স্কুলের জমি দখল করে পার্টি অফিস, তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ

পশ্চিমবঙ্গের রানীনগর বিধানসভার ডোমকলের ধুলাউড়ি অঞ্চলে স্কুলের জমি দখল করে দলীয় কার্যালয় নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় তীব্র ক্ষোভ ও…

TMC Accused of Seizing School Land to Build Party Office

পশ্চিমবঙ্গের রানীনগর বিধানসভার ডোমকলের ধুলাউড়ি অঞ্চলে স্কুলের জমি দখল করে দলীয় কার্যালয় নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় তীব্র ক্ষোভ ও সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করছেন, স্কুলের জমি দখল করে পার্টি অফিস বানানো হয়েছে, যা আইনত অবৈধ। যদিও তৃণমূল নেতাদের দাবি, ওই জমি স্কুলের নয়, বরং পিডব্লুডির খাস জমি, যেখানে পার্টি অফিস স্থাপন করা হয়েছে।

এটি কোনও নতুন ঘটনা নয়। পশ্চিমবঙ্গে শাসক দলের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ নতুন নয়, যেখানে ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারী সম্পত্তি দখল করা কিংবা বেআইনিভাবে দলীয় কার্যালয় স্থাপন করা হয়। তবে, স্কুলের মতো প্রতিষ্ঠানের জায়গা দখল করে দলীয় কার্যালয় তৈরি করাকে কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যাপক সমালোচনা ও অস্বস্তি তৈরি হয়েছে।

ঘটনাটি ডোমকলের ধুলাউড়ি এলাকার রাধাকান্তপুর এসএম মাদ্রাসা শিক্ষা কেন্দ্রের কাছাকাছি একটি জায়গায় ঘটেছে। অভিযোগ, স্কুলের মূল গেটের সন্নিকটে তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় কার্যালয় তৈরি করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, স্কুলের জমি এখনও স্কুলের নামে রেজিস্ট্রিকৃত। কিন্তু তৃণমূল নেতাদের মতে, এই জমি পিডব্লুডির খাস জমি এবং সেখানে পার্টি অফিস তৈরি করা হয়েছে।

এলাকার স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যের দাবি, ওই স্কুলে মোট ৯৪ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন। এই পরিস্থিতিতে, স্কুলের মূল গেটের সামনে পার্টি অফিস বানানোয় সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা তাদের নিয়মিত ক্লাসে যেতে বাধ্য হচ্ছেন না, এমনকি অভিভাবকরা এবং স্থানীয় বাসিন্দারাও এই কাজের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। স্কুলের জমিতে পার্টি অফিসের গড়ন তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

পাশাপাশি, তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের দাবি, এই জমি একসময় গভীর গর্ত ছিল এবং স্থানীয় মানুষদের বসার জায়গা ও কিছু সরকারি প্রকল্পের কাজ করার জন্য ঠিক করা হয়েছিল। পরবর্তীতে সেখানে পার্টি অফিস নির্মাণ করা হয়েছে। আসাদুল ইসলাম, যিনি বর্তমানে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য, তিনি জানান, এই জমি পুরোপুরি স্কুলের নয় এবং এটি পিডব্লুডির খাস জমি।

তিনি বলেন, “এটি সরকারি জমি ছিল, যেখানে কিছু সময়ের জন্য একটি পার্টি অফিস নির্মাণ করা হয়েছিল। যদি এটা স্কুলের জমি প্রমাণিত হয়, তবে দলীয় কার্যালয়টি সরিয়ে নেওয়া হবে বা ভেঙে দেওয়া হবে।” তবে, স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে সবার একই মত। তারা মনে করেন যে, স্কুলের জমি দখল করে পার্টি অফিস বানানো একেবারেই অনুচিত এবং এটি স্কুলের পরিবেশ ও শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

Advertisements

এমনকি ছাত্রছাত্রীরা এবং তাদের অভিভাবকরা নিয়মিত প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। স্থানীয়রা দাবি করছেন, এই ধরনের কর্মকাণ্ডে দলের আধিপত্য স্থাপনের জন্য অন্যায়ের পথ বেছে নেওয়া হচ্ছে, যা এলাকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করছে। এলাকার এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “স্কুলের জমি দখল করে পার্টি অফিস তৈরি করা অত্যন্ত দুঃখজনক। এই জমি শুধু স্কুলের জন্য নয়, ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দলের স্বার্থে এটি ব্যবহার করা উচিত নয়।”

তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য এই ঘটনা একটি নতুন অস্বস্তির জন্ম দিয়েছে। দলের অঙ্গীকার থাকা সত্ত্বেও এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় শাসক দলের সমর্থকরা এবং নেতারা বিরূপ প্রতিক্রিয়া পাচ্ছেন। অনেকেই মনে করছেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করে দলীয় কার্যক্রমকে এগিয়ে নেওয়া একটি অনৈতিক কাজ। যদিও কিছু তৃণমূল নেতা বিষয়টি অস্বীকার করছেন এবং দাবি করছেন যে, এটি সম্পূর্ণ বৈধ প্রক্রিয়ার অংশ।

প্রসঙ্গত, গত ১ নভেম্বর রানীনগরের বিধায়ক আব্দুল সৌমিক হোসেন নিজেই তৃণমূল কংগ্রেসের এই নতুন দলীয় কার্যালয়ের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এই পার্টি অফিস এলাকার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং তৃণমূল কংগ্রেসের নীতি ও আদর্শ প্রচারে সহায়ক হবে। তবে প্রশ্ন উঠছে, যদি স্কুলের জমি দখল করা হয়, তবে এটি কোথায় গিয়ে থামবে? সরকারি সম্পত্তি, বিশেষত স্কুলের মতো প্রতিষ্ঠানের জায়গা, সঠিকভাবে ব্যবহৃত হওয়া উচিত, না যে কোনো দলীয় স্বার্থে তা দখল করা হবে?

এটি একটি গুরুতর বিষয়, এবং স্থানীয় প্রশাসনকে এর মধ্যে হস্তক্ষেপ করে সত্যতা যাচাই করতে হবে। জনগণের অধিকার এবং স্কুলের পরিবেশ রক্ষার্থে প্রশাসনের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া। অন্যথায়, বিষয়টি আরও বিতর্কের সৃষ্টি করবে এবং এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বাড়াবে। এখন দেখতে হবে, কীভাবে তৃণমূল কংগ্রেস এবং স্থানীয় প্রশাসন এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করবে।