পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহলে নতুন বিতর্কের সূচনা করেছে বিজেপি নেতা তথাগত রায়ের (Tathagata Roy) এক্স হ্যান্ডেলের একটি পোস্ট। তাঁর এক্স হ্যান্ডেল র সাম্প্রতিক বিবৃতিতে তিনি দাবি করেছেন যে, নতুন রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য যতই মুসলিম সম্প্রদায়ের তোয়াজ করুন না কেন, বিজেপি কখনোই মুসলিম ভোট পাবে না। তথাগত (Tathagata Roy)দাবি করেছেন বর্তমানে তৃণমূল এবং পূর্বে সিপিএম এবং কংগ্রেসের আমলে মুসলিমদের যে তোষণ হয়েছে বা হচ্ছে তার নিরিখে মুসলিম ভোটের তালিকায় আর যেই থাকুক বিজেপি নেই।
তাঁর এই মন্তব্যে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। তথাগত রায়ের মতে, বিজেপি ভারতীয় মুসলমানদের বিরুদ্ধে কোনো যুদ্ধে নামেনি। তবে, অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশকারী বাংলাদেশী মুসলমানদের ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার এবং ভারতের মাটি থেকে নিষ্কাশনের প্রক্রিয়া বিজেপি অব্যাহত রাখবে।
এই বিষয়টি তিনি (Tathagata Roy) স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন।তথাগত রায় তাঁর মন্তব্যে রাজনৈতিক বাস্তবতার উপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, “কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া মুসলমানরা কখনোই বিজেপিকে ভোট দেয়নি এবং ভবিষ্যতেও দেবে না। এটা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট।” তাঁর যুক্তি, তৃণমূল কংগ্রেস এবং অতীতে কংগ্রেস ও সিপিএম মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি যে নির্লজ্জ পক্ষপাতিত্ব দেখিয়েছে, তাতে তাঁরা বিজেপির মতো একটি সর্বধর্মসমভাবের নীতি প্রচারকারী দলকে কেন ভোট দেবে?
তিনি (Tathagata Roy) উদাহরণ হিসেবে শফিকুল ইসলাম, আলী হোসেন বা কাজী মাসুম আখতারের মতো ব্যক্তিদের কথা উল্লেখ করেছেন, যাঁরা বিজেপির প্রতি সমর্থন দেখালেও নিয়ম নয়, বরং ব্যতিক্রম।তথাগত রায় তাঁর বিবৃতিতে আরও বলেন, শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, সারা বিশ্বেই বাঙালি হিন্দু জনগোষ্ঠী বিলুপ্তির পথে।
এই জনগোষ্ঠী, যারা স্বামী বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মতো মনীষীদের জন্ম দিয়েছে, তাদের বিলুপ্তি থেকে রক্ষা করতে পারে কেবল পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি। তাঁর মতে, এই প্রক্রিয়ায় মুসলিম সম্প্রদায়ের কোনো স্বার্থ নেই, তাই তারা বিজেপিকে ভোট দেবে না। তিনি দলের কিছু নেতার মধ্যে একটি ‘আশার বিরুদ্ধে আশা’র মানসিকতার সমালোচনা করেছেন।
তথাগত বলেছেন (Tathagata Roy) এই নেতারা মনে করেন, মুসলিম সম্প্রদায়কে তোয়াজ করলে বা অন্য কোনো পন্থা অবলম্বন করলে তারা বিজেপিকে ভোট দিতে পারে। তথাগত রায়ের পরামর্শ, নতুন সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য যত তাড়াতাড়ি এই মানসিকতা থেকে দলকে মুক্ত করতে পারবেন, ততই দলের মঙ্গল হবে।
এই মন্তব্য রাজ্য রাজনীতিতে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। বিজেপির অভ্যন্তরীণ মহলে এই বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। একদিকে, দলের একাংশ তথাগত রায়ের স্পষ্টবাদিতাকে সমর্থন করছে। তারা মনে করে, বিজেপির মূল ভোটব্যাঙ্ক হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে রয়েছে এবং মুসলিম ভোটের পিছনে সময় নষ্ট না করে হিন্দু জনগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষায় মনোযোগ দেওয়া উচিত।
অন্যদিকে, দলের আরেকটি অংশ মনে করে, মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি অংশের সমর্থন পাওয়া সম্ভব, বিশেষ করে যারা উন্নয়ন ও সুশাসনের প্রতি আকৃষ্ট হতে পারে।তৃণমূল কংগ্রেস এই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছে। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে “তথাগত রায়ের মন্তব্য বিজেপির বিভাজনকারী রাজনীতির প্রতিফলন।
তারা (Tathagata Roy) সবসময় সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে চায়। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী, এবং বিজেপির এই মানসিকতা কখনোই এখানে গ্রহণযোগ্য হবে না।” সিপিএমও এই বিষয়ে বিজেপির সমালোচনা করে বলেছে, “এই ধরনের মন্তব্য দেশের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রের উপর আঘাত।”রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তথাগত রায়ের এই মন্তব্য পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির কৌশলের উপর প্রশ্ন তুলেছে।
তারা বলছেন (Tathagata Roy) একদিকে, বিজেপি রাজ্যে তাদের ভোটের ভিত্তি প্রসারিত করতে চাইছে। অন্যদিকে, তথাগত রায়ের মতো নেতাদের মন্তব্য দলের ইমেজের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে, পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে, যেখানে মুসলিম ভোটাররা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, এই ধরনের মন্তব্য দলের সম্ভাবনাকে আরও সংকুচিত করতে পারে।
ব্যারাকপুর পর্যন্ত ছুটবে কি মেট্রো? চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আজ বৈঠকে
শমীক ভট্টাচার্যের (Tathagata Roy) নেতৃত্বে বিজেপি এখন একটি কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি। দলের নতুন সভাপতি হিসেবে তাঁর কাছে চ্যালেঞ্জ হলো, কীভাবে দলের মূল ভোটব্যাঙ্ককে ধরে রেখে নতুন ভোটারদের আকর্ষণ করা যায়। তথাগত রায়ের মন্তব্য এই চ্যালেঞ্জকে আরও জটিল করে তুলেছে। তবে, কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, এই ধরনের মন্তব্য বিজেপির মূল সমর্থকদের মধ্যে উৎসাহ সৃষ্টি করতে পারে, যারা দলের হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডার প্রতি আকৃষ্ট।