শুভেন্দুর নেতৃত্বে ফের বিরাট ভরাডুবি বিজেপির, ‘অতি সক্রিয়তা’ই হারের কারণ?

কলকাতাঃ   লোকসভা নির্বাচনের পর এবার ফের উপনির্বাচনে ভরাডুবি বিজেপির (BJP)। রাজ্যের চারটি আসনেই বিপুল মার্জিনে জয় ছিনিয়ে নিল শাসক দল তৃণমূল। বাগদা, রানাঘাট, রায়গঞ্জ ও…

মমতা ও শুভেন্দু

কলকাতাঃ   লোকসভা নির্বাচনের পর এবার ফের উপনির্বাচনে ভরাডুবি বিজেপির (BJP)। রাজ্যের চারটি আসনেই বিপুল মার্জিনে জয় ছিনিয়ে নিল শাসক দল তৃণমূল। বাগদা, রানাঘাট, রায়গঞ্জ ও মানিকতলা এই চারটি কেন্দ্রেই বিরাট মার্জিনে জয় পেয়েছে শাসক দল(TMC)। সেইসঙ্গে আরও একবার বিপর্যস্ত গেরুয়া শিবির।

যারফলে রাজ্য বিজেপির নেতৃত্বের ক্ষমতা নিয়েও কিন্তু প্রশ্ন উঠে গেল। অর্থ্যাত্ শুভেন্দু-সুকান্তদের নেতৃত্বে যে দল এগোচ্ছে না, তা হাড়ে হাড়ে হয়তো বুঝতে পারছে মুরলীধর সেন লেন। কিন্তু এই শোচনীয় হারের নেপথ্যে কী কারণ? ২০২১ থেকে কেন বারবার হারের মুখ দেখতে হচ্ছে বঙ্গ বিজেপির নেতাদের। এনিয়ে একাধিকবার ময়নাতদন্তের পরও বের হয়নি কোনও সমাধান সূত্র। লোকসভা ভোটে ভরাডুবির পর শাসকদলের বিরুদ্ধে ছাপ্পা ভোট ও হিংসার অভিযোগ তুলে সরব হয়েছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। তারপর ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়েও একাধিকবার রাজভবন ও কেন্দ্রের দ্বারস্থ হন।

   

জিতেই হারের কারণ ফাঁস রায়গঞ্জের কৃষ্ণ কল্যাণীর! মমতা-অভিষেকের কৃতিত্ব নিয়েই সন্দেহ?

এদিকে, লোকসভা ভোটে গো-হারা হারের পরই অন্তর্দ্বন্দ্ব শুরু হয় বিজেপির অন্দরে। প্রচারের টাকা নয়ছয়, দলের নেতাদের পাল্টা দোষ চাপানোর লড়াইয়ে বেকায়দায় পড়তে হয় বিজেপিকে। দলের একাংশ হেভিওয়েট নেতাই মুখ খোলেন দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। নিজের পছন্দের আসন না পাওয়ায় অনেক নেতাই আঙুল তুলেছেন শুভেন্দুদের দিকেই। যা নিয়ে যথেষ্ট বিড়ম্বণায় পড়তে হয়েছে গেরুয়া শিবিরকে। সম্প্রতি একটি রিপোর্টে দাবি করা হয়, রাজ্যের প্রায় ৮০ হাজার বুথের ৭০ শতাংশতেই ছিল না কোনও বুথস্তরের নেতা।

মানিকতলার ভোটে গো-হারা হেরেও পুরস্কৃত কল্যাণ! বড় ঘোষণা কুণালের

ফলে ভূতুরে বুথ কর্মী দিয়েও ভোট করাতে হয়েছিল শুভেন্দুদের। এরমধ্যে ভোট পরবর্তী পর্যায়ে আরও একটি বিষয় প্রকট হয়ে উঠেছে, আদি-নব্য দ্বন্দ্ব। আগামী ১৭ জুলাই বিজেপির কর্মীসমিতির বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। সেখানে উপস্থিত থাকবেন কেন্দ্রীয় নেতারাও। কিন্তু তার আগেই আদি বিজেপি বাঁচাও নামে একটি সংগঠন ইতিমধ্যেই তৈরি করেছে বিজেপির আদি নেতারা। তাঁদের দাবি তৃণমূল থেকে নবাগত নেতাদের জন্যই বারবার বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হচ্ছে দলকে।

এই নিয়ে কেন্দ্রীয়স্তরেও অভিযোগ জানিয়েছেন তাঁরা। এমনকী কান পাতলে শোনা যায়, দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে সরাতেও অমিত শাহদের শরণাপন্ন হয়েছিলেন একাধিক নেতা। এদিকে দিলীপ-শুভেন্দু গোষ্ঠীর লড়াই সামনে আসায় দলের সাংগনঠিকস্তরেও ব্যাপক প্রভাব ফেলে।

লোকসভা ভোটের মাঝপথে কেঁদেছিলেন, মানিকতলা জিতিয়ে ‘চাণক্য’ সেই কুণালই

এই উপনির্বাচনে বাগদা ও রানাঘাটের মতো মতুয়া অধ্যুষিত আসনগুলিতে হেরে যাওয়ার অর্থ মতুয়া ভোটের ওপর বিজেপি যে প্রভাব বিস্তার করেছিল, তা অনেকটাই শিথিল হয়ে গেল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। লোকসভা ভোটে জিতে রানাঘাট কেন্দ্রের জয়ী সাংসদ মুখ খুলেছিলেন দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। এই বিষয়টিও ওই অঞ্চলে দলের সাংগঠিক ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলেই দাবি বিশ্লেষকদের। এছাড়া সিএএ নিয়ে বনগাঁ কেন্দ্রে মোদী সরকারের বিভ্রান্তি ছড়ানো মতুয়া জনমানষে বিজেপির প্রতি অবিশ্বাসের বাতাবরণ তৈরি করে। যার ফলে উপনির্বাচনে ব্যাপক ভোটে জিতল মধুপর্ণা ঠাকুর।

দেশের সর্বকনিষ্ঠ বিধায়ক হলেন বাগদার মধুপর্ণা ঠাকুর

দলীয় সূত্রে জানা যায়, শুভেন্দুর অতিরিক্ত রাজভবন নির্ভরশীলতাও দলের বিপর্যয়ের আরও একটি বড় কারণ হিসেবে দেখছে রাজনৈতিক মহল। রাজভবনের সঙ্গে বিরোধী দলনেতার সম্বন্বয়ের অভাবকেও দুষেছেন বিজেপির একাংশের নেতারা। আদালত-রাজভবন নির্ভরশীলতা বিজেপির ভোট ভরাডুবির অন্যতম কারণ হিসেবেও দেখছেন রাজনৈতিক মহল।