১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে নয়াদিল্লি রেলওয়ে স্টেশনে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় পদপিষ্ট হয়ে অন্তত ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অনেক রেলযাত্রী। মৃতদের মধ্যে ১৪ জন মহিলা এবং ২ জন শিশু রয়েছেন। রেলের ১৪ এবং ১৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মে যখন এই ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি ঘটে, তখন সেখানে প্রচণ্ড উত্তেজনা এবং দৌড়াদৌড়ি চলছিল, যার ফলে যাত্রীরা পদপিষ্ট হন।
ঘটনার পেছনে একটি বড় কারণ হিসেবে উঠে এসেছে প্ল্যাটফর্ম পরিবর্তনের ভুল ঘোষণা, যার কারণে যাত্রীদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল। তবে একাধিক সূত্রে জানা যাচ্ছে, এই দুর্ঘটনার পেছনে সিঁড়ি দিয়ে পিছলে পড়ার ঘটনাও দায়ী। উত্তর রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক হিমাংশু শেখর জানিয়েছেন, মগধ এক্সপ্রেস যখন ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে ছিল, তখন সিঁড়ি দিয়ে একজন যাত্রী পিছলে পড়েন। এর ফলে কয়েকজন যাত্রী আহত হন এবং এই দুর্ঘটনা ঘটে। তিনি আরও জানান, দুর্ঘটনার পর উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে তদন্তের জন্য।
অন্যদিকে, তৃণমূল নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে এই ঘটনায় বিজেপিকে খোঁচা দিয়েছেন। তিনি লেখেন, “ভুলিস কেন, হায়রে মানুষ! সিংহাসনে পদ্মফুল; তাই তো রে তুই অকাল-চিতায়, পূণ্যলোভী যাত্রীকূল!” দেবাংশুর এই পোস্টে তিনি পাল্টা আক্রমণ করেছেন বিজেপির প্রতি, যা অনেকেই রাজনীতি বা প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনার ফল বলে মনে করছেন।
এছাড়া, এই দুর্ঘটনার পর অনেকেই প্রশাসনের দিকে আঙুল তুলেছেন। অভিযোগ উঠেছে যে, পুলিশ ঘটনাস্থলে অনেক দেরিতে পৌঁছেছিল, এবং যাত্রীদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ার আগে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। দিল্লি পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করা হচ্ছে এবং ঘটনার সঠিক কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এছাড়া, কর্তৃপক্ষ তদন্তের অংশ হিসেবে একাধিক সম্ভাব্য কারণ নিয়ে অনুসন্ধান করছে, বিশেষত প্ল্যাটফর্ম পরিবর্তনের সময় ঘটে যাওয়া ভুল ঘোষণার বিষয়টি। আর কিছু রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, দুর্ঘটনার কারণ সিঁড়িতে একজন যাত্রীর পিছলে পড়া ছিল। তবে এসব কারণের কোনো একটি চূড়ান্ত ব্যাখ্যা পাওয়ার জন্য এখনো তদন্ত চলমান।
এই দুর্ঘটনা দিল্লির ইতিহাসে এক ভয়ানক দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে, যেখানে একদিকে যেমন মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে, তেমনি প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন উঠেছে। রেলযাত্রীদের নিরাপত্তা এবং রেল স্টেশনে আরও ভালো ব্যবস্থাপনা নিয়ে সরকারের তরফ থেকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা তীব্র হচ্ছে।
বিশ্বস্ত সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে যে, রাজ্য সরকারও বিষয়টি নিয়ে মনোযোগী হয়ে উঠেছে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গেও এই ঘটনার পর তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন রাজনীতিক এবং সমাজকর্মী এই ঘটনার সমালোচনা করেছেন, যা কিছুটা হলেও প্রশাসনকে চাপে ফেলেছে।