প্রকাশ্যে তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষ, মহিলা নেত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ দলীয় নেতার বিরুদ্ধে

সিউড়ি: কসবা-কাণ্ডের তদন্তের রেশ কাটতে না কাটতেই এবার বীরভূমে তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) গোষ্ঠী সংঘর্ষের জেরে ফের উত্তাল রাজনৈতিক মহল। এবার অভিযোগ খোদ দলেরই এক মহিলা…

প্রকাশ্যে তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষ, মহিলা নেত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ দলীয় নেতার বিরুদ্ধে

সিউড়ি: কসবা-কাণ্ডের তদন্তের রেশ কাটতে না কাটতেই এবার বীরভূমে তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) গোষ্ঠী সংঘর্ষের জেরে ফের উত্তাল রাজনৈতিক মহল। এবার অভিযোগ খোদ দলেরই এক মহিলা নেত্রীর বিরুদ্ধে। সিউড়ি ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী অভিযোগ করেছেন, রাস্তার মাঝে তাঁকে শ্লীলতাহানি করা হয়েছে।

পঞ্চায়েত সমিতির কাজের সূত্রে দলের অন্য নেতাদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন তিনি। অভিযোগ, সেই সময়ই কয়েকজন তৃণমূল (TMC) নেতা তাঁর উপরে চড়াও হন। অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেছেন, ওড়না ধরে টানাটানি, মারধর এমনকি তাঁর গলায় ফাঁস লাগানোর চেষ্টাও করা হয়। তাঁর সঙ্গে থাকা এক তৃণমূল কর্মী বাধা দিতে গেলে তাকেও ব্যাপক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। বর্তমানে সেই কর্মী সিউড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

   

ঘটনার বিবরণ অনুযায়ী, রবিবার এক তৃণমূল (TMC) নেতা তাঁকে কিছু কাগজে সই করার জন্য ডাকেন। ওই নেতা ব্লক সভাপতি নুরুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ বলে জানা গেছে। সই করার সময়ই হঠাৎই অন্য গোষ্ঠীর নেতারা এসে ওই নেত্রী ও তাঁর সঙ্গী কর্মীর উপর চড়াও হন বলে অভিযোগ। রাস্তার মাঝেই শুরু হয় অপমান, টানাহেঁচড়া এবং শারীরিক নির্যাতন।

তৃণমূল (TMC) নেত্রীর দাবি, তাঁকে অপমান করার পাশাপাশি তাঁর চরিত্র নিয়েও কুরুচিকর মন্তব্য করা হয়। তিনি প্রতিবাদ করতেই হামলা আরও বেড়ে যায়। এক পর্যায়ে তাঁর ওড়না খুলে গলায় ফাঁস লাগানোর চেষ্টা করা হয়। প্রাণে রক্ষা পেয়ে কোনোক্রমে সেখান থেকে পালিয়ে বাঁচেন তিনি।

অন্যদিকে, অভিযুক্ত গোষ্ঠীর নেতারা অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘আমরা কি পাগল যে দিনের বেলা কাউকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যাব? এই সব অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’’

এই ঘটনায় রাজনৈতিক তরজাও শুরু হয়েছে। বিজেপির বীরভূম জেলা নেতা জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তৃণমূলের (TMC) মুষলপর্ব শুরু হয়েছে। এবার রাজ্যে তৃণমূল অতীত হয়ে যাবে।’’ তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘‘যখন বিজেপি প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিতে গিয়েছিল, তখনই নুরুল বাহিনীর হাতে আক্রান্ত হতে হয়েছিল আমাদের কর্মীদের। এবার তৃণমূল নিজেরাই নিজেদের মারছে।’’

Advertisements

এদিকে, এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছে। সিউড়ি থানায় দায়ের হয়েছে লিখিত অভিযোগ। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযোগকারিণী এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, সিউড়ি ২ নম্বর ব্লকে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নতুন কিছু নয়। দীর্ঘদিন ধরেই ব্লক সভাপতি নুরুল ইসলাম অনুগামী এবং বিরোধী গোষ্ঠীর মধ্যে রেষারেষি চলছিল। এই ঘটনা সেই পুরনো দ্বন্দ্বেরই ধারাবাহিকতা বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

তবে এই ঘটনার ফলে দলীয় অস্বস্তি বেড়েছে বইকি। মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী শিবির। পাশাপাশি, তৃণমূল নেতৃত্বের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পঞ্চায়েত স্তরে এই ধরনের গোষ্ঠী সংঘর্ষ ভবিষ্যতে দলের সাংগঠনিক শক্তিকে আরও দুর্বল করে তুলতে পারে।