পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মঞ্চে একটি বিতর্কিত ইস্যু আবারও সামনে এসেছে (Suvendu)। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছেন যে, কলকাতার উপকণ্ঠে বাগুইআটি এবং নিউ টাউন রাজারহাট এলাকা অবৈধ বাংলাদেশি মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেছেন যে, তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি)-এর স্থানীয় নেতৃত্বের সহযোগিতায় এই অনুপ্রবেশকারীরা জাল ভারতীয় পরিচয়পত্র এবং নথি তৈরি করে ভোটার তালিকায় নাম তুলেছে।
এই দাবি তিনি সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন, যেখানে তিনি জ্যাংড়া-হাতিয়াড়া ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘুনি এলাকার একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন। তাঁর মতে, এই অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরা তৃণমূলের ২১ জুলাই শহিদ দিবসের সমাবেশসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে দলের ভোট ব্যাঙ্ক হিসেবে কাজ করছে।
শুভেন্দুর অভিযোগ
শুভেন্দু অধিকারী তাঁর এক্স পোস্টে বলেছেন, “কলকাতার বাগুইআটির উপকণ্ঠে ও নিউ টাউন রাজারহাট এলাকা অবৈধ বাংলাদেশি মুসলমানদের ডেরায় পরিনত হয়েছে। এই সব অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে প্রশাসনের সহযোগিতায় জাল ভারতীয় পরিচয় ও নথি তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। এদের নাম ইতিমধ্যেই ভোটার তালিকায় নথিভুক্ত হয়ে গেছে।”
তিনি আরও দাবি করেছেন যে, এই অনুপ্রবেশকারীরা পশ্চিমবঙ্গে স্থায়ী হয়ে দেশের অন্যান্য প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে এবং তৃণমূলের রাজনৈতিক সমাবেশে অংশ নিয়ে ভোট ব্যাঙ্কের ভূমিকা পালন করছে। তাঁর মতে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ইস্যুতে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান কারণ এই অনুপ্রবেশকারীরা তাঁর দলের ভোট ব্যাঙ্কের মূল স্তম্ভ।
তিনি বলেন, “এদের বাংলাদেশে ‘পুশ ব্যাক’ করলে তৃণমূলের অস্তিত্বই সংকটে পড়বে।”শুভেন্দু অধিকারী এই অভিযোগের সমর্থনে জ্যাংড়া-হাতিয়াড়া ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘুনি এলাকার একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন।
যেখানে তিনি দাবি করেছেন যে অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের উপস্থিতি কলকাতার চৌহদ্দি ছুঁয়ে ফেলেছে। তিনি আরও বলেছেন, “এরপর এরা কলকাতার মধ্যেও অবস্থান করবে।” তাঁর এই দাবি রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করেছে।
তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া
তৃণমূল কংগ্রেস এই অভিযোগের তীব্র নিন্দা করেছে। তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ এবং মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ডের চেয়ারম্যান সমীরুল ইসলাম বলেছেন, “বিজেপি বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের অবৈধ বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে তাদের উপর অত্যাচার করছে। এটি বাঙালি বিরোধী মনোভাব।”
তিনি আরও বলেন, “আধার এবং ভোটার আইডি কার্ড কেন্দ্রীয় সরকার ইস্যু করে, রাজ্য সরকার নয়। তাই জাল নথির অভিযোগ তুলে তৃণমূলের উপর দোষ চাপানো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।” তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বারবার বলেছেন যে, বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করা বাঙালি সংস্কৃতির উপর আঘাত। তিনি দাবি করেছেন, “১৯৭১ সালের মার্চের পর যারা বাংলাদেশ থেকে এসেছেন, তারা ভারতীয় নাগরিক। বাংলা ভাষা কথা বলা কোনো অপরাধ নয়।”
হোলিচরণ নার্জারি ডায়মন্ড হারবারে! ডুরান্ড কাপ ২০২৫–এ চমক দিতেই বড় চুক্তি
রাজনৈতিক বিতর্ক ও কলকাতা হাইকোর্টের ভূমিকা
এই ইস্যুতে তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে তীব্র রাজনৈতিক বাকযুদ্ধ চলছে। বিজেপি নেতা অমিত মালবিয়া দাবি করেছেন যে, ওডিশায় আটক ৪৪৪ জন অভিবাসীর মধ্যে ৩৩৫ জনের কাছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ইস্যু করা জাল নথি পাওয়া গেছে। তৃণমূল এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে যে, এই নথিগুলি কেন্দ্রীয় সরকার ইস্যু করেছে, এবং বিজেপি বাঙালি শ্রমিকদের হয়রানির জন্য এই অভিযোগ তুলছে।
কলকাতা হাইকোর্ট এই বিষয়ে একাধিক মামলার শুনানি করছে, যেখানে বাংলা ভাষাভাষী শ্রমিকদের অবৈধভাবে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। হাইকোর্ট কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে এই বিষয়ে রিপোর্ট তলব করেছে।
শুভেন্দু অধিকারীর দাবি যে বাগুইআটি এবং নিউ টাউন রাজারহাটে অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা জাল নথির মাধ্যমে ভোটার তালিকায় নাম তুলেছে, তা ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়িয়েছে। তৃণমূল এই অভিযোগকে বাঙালি বিরোধী বলে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বিজেপির উপর পাল্টা অভিযোগ তুলেছে।
এই বিতর্ক কলকাতা হাইকোর্টে মামলার মাধ্যমে আরও জটিল হয়েছে। ঘুনি এলাকার ভিডিও এবং শুভেন্দুর দাবি সত্য কিনা, তা নিয়ে তদন্তের প্রয়োজন। এই ইস্যু পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে, যা আগামী নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে।