বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu) কনভয়ে কোচবিহারের খাগড়াবাড়ি এলাকায় হামলার ঘটনায় তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। শুভেন্দু অধিকারী এই হামলার জন্য সরাসরি রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী ও দিনহাটার তৃণমূল বিধায়ক উদয়ন গুহ এবং কোচবিহারের পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্যকে দায়ী করেছেন।
তিনি অভিযোগ করেছেন, এই হামলা তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। শুভেন্দু আরও দাবি করেছেন যে, উদয়ন গুহ এবং পুলিশ সুপারের মদতে ‘রোহিঙ্গা বাহিনী’ এই হামলা চালিয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, তিনি প্রাক্তন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের বুলেটপ্রুফ গাড়িতে ছিলেন, যে গাড়িটি হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে। এই ঘটনায় তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার দুপুরে কোচবিহারের খাগড়াবাড়ি এলাকায় শুভেন্দু অধিকারীর কনভয়ে হামলার ঘটনা ঘটে। বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকরা কালো পতাকা নিয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতে দিতে এই হামলা চালিয়েছে। হামলাকারীরা ইট, পাথর এবং লাঠি দিয়ে কনভয়ের গাড়িতে ভাঙচুর চালায়, যার ফলে গাড়ির কাচ ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।
শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছেন, “এটি একটি প্রাণঘাতী হামলা ছিল। উদয়ন গুহ সরাসরি এই আক্রমণের জন্য দায়ী। কোচবিহারের পুলিশ সুপারের মদতেই এই হামলা সংঘটিত হয়েছে। বুলেটপ্রুফ গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে।” তিনি আরও দাবি করেছেন যে, রোহিঙ্গাদের সামনে রেখে এই হামলা পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে।
এই ঘটনার পটভূমিতে জানা যায়, শুভেন্দু অধিকারী কোচবিহারের পুলিশ সুপারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছিলেন। কলকাতা হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চের নির্দেশে তিনি এই সাক্ষাতের জন্য সময় পেয়েছিলেন। বিজেপির কালচিনির বিধায়ক বিশাল লামা এই সাক্ষাৎ নিশ্চিত করতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন।
তবে, শুভেন্দুর কর্মসূচির কথা আগে থেকেই জানা ছিল, এবং তৃণমূল কংগ্রেসও একই সময়ে কোচবিহারের ১৯টি স্থানে পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল। তৃণমূলের দাবি, বিজেপি শিলিগুড়িতে তাদের ২১ জুলাইয়ের কর্মসূচির বিরোধিতা করায় তারা এই পাল্টা কর্মসূচি নিয়েছিল।
তৃণমূল নেতা উদয়ন গুহ এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, “যাঁরা বাংলা ভাষাকে অপমান করে, তাঁদের নিস্তার নেই। মানুষ তাঁদের কালো পতাকা দেখাবেই। শুভেন্দু যেখানেই যাবেন, সেখানেই আমাদের কর্মীরা বিক্ষোভ দেখাবে।” তিনি এই হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছেন যে, তৃণমূল শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করছিল, এবং বিজেপি কর্মীদের উপর হামলার চেষ্টা করায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
বিজেপির পক্ষ থেকে এই ঘটনাকে ‘হত্যার চক্রান্ত’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছেন, “তৃণমূল পুলিশের সহায়তায় শুভেন্দু অধিকারীর উপর হামলার চেষ্টা করেছে।” তিনি আরও অভিযোগ করেছেন যে, পুলিশ হামলাকারীদের আটকাতে ব্যর্থ হয়েছে। এই ঘটনায় পুলিশ কোনওরকমে শুভেন্দুর কনভয়কে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে নিয়ে যায়।
এই হামলার ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করেছে। বিজেপি এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদের ডাক দিয়েছে, এবং শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছেন যে, তারা এই হামলার বিরুদ্ধে আইনি ও রাজনৈতিকভাবে লড়াই চালিয়ে যাবেন।
এই ঘটনা কোচবিহারের রাজনৈতিক সহিংসতার ইতিহাসের সঙ্গে মিলে যায়, যেখানে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পরও উদয়ন গুহ নিজে হামলার শিকার হয়েছিলেন। তখন তৃণমূল বিজেপিকে এই হামলার জন্য দায়ী করেছিল।
চুক্তি জটেই থমকে আইএসএল! FSDL ও ফেডারেশনের কাছে বড় আর্জি তারকা ফুটবলারের
এই ঘটনা রাজ্যের রাজনৈতিক পরিবেশে নতুন উত্তেজনা যোগ করেছে। বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ এবং বিক্ষোভের মধ্যে কোচবিহারে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এই ঘটনার তদন্ত এবং আইনি প্রক্রিয়া কী দিকে যায়, তা দেখার বিষয়।