দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে যে, বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলোতে যেমন ওড়িশা, মহারাষ্ট্র, দিল্লি, হরিয়ানা, রাজস্থান এবং আসামে বাংলা ভাষী অভিবাসী শ্রমিকদের উপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে।

তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, এই শ্রমিকরা বৈধ আধার কার্ড, ভোটার আইডি এবং প্যান কার্ডের মতো নথি দেখানো সত্ত্বেও তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। হয়রানি করা হচ্ছে এবং কখনো কখনো বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।

এই প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, সাংসদ মালা রায়, বিধাননগরের মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী এবং প্রিয়দর্শিনী হাকিম। তাঁরা একযোগে বিজেপির এই “ভাষাগত বৈষম্য” এবং “বাঙালি বিরোধী মনোভাব” এর নিন্দা করেন।

শশী পাঁজার বক্তব্য

ড. শশী পাঁজা তাঁর বক্তব্যে বলেন, “বাংলা ভাষী মানুষের উপর এই হয়রানি সাংবিধানিক অধিকারের লঙ্ঘন। বাংলা ভাষা ভারতের সংবিধানে স্বীকৃত একটি ভাষা, এবং আমাদের জাতীয় সঙ্গীত ও জাতীয় গানও বাংলায় রচিত। তবুও, বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলোতে বাংলা ভাষীদের বাংলাদেশি হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।

এটি শুধু অপমানজনক নয়, বরং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের উপর আঘাত।” তিনি আরও বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রায় ২২ লক্ষ শ্রমিক দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কাজ করছেন। তারা তাদের দক্ষতার জন্য নিয়োগ পান, কিন্তু শুধুমাত্র বাংলা ভাষায় কথা বলার কারণে তাদের হয়রানি করা হচ্ছে। এই নীতি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।”

টিএমসির ভাষাগত আন্দোলন

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ইস্যুকে “ভাষাগত সন্ত্রাস” হিসেবে অভিহিত করে একটি ভাষাগত আন্দোলনের সূচনা করেছেন। তিনি কলকাতার রাজপথে প্রতিবাদ মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং বিজেপির বিরুদ্ধে বাঙালি পরিচয় ও ভাষার উপর আক্রমণের অভিযোগ তুলেছেন।

Advertisements

তৃণমূলের দাবি, বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলোতে বাংলা ভাষীদের লক্ষ্য করে গ্রেফতার, জল ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা এবং জোরপূর্বক বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর মতো ঘটনা একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ। মমতা বলেন, “বাংলা ভাষায় কথা বললেই কেউ বাংলাদেশি হয়ে যায় না। পশ্চিমবঙ্গ ভারতের অংশ, এবং আমাদের নাগরিকদের অধিকার রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।”

বিজেপির পালটা অভিযোগ

বিজেপি নেতৃত্ব এই অভিযোগের জবাবে দাবি করেছে যে, তৃণমূল বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী এবং রোহিঙ্গাদের আড়াল করার জন্য বাঙালি পরিচয়ের এই আন্দোলন চালাচ্ছে। বিজেপির আইটি সেল প্রধান অমিত মালব্য দাবি করেন, “ওড়িশায় গ্রেফতার ৪৪৪ জনের মধ্যে ৩৩৫ জনের নথি জাল ছিল, যা তৃণমূল সরকারের দ্বারা জারি করা হয়েছে।”

তবে, তৃণমূল সাংসদ সমীরুল ইসলাম এই দাবির জবাবে বলেন, “আধার এবং ভোটার আইডি কেন্দ্রীয় সরকার জারি করে, রাজ্য সরকার নয়। বিজেপি বাঙালি বিরোধী মনোভাব প্রকাশ করছে।”

লাদাখে নতুন চোখাং বিহার মঠের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন দলাই লামার

আইনি ও সামাজিক পদক্ষেপ

তৃণমূল এই ঘটনাগুলোর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের করা হেবিয়াস কর্পাস মামলায় দিল্লি সরকারকে ছয়জন বাংলা ভাষী ব্যক্তির বাংলাদেশে প্রত্যর্পণের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। তৃণমূল নেতারা দাবি করেছেন, এই গ্রেফতার এবং প্রত্যর্পণ অসাংবিধানিক এবং অবৈধ। পশ্চিমবঙ্গ অভিবাসী কল্যাণ বোর্ডও ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের সহায়তা করছে।

শশী পাঁজার নেতৃত্বে তৃণমূল মহিলা কংগ্রেসের এই প্রতিবাদ বাঙালি পরিচয় ও ভাষার মর্যাদা রক্ষার লড়াইয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই আন্দোলন ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলের রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিজেপির বিরুদ্ধে ভাষাগত বৈষম্যের অভিযোগ এবং টিএমসির প্রতিবাদ ভারতের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভাষা ও পরিচয়ের গুরুত্ব তুলে ধরেছে।