SSC Recruitment Case: ‘পরিকল্পিত জালিয়াতি’, সুপ্রিম কোর্টে নাস্তানাবুদ রাজ্য-এসএসসি!

‘পরিকল্পিত জালিয়াতি’। এসএসসির (SSC Recruitment Case) ২০১৬-র নিয়োগ প্রক্রিয়াকে ঠিক এমনই আখ্যা দিল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। একই সঙ্গে শীর্ষ আদালতের প্রশ্ন, ওএমআর শিট কেন…

ssc

‘পরিকল্পিত জালিয়াতি’। এসএসসির (SSC Recruitment Case) ২০১৬-র নিয়োগ প্রক্রিয়াকে ঠিক এমনই আখ্যা দিল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। একই সঙ্গে শীর্ষ আদালতের প্রশ্ন, ওএমআর শিট কেন নষ্ট করা হয়েছিল? কেন হাইকোর্টে যোগ্যদের সঠিক সংখ্যা জানায়নি এসএসসি? কাউকে আড়াল করার চেষ্টা করা হয়েছিল? হাজার হাজার অবৈধ নিয়োগের দায় কার? পরীক্ষা সংক্রান্ত তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রেও এসএসসি জালিয়াতি করেছে বলে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্ট।

ওএমআর শিট নষ্ট করা নিয়েও এদিন প্রশ্ন তোলে শীর্ষ আদালত। আদালত এসএসসির আইনজীবীকে প্রশ্ন করে, ওএমআর শিট নষ্ট করেছিলেন কেন? জবাবে এসএসসির আইনজীবী বলেন, আমাদের কাছে ডিজিটাল তথ্য সংরক্ষিত করা আছে। ওএমআর শিট স্ক্যানিং করার জন্য যথাযথ ভাবে টেন্ডার ডাকা হয়নি কেন, সেই প্রশ্নও তোলে শীর্ষ আদালত। এদিন সুপ্রিম কোর্টের একের পর এক চাঁচাছোলা প্রশ্নে স্বভাবতই নাস্তানাবুদ হতে হয় রাজ্য এবং এসএসসিকে। 

   

যোগ্য প্রার্থীর সংখ্যা এদিন আদালতে জানিয়েছে এসএসসি। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চে এসএসসি জানিয়েছে, ২০১৬-র চাকরির প্রায় ১৯০০০ নিয়োগ বৈধ। অর্থাৎ, এটা স্পষ্ট যে ৭০০০ নিয়োগ অবৈধ, তা শীর্ষ আদালতে বকলমে স্বীকার করে নিল এসএসসি। এখন দেখার, এই ১৯০০০ যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের সপক্ষে আদালতে কী প্রমাণ দেয় এসএসসি।

এর আগে বেশ কয়েকবার কলকাতা হাইকোর্ট এসএসসির কাছে যোগ্য চাকরিপ্রার্থীর সংখ্যা জানতে চেয়েছে। কিন্তু আলাদাভাবে যোগ্যদের সংখ্যা আদালতে কখনই জানায়নি এসএসসি। এ নিয়ে যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে ক্ষোভও ছিল। এসএসসি বারবারই অযোগ্যদের তালিকা আদালতে জমা দেয়। কিন্তু আজ, সুপ্রিম কোর্টে যোগ্যদের হয়ে সওয়াল করলেন এসএসসির আইনজীবী। জানিয়ে দিলেন, প্রায় ১৯০০০ নিয়োগ বৈধ। সিবিআইয়ের তথ্যে ভরসা রাখা গেলে যোগ্য-অযোগ্য আলাদা করা সম্ভব।

২২ এপ্রিল, সোমবার ২০১৬ সালের এসএসসির পুরো প্যানেল বাতিলের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চের এই নজিরবিহীন রায়ের ফলে চাকরি হারান ২৫ হাজার ৭৫৩ জন। একই সঙ্গে আদালত জানিয়ে দেয়, এসএসসি প্যানেলের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও যাঁরা চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের সুদ-সহ বেতন ফেরত দিতে হবে। সুদের হার হবে বছরে ১২ শতাংশ।

সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন চাকরিহারাদের একাংশ, এসএসসি এবং পর্ষদ। ২৯ এপ্রিল এই মামলার প্রথম শুনানি হয়েছিল। সেদিন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, প্রচুর সংখ্যক চাকরি বাতিল হয়েছে। সব ওএমআর শিট নষ্ট করে দিয়েছে। যোগ্য ও অযোগ্যদের আলাদা করবেন কীভাবে? আজ, ৭ মে এই মামলার দ্বিতীয় শুনানি চলছে। এদিন সকাল থেকেই সুপার নিউমেরিক পদ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন প্রধান বিচারপতি।

প্রধান বিচারপতি জানতে চান, কী কারণে সুপারনিউমেরিক পদ তৈরি করা হয়েছিল। প্রসঙ্গত, ৫ মে ২০২২ এ মন্ত্রিসভার বৈঠক থেকে অতিরিক্ত পদ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সেই প্রসঙ্গে হাইকোর্ট বলেছিল, যারা যারা অতিরিক্ত পদ তৈরির পরিকল্পনায় যুক্ত, সিবিআই তাঁদের চাইলেই হেফাজতে নিতে পারে। সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্নের মুখে রাজ্য এদিন আদালতে জানায়, সুপারনিউমেরিক পদ তৈরির পিছনে রাজ্যের কোনও খারাপ অভিসন্ধি ছিল না।

একই সঙ্গে মন্ত্রিসভাকে বাঁচাতে শীর্ষ আদালতে জোরালো সওয়াল করেন রাজ্যের আইনজীবী। এই মন্ত্রিসভার বৈঠকেই সুপারনিউমেরিক পদ তৈরি সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এদিন রাজ্যের আইনজীবী বলেন, মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে বেনিয়মের প্রমাণ নেই। শুধুমাত্র বৈঠক করেছিলেন তারা। সেই বৈঠক থেকে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে পুরো মন্ত্রিসভা বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত করানো হলে তো সংসদীয় গণতন্ত্র নিয়ে প্রশ্ন উঠবে বলেও আদালতে দাবি করে রাজ্য।