বাম আমলের মতো আবারও শিরোনামে উত্তরের ‘আমলাশোল’ ভূঁইয়াপাড়ার করুণ কথা

শংকর দাস, বালুরঘাট : বাস্তব বড়ই কঠিন, আর তা যে সত্যিই সেটা আবারও চোখে আঙ্গুল দিয়ে দিয়েছে রবি সুনীল ও বিশাল তিন ভাই। পিতামাতাহীন এই…

শংকর দাস, বালুরঘাট : বাস্তব বড়ই কঠিন, আর তা যে সত্যিই সেটা আবারও চোখে আঙ্গুল দিয়ে দিয়েছে রবি সুনীল ও বিশাল তিন ভাই। পিতামাতাহীন এই তিন শিশুর ভগবানই ভরসা। বাড়ি বা আস্তানা বলতে ছেড়া প্লাস্টিকের অসংখ্য ছিদ্রযুক্ত সামান্য চালা মাত্র। সেই আস্তানার সামনে মাটির ভাঙা উনুন থাকলেও বহুদিন তাতে আগুন ধরে নাই। শীত গ্রীষ্মে একপ্রকার এমনই উন্মুক্ত চালার তলায় বেঁচে রয়েছে তারা তিনজন। অত্যন্ত করুণ বাস্তব এই ঘটনা দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জের অন্তর্গত ভূঁইয়াপাড়ার।

মেদিনীপুরেরর আমলাশোলের মতো বাম আমলে দক্ষিণ দিনাজপুরের যে ভূঁইয়াপাড়ার অসহায়তার কথাও একাধিকবার সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছিল। বাম আমলে অনাহার ক্লিষ্ট এই গ্রামেও অপুষ্টিতে বহু মানুষের মৃত্যু ঘটেছিলো। যেখানে ছিল না সামান্য পানীয় জলেরও ব্যবস্থা। গ্রামের মাঝে অবস্থিত পঁচা পুকুরের জলই ছিল বাসিন্দাদের জীবন। এবার আবারও সেই ভূঁইয়াপাড়ার তিন শিশুর করুণ কাহিনী।

   

মা ভগবতী ভূঁইয়া অপুষ্টি অনাহারে বেশ কয়েকমাস আগে মারা গেছেন। এমতাবস্থায় নেশাখোর পিতা বাবলু ভূঁইয়া ভিন রাজ্যে কাজে যাওয়ার নামে শিশু তিনটিকে ফেলে রেখে নিরুদ্দেশ হয়ে গেছেন। তারপর থেকে অনাথ অসহায় অবস্থায় কোন ভাবে বেঁচে রয়েছে তারা।

বড় ও মেজো ভাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যথাক্রমে দ্বিতীয় এবং প্রথম শ্রেণীতে পড়ে। স্কুল খোলা থাকলে তবুও মিডডে মিলে একবেলার খাবার জোটে। কিন্তু যে দিনগুলিতে স্কুল বন্ধ থাকে বেশির ভাগই সেদিনে অভুক্ত অনাহারে কাটাতে হয়। শিশু তিনটির মধ্যে বড় ভাইয়ের বয়স মাত্র সাত, মেজর বয়স পাঁচ এবং ছোটটির মাত্র একবছর দুই মাস। রাধানগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠরত দুই ভাই ছোট্ট বিশালকে কোলে করে স্কুলে নিয়ে গিয়ে একসাথে মিডমিলের খাওয়ারে পেটের খিদে মেটায়। স্কুল চলাকালীন সময়ে শিক্ষক শিক্ষিকারা তাঁদের সাধ্যমতো দেখভাল করলেও ছুটির পর বা বন্ধের দিন গুলিতে তারা একেবারেই অনাথ।। নিদারুন অসহায় অবস্থাতেও রবি ও সুনীল কিন্তু স্বপ্ন দেখে যে লেখা শিখে বড় হয়ে তারা চাকরি করবে ও দেশের সেবা করবে।

ভূঁইয়াপাড়ার বাসিন্দাদের সকলেরোই অর্থনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত করুণ। ৯০ শতাংশ পরিবারের পুরুষরা ভিনরাজ্যে শ্রমিকের কাজ করেন। বাকিরা চুল্লু বা নেশা করে বা অসুস্থ অবস্থায় গ্রামেই পড়ে আছেন। মহিলারা কোন ভাবে শাকপাতা রেঁধে সন্তানদের খিদে মেটানোর চেষ্টা করেন। এই পরিস্থিতিতে তাঁদের পক্ষে আর অনাথ তিন শিশুর দেখভাল হয়ে ওঠে না।

রাধানগর প্রা: বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকা ও এলাকার বাসিন্দাদের সকলেরই আবেদন প্রশাসন শিশু তিনটির দায়িত্ব নিয়ে তাদের অসহায়তা দূর করে বড় করে তুলবে।