জনসংযোগে বেরিয়ে নর্দমায় পড়লেন তৃণমূল বিধায়ক! চোট পেয়েছেন পায়ে

প্রতিদিনের মতো জনসংযোগের কাজ করতে বেরিয়েছিলেন চুঁচুড়ার তৃণমূল বিধায়ক (TMC MLA) অসিত মজুমদার। কিন্তু সেদিনের কর্মসূচি তার জন্য এক অপ্রত্যাশিত বিপদ ডেকে এনেছিল। দুর্ঘটনাটি ঘটেছে…

TMC MLA Foot Injury

প্রতিদিনের মতো জনসংযোগের কাজ করতে বেরিয়েছিলেন চুঁচুড়ার তৃণমূল বিধায়ক (TMC MLA) অসিত মজুমদার। কিন্তু সেদিনের কর্মসূচি তার জন্য এক অপ্রত্যাশিত বিপদ ডেকে এনেছিল। দুর্ঘটনাটি ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার সকালে, যখন তিনি নিজের বিধানসভা কেন্দ্রের দেবানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় জনসংযোগ করতে গিয়ে একটি নর্দমার (Drain) স্ল্যাব ভেঙে পড়ে যান। দুর্ঘটনাটির পর তিনি কিছুটা সময় পা ফুলে যাওয়া এবং যন্ত্রণা নিয়েই কাজ চালিয়ে যান। কিন্তু যন্ত্রণা বাড়তে থাকলে বাধ্য হয়ে তিনি চিকিৎসকের কাছে যান, এবং এক্স-রে করে জানা যায়, পায়ের (Foot) হাড়ে চিঁড় ধরেছে।

দুর্ঘটনার বিস্তারিতঃ
এই দুর্ঘটনার সময় অসিত মজুমদার নিজের নির্বাচনী এলাকার লোকজনের অভাব-অভিযোগ শুনছিলেন। বিশেষত, ব্যান্ডেল কলাবাজার এলাকায় কিছু স্থানীয় বাসিন্দারা জল সরবরাহের সমস্যায় ভুগছিলেন। অভিযোগ শুনতে তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। যখন তিনি জনসংযোগে ব্যস্ত ছিলেন, তখন হঠাৎই একটি নর্দমার স্ল্যাব ভেঙে পড়ে এবং বিধায়কের পা ওই নর্দমার ভাঙা অংশে ঢুকে যায়। এই মুহূর্তে তার নিরাপত্তারক্ষীরা দ্রুত তাকে ধরে ফেলেন এবং দলের কর্মীরা দৌড়ে এসে তাকে সাহায্য করেন।

   

কিছুক্ষণের জন্য অসিত মজুমদার জনসংযোগ চালিয়ে যান, কিন্তু পায়ের যন্ত্রণা এবং ফুলে যাওয়া বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনি তার কাজ মাঝপথে থামিয়ে চিকিৎসকের কাছে যান। সেখানে এক অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে এক্স-রে করার পর জানা যায়, পায়ের ওই অংশে হাড়ে চিঁড় ধরেছে।

বিধায়কের মন্তব্যঃ
ঘটনার পর অসিত মজুমদার নিজেই তার অভিজ্ঞতা এবং দুর্ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “দেবানন্দপুর এলাকায় অবৈধ জলের সংযোগের কারণে মানুষজন জল পাচ্ছি না বলে অভিযোগ করছিলেন। আমি তাদের সমস্যা শুনছিলাম, হঠাৎ এক নর্দমার স্ল্যাব ভেঙে পড়ে গিয়ে আমি নিচে পড়ি।” তার মতে, এক্স-রে করার পর চিকিৎসক তাকে এক মাস বিশ্রামের পরামর্শ দিয়েছেন।

এছাড়া তিনি আরো জানান, “আমি সাধারণ মানুষের অভাব-অভিযোগ শুনতে বেরিয়েছিলাম, কিন্তু এই দুর্ঘটনা হয়ে গেল। তবে আমি কোনোভাবেই জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চাই না, তাই চিকিৎসা নিতে গিয়ে এক মাস বিশ্রাম নেওয়ার পর আবারো জনসংযোগ শুরু করব।”

‘দুয়ারে বিধায়ক’ কর্মসূচিঃ
এটি ছিল তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়কের ‘দুয়ারে বিধায়ক’ কর্মসূচির অংশ, যা তিনি গত নভেম্বর মাস থেকে শুরু করেছিলেন। তার লক্ষ্য ছিল, চুঁচুড়া বিধানসভা এলাকার সব মানুষকে কাছে পেয়ে তাদের সমস্যা ও অভাব জানার। বিশেষ করে, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে যে এলাকাগুলোতে শাসকদল পিছিয়ে ছিল, সেখানে তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষের সমস্যাগুলোর কথা শুনতে চান। এই কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর থেকেই তার বেশ কিছু এলাকায় জনসংযোগে যেতে হয়েছিল এবং স্থানীয়দের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছিল। কিন্তু বিধায়ক বারবার বলেছিলেন, এই ক্ষোভ কোনো রাজনৈতিক ব্যাপার নয়, বরং জনগণের অভাব-অভিযোগকে সামনে এনে তাদের সমস্যাগুলোর সমাধান করার এক চেষ্টা।

জনসংযোগের গুরুত্বঃ
বিধায়কের এই দুর্ঘটনাটি তার জনপ্রিয়তার সাথে সম্পর্কিত অনেক বিষয়কেও সামনে এনেছে। অসিত মজুমদার এর আগেও জনসংযোগের কাজ করতে গিয়ে জনগণের বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন। তার উদ্দেশ্য ছিল সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের প্রয়োজনীয় সেবা পৌঁছে দেওয়া, এবং তাদের অভিযোগের সমাধান করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া। কিন্তু এই দুর্ঘটনা তার শরীরী ক্ষতি করেছে, তা সত্ত্বেও তিনি পুনরায় মানুষের কাছে গিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রস্তুত।

এটি সরকারের জনপ্রতিনিধির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা প্রদান করছে, যেখানে তারা নাগরিকদের সমস্যা শুনতে গিয়ে নিজেদের শরীরের ক্ষতি হতে পারে, তবুও তারা তাদের কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। সাধারণ জনগণের প্রতি এক ধরণের দায়বদ্ধতা এবং খোলামেলা মনোভাব থেকেই তিনি এই কাজটি করেছিলেন।

তৃণমূলের দৃষ্টিভঙ্গিঃ
তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, অসিত মজুমদার তার নির্বাচনী এলাকা, বিশেষ করে চুঁচুড়া ও আশপাশের এলাকা নিয়ে যথেষ্ট দায়িত্বশীল। তিনি নিজেকে একজন প্রভাবশালী নেতা হিসেবে তুলে ধরে জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এই ধরনের দূর্ঘটনা অবশ্যই তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে এসেছে, কিন্তু তবুও তিনি আবারো উঠে দাঁড়িয়ে জনগণের কাছে পৌঁছানোর কাজ করবেন। এবং জনসংযোগের প্রতি তার এই অঙ্গীকারের মাধ্যমে সরকারের প্রতি জনমানুষের বিশ্বাস আরো দৃঢ় হবে।