জরুরি অবস্থার (Emergency) ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আজ, বঙ্গ বিজেপি উত্তর কলকাতায় একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সাতজন সত্যাগ্রহীকে সম্মানিত করেছে, যাঁরা ১৯৭৫ সালের জরুরি অবস্থার সময় স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সাহসের সঙ্গে লড়াই করেছিলেন এবং কারারুদ্ধ হয়েছিলেন। এই সাতজন বীর হলেন শ্রী প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রী বিদ্যাসাগর মান্ত্রি, শ্রী কমল বেরিওয়াল, শ্রী সঞ্জয় রাস্তোগি, শ্রী ঈশ্বর পুরোহিত, শ্রী শ্যাম সিং এবং শ্রী মহাবীর প্রসাদ বাজাজ।
এঁদের মধ্যে দুজন বর্তমানে শহরের বাইরে থাকায় তাঁদের পক্ষে আত্মীয়রা সম্মান গ্রহণ করেন। এই অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন, এবং এই সত্যাগ্রহীদের অদম্য সাহস ও সংগ্রামকে কুর্নিশ জানানো হয়।
জরুরি অবস্থার প্রেক্ষাপট (Emergency)
১৯৭৫ সালের ২৫ জুন থেকে ১৯৭৭ সালের ২১ মার্চ পর্যন্ত ভারতে জরুরি অবস্থা (Emergency) জারি ছিল। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস সরকার সংবিধানের ৩৫২ অনুচ্ছেদের অধীনে এই জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে। এই সময়ে নাগরিক অধিকার স্থগিত করা হয়, সংবাদমাধ্যমের উপর কঠোর সেন্সরশিপ আরোপ করা হয়, এবং বিরোধী নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়।
অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষা আইনের (মিসা) অধীনে হাজার হাজার মানুষকে কারারুদ্ধ করা হয়েছিল। এই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে জয়প্রকাশ নারায়ণের নেতৃত্বে দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে ওঠে, যেখানে অসংখ্য সত্যাগ্রহী তাঁদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গণতন্ত্র রক্ষার লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
উত্তর কলকাতায় সম্মাননা অনুষ্ঠান
পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির উদ্যোগে উত্তর কলকাতায় আয়োজিত এই সম্মাননা অনুষ্ঠানে সত্যাগ্রহীদের (Emergency) সাহস ও ত্যাগের কথা স্মরণ করা হয়। বিজেপির প্রতিনিধিরা জানান, “এই সত্যাগ্রহীরা গণতন্ত্রের জন্য তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তাঁদের সংগ্রাম আজও আমাদের প্রেরণা জোগায়।” সম্মাননা হিসেবে তাঁদের শংসাপত্র, শাল এবং স্মারক প্রদান করা হয়। যে দুজন সত্যাগ্রহী শহরের বাইরে ছিলেন, তাঁদের পরিবারের সদস্যরা তাঁদের পক্ষে এই সম্মান গ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিজেপি নেতারা (Emergency) বলেন, “১৯৭৫-এর জরুরি অবস্থা ছিল ভারতীয় গণতন্ত্রের একটি অন্ধকার অধ্যায়। এই সময়ে সত্যাগ্রহীরা যে সাহস দেখিয়েছিলেন, তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি উদাহরণ।” উত্তর কলকাতার এই অনুষ্ঠানে স্থানীয় বিজেপি কর্মী এবং সমর্থকরা উপস্থিত ছিলেন, এবং সত্যাগ্রহীদের সংগ্রামের গল্প শুনে অনেকেই আবেগাপ্লুত হন।
সত্যাগ্রহীদের গল্প
শ্রী প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রী বিদ্যাসাগর মান্ত্রি, শ্রী কমল বেরিওয়াল, শ্রী সঞ্জয় রাস্তোগি, শ্রী ঈশ্বর পুরোহিত, শ্রী শ্যাম সিং এবং শ্রী মহাবীর প্রসাদ বাজাজ জরুরি অবস্থার সময় গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন। তাঁরা গোপন সভা আয়োজন, সংবাদপত্র বিতরণ এবং বিরোধী নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
মিসা-র অধীনে (Emergency) গ্রেপ্তার হয়ে তাঁরা কারাবাসের মতো কঠিন পরিস্তিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ জানান, “আমরা গণতন্ত্রের জন্য লড়েছিলাম, কারণ আমরা বিশ্বাস করতাম যে স্বাধীনতা ও অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া যায় না।”
বিজেপির রাজনৈতিক বার্তা
এই সম্মাননা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিজেপি (Emergency) জরুরি অবস্থার অন্ধকার দিনগুলোর কথা তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির নেতারা বলেন, “কংগ্রেস সরকারের জরুরি অবস্থা ছিল গণতন্ত্রের উপর আঘাত। আজ আমরা সেই সত্যাগ্রহীদের সম্মান জানিয়ে গণতন্ত্রের প্রতি আমাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছি।” এই প্রেক্ষাপটে, বিজেপি রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের শাসনকে ‘অঘোষিত জরুরি অবস্থা’ হিসেবে সমালোচনা করেছে।
রাজ্য রাজনীতিতে প্রভাব
এই সম্মাননা অনুষ্ঠান পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। বিজেপি নেতা সুকান্ত মজুমদার সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জরুরি অবস্থার সময়কার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, যা তৃণমূলের তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিজেপি জরুরি অবস্থার ইতিহাসকে পুনরায় সামনে এনে তৃণমূলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রচারকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে।
ফ্রি UPI সুবিধা আন্তর্জাতিক সিমে, জেনে নিন কীভাবে ব্যবহার করবেন
সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া
সামাজিক মাধ্যমে (Emergency) এই সম্মাননা অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “সত্যাগ্রহীদের সম্মান জানানো গণতন্ত্রের প্রতি বিজেপির প্রতিশ্রুতির প্রমাণ।” আরেকজন লিখেছেন, “জরুরি অবস্থার সেই অন্ধকার দিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন।” তবে, তৃণমূল সমর্থকরা এই অনুষ্ঠানকে ‘রাজনৈতিক নাটক’ হিসেবে সমালোচনা করেছেন।
জরুরি অবস্থার (Emergency) ৫০ বছর পূর্তিতে উত্তর কলকাতায় সত্যাগ্রহীদের সম্মাননা পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিদ্যাসাগর মান্ত্রি, কমল বেরিওয়াল, সঞ্জয় রাস্তোগি, ঈশ্বর পুরোহিত, শ্যাম সিং এবং মহাবীর প্রসাদ বাজাজের মতো সত্যাগ্রহীদের সংগ্রাম গণতন্ত্রের ইতিহাসে একটি উজ্জ্বল অধ্যায়।
এই অনুষ্ঠান শুধু তাঁদের ত্যাগের স্বীকৃতি নয়, বরং তরুণ প্রজন্মকে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি সচেতন করার একটি প্রচেষ্টা। আগামী দিনে এই উদ্যোগ রাজ্যের রাজনৈতিক আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করবে।