কেশপুরে বিজয়া সম্মিলনী ঘিরে তৃণমূলের অন্তর্কলহ প্রকাশ্যে

Internal rift in TMC surfaces in Keshpur as MLA Shiwli Saha publicly criticises block president over invitation card for Bijoya Sammilani. Opposition BJP and CPM hit out.

কেশপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর: দুর্গাপুজোর পর তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বস্তরে বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠানের নির্দেশ থাকলেও, পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরে সেই অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র ঘিরেই প্রকাশ্যে এল দলের অন্দরের দ্বন্দ্ব। আমন্ত্রণপত্রে স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী শিউলি সাহা-র নাম না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি এবং সরাসরি কটাক্ষ করেন ব্লক সভাপতি প্রদ্যুত পাজাকে।

Advertisements

আমন্ত্রণপত্রে নাম না থাকায় অসন্তোষ

গতকাল কেশপুর অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল নেতা ঋজু দত্ত, বিধায়ক শিউলি সাহা, ব্লক সভাপতি প্রদ্যুত পাজা-সহ অন্যান্য নেতৃত্ব। তবে অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে কেবলমাত্র ব্লক সভাপতির নাম থাকায় তা নিয়ে ক্ষুব্ধ হন বিধায়ক। মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়েও ঘুরিয়ে ব্লক সভাপতিকে একাধিক খোঁচা দেন তিনি।

শিউলি সাহার বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে যায়, দলের ভেতরে অন্তর্দ্বন্দ্ব চাপা থাকলেও তা প্রকাশ্যে চলে এসেছে।

ব্লক সভাপতির পাল্টা মন্তব্য

আজ এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে কেশপুর ব্লক সভাপতি প্রদ্যুত পাজা বলেন—

“অধিকাংশ ব্লকের আমন্ত্রণপত্রেই বিধায়কের নাম থাকে না। তবে উনি যদি আগেই বলতেন, আমি শুধু নাম নয়, উনার ছবি-ও দিয়েই দিতাম।”

এই মন্তব্য আরও আগুনে ঘি ঢালার মতো পরিস্থিতি তৈরি করেছে। স্থানীয় তৃণমূলের একাংশ মনে করছেন, এই দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিন ধরেই ভিতরে ভিতরে চলছিল, যা এখন প্রকাশ্যে ফেটে পড়েছে।

Advertisements

বিরোধীদের তোপ

এই ঘটনাকে ঘিরে ইতিমধ্যেই সক্রিয় হয়েছে বিরোধী দলগুলি। বিজেপির জেলা নেতৃত্বের কটাক্ষ—

“তৃণমূল কংগ্রেস আগে নিজেদের ঘর সামলাক, তারপর আমাদের সঙ্গে লড়াই করতে আসুক।”

অন্যদিকে সিপিএমের স্থানীয় নেতৃত্ব আরও একধাপ এগিয়ে এই বিজয়া সম্মিলনীকেই আখ্যা দিয়েছেন “অন্তর্কলহ সম্মিলনী”। তাঁদের দাবি, “তৃণমূলের ভেতরে গোষ্ঠী কোন্দল এখন এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে, সাধারণ অনুষ্ঠানও ঝগড়ার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।”

রাজনৈতিক প্রভাব

কেশপুর বহুদিন ধরেই তৃণমূলের গড় হিসেবে পরিচিত। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক ঘটনায় দলীয় কোন্দল, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এবং সাংগঠনিক অশান্তি প্রকাশ্যে এসেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিধানসভা ভোটের আগে বা লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে এই ধরনের প্রকাশ্য অন্তর্কলহ তৃণমূলের ভাবমূর্তি ও সংগঠনকে বিপাকে ফেলতে পারে।

দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব বারবার সতর্ক করলেও, ব্লক স্তরে এই ধরনের দ্বন্দ্ব তৃণমূলের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কেশপুরের ঘটনা আবারও দেখাল, নিচুতলার নেতৃত্বের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এবং স্থানীয় রাজনীতির দ্বিধা-বিভক্তি কত সহজেই প্রকাশ্যে চলে আসতে পারে। এখন দেখার বিষয়, রাজ্য নেতৃত্ব কীভাবে এই অন্তর্কলহ মেটায় এবং বিরোধীদের দেওয়া রাজনৈতিক অস্ত্রকে নিস্তেজ করে।