পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহলে এই মুহূর্তে সর্বাধিক আলোচ্য ইস্যু হল ভিন রাজ্যে বাঙালিদের হেনস্থা (Suvendu)। এর প্রতিবাদে সরব হয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় গতকাল করেছেন প্রতিবাদ মিছিল। যে মিছিলে অভিষেক বন্দোপাধ্যায় থেকে শুরু করে ছিলেন তৃণমূলের তাবড় নেতারা। এর মধ্যেই রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আরও একবার মমতাকে লক্ষ করে আক্রমণ শানিয়েছেন।
শুভেন্দু অধিকারী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এবার জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। তিনি দাবি করেছেন যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের আশ্রয় দিয়ে এবং তাঁদের জন্য ভুয়ো আধার কার্ড ও ভোটার আইডি তৈরি করে ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি করছেন, যা দেশের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে।
ঠিক এক ই প্রসঙ্গে তথাগত রায় বলেছেন পূর্ব বঙ্গে যারা হাজার হাজার হিন্দুকে খুন করেছে, মহিলাদের ধর্ষণ করেছে মমতা তাদেরকেই আশ্রয় দিচ্ছেন বাংলার মাটিতে। শুধু মাত্র রাজনৈতিক খেলা খেলে এবং হিন্দুদের ভোটের লোভে বাঙালি হেনস্থা বলে ইস্যু কে ঘোরাতে চাইছেন।
২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে শুভেন্দুর এই বক্তব্য রাজ্য রাজনীতিতে সমালোচনাকে উস্কে দিয়েছে। শুভেন্দু অধিকারী সম্প্রতি একটি সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গাদের জন্য মায়াকান্না করছেন। ২০১৭ সালে তাঁর সমাজ মাধ্যমে একটি পোস্ট থেকে এটা ভীষণ ভাবে স্পষ্ট হয়েছিল।
শুভেন্দু বলেছেন এই পোস্টার মাধ্যমে বোঝা যায় সেই সময় থেকেই মমতা এই রোহিঙ্গা বাঁচাও এজেন্ডা শুরু করেছেন। বছরের পর বছর ধরে তিনি এই অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের জন্য লাল গালিচা বিছিয়েছেন। ভুয়ো আধার কার্ড, ভোটার আইডি দিয়ে তাঁদের ভোটব্যাঙ্কে পরিণত করেছেন। পশ্চিমবঙ্গকে রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল বানানোর পাশাপাশি তিনি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে আপস করেছেন।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ জঙ্গি হামলার কথা, যেখানে ২৬ জন নিরীহ হিন্দু নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। এই ঘটনার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন যে, এটি কেন্দ্রীয় সরকারের এখতিয়ারের বিষয়।
শুভেন্দু প্রশ্ন তুলে বলেন, “তাহলে রোহিঙ্গা ইস্যু, যা একইভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে, তাতে মমতা এত উৎসাহ দেখাচ্ছেন কেন? এটা তাঁর নোংরা রাজনীতি এবং দ্বৈত নীতির প্রমাণ। এই দ্বৈত চরিত্র পশ্চিমবঙ্গ এবং গোটা ভারতের জন্য অভিশাপ।”
রোহিঙ্গা ইস্যু পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি স্পর্শকাতর বিষয়। শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছেন যে, বিহারে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সমীক্ষার (এসআইআর) সময় লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীর নাম পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, “বিহারে যদি ৩০ লক্ষ মানুষের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ যায়, তাহলে পশ্চিমবঙ্গে কমপক্ষে ৯০ লক্ষ মানুষের নাম বাদ যাবে। এই রাজ্যেও এসআইআর করা জরুরি।” তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, মমতা সরকার রোহিঙ্গাদের ভুয়ো নথি সরবরাহ করে তাঁদের ভোটার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে, যা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি।
অন্যদিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই অভিযোগের জবাবে বলেছেন, বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলাভাষী মানুষদের রোহিঙ্গা বলে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তিনি কলকাতায় একটি বিক্ষোভ মিছিলে বলেন, “২২ লক্ষ বাঙালি প্রবাসী বৈধ পরিচয়পত্র নিয়ে বিভিন্ন রাজ্যে বসবাস করছেন। তাঁদের রোহিঙ্গা বলে অপমান করা হচ্ছে। আমি বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ করছি, প্রমাণ করুন তারা রোহিঙ্গা।” তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, বিজেপি ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের ভিত্তিতে বাঙালিদের উপর হেনস্থা করছে।
এই বিতর্ক ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাঙালি অস্মিতার প্রশ্ন তুলে ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা করছেন, যেখানে শুভেন্দু অধিকারী জাতীয় নিরাপত্তা ও অনুপ্রবেশের ইস্যুকে সামনে রেখে তৃণমূলের বিরুদ্ধে জনমত তৈরির চেষ্টা করছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ইস্যু আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে বড় ভূমিকা পালন করবে।
শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাল্টা জবাবে রোহিঙ্গা ইস্যু এখন পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে। জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে দুই শিবিরের মধ্যে তীব্র বাকযুদ্ধ চলছে। তবে, এই অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের মাঝে সত্যতা যাচাইয়ের প্রয়োজন রয়েছে।
দাম্পত্যে টানাপোড়েন? পডকাস্টে যা বললেন মিশেল ও বারাক ওবামা
রোহিঙ্গাদের ভুয়ো নথি দেওয়ার বিষয়ে কোনও কঠিন প্রমাণ এখনও সামনে আসেনি, এবং পহেলগাঁও হামলার সঙ্গে এই ইস্যুর যোগসূত্রও অস্পষ্ট। তবে, এই বিতর্ক রাজ্যের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলকে আরও জটিল করে তুলেছে, এবং আগামী দিনে এর প্রভাব আরও স্পষ্ট হবে।