দুর্গাপুজোর আগেই বড়সড় সাংগঠনিক রদবদলের পথে হাঁটল তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)। শনিবার সন্ধ্যায় এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট দিয়ে দলীয় নেতৃত্ব জানাল, একাধিক সাংগঠনিক জেলায় নতুন সভাপতি বেছে নেওয়া হয়েছে। হাওড়া গ্রামীণ, হুগলির শ্রীরামপুর, আরামবাগ, পূর্ব বর্ধমান, বাঁকুড়া এবং বিষ্ণুপুরে যুব, মহিলা, শ্রমিক ও মূল সংগঠনে টাউন ও ব্লক স্তরে দায়িত্ব বদলের ঘোষণা করা হয়েছে।
এই সাংগঠনিক রদবদলকে সামনে রেখে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের বার্তা স্পষ্ট— আগামী ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আগেভাগেই সংগঠনকে শক্তপোক্ত করে নেওয়া হবে। ২০২১ সালের নির্বাচনে তৃণমূল বিপুল জয় পেলেও এ বার লক্ষ্য আরও বড়— একুশের চেয়ে বেশি আসন জয়। সেই লক্ষ্য পূরণে জেলা থেকে ব্লক স্তর পর্যন্ত কার্যকর ও জনপ্রিয় নেতাদের দায়িত্বে আনা হচ্ছে।
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই বারবার বলেছেন, “কাজের লোকই অগ্রাধিকার পাবেন।” তাই গ্রহণযোগ্যতা ও পারফরম্যান্সই নেতৃত্ব নির্বাচনের মূল ভিত্তি। এদিন প্রকাশিত তালিকায় দেখা গিয়েছে, দীর্ঘদিন দায়িত্ব সামলানো বহু নেতাকে সরিয়ে আনা হয়েছে তরুণ, সক্রিয় ও সংগঠনে পরিশ্রমী মুখদের।
এক্স পোস্টে দল জানায়, শুধু নতুন দায়িত্বপ্রাপ্তদের শুভেচ্ছা নয়, বিদায় নেওয়া নেতাদের অবদানকেও সম্মান জানানো হয়েছে। হাওড়া গ্রামীণের ৮টি টাউন ও ব্লক সংগঠনে রদবদল হয়েছে। একইভাবে হুগলির শ্রীরামপুর, আরামবাগ, পূর্ব বর্ধমান, বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুরে নতুন সভাপতিদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
রাজনৈতিক মহলের মতে, পুজোর আগেই এই পরিবর্তন আনতে চাইছে তৃণমূল, যাতে উৎসবের পরপরই নতুন নেতৃত্ব সক্রিয়ভাবে নির্বাচনী প্রস্তুতিতে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। উৎসবের কারণে কোথাও কাজ আটকে না গিয়ে, মহালয়ার আগেই এই রদবদল করে দিল দল।
রাজ্য রাজনীতিতে এই পরিবর্তনের গুরুত্ব অনেক। বিশেষত, যেসব জেলায় বিজেপি ২০২১-এ ভাল ফল করেছিল, সেখানে নতুন নেতৃত্ব দিয়ে জনসংযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করছে তৃণমূল। অন্যদিকে, যেখানে দল শক্তিশালী, সেখানে আরও সংগঠিত করার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
এই সাংগঠনিক রদবদলের মাধ্যমে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এক নতুন ধারা প্রতিষ্ঠা পেল— যেখানে পদ দেওয়া হচ্ছে কর্মীর যোগ্যতা অনুযায়ী, শুধু পুরনো সম্পর্ক বা প্রভাবশালী হওয়ার ভিত্তিতে নয়।
সব মিলিয়ে, পুজোর আগেই নতুন দায়িত্বপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করে কার্যত নির্বাচনের ময়দানে নামল তৃণমূল কংগ্রেস। আগামী দিনে এই পরিবর্তন কতটা ফলপ্রসূ হয়, তার দিকেই এখন তাকিয়ে রাজ্য রাজনীতি।