হাওড়া: মেরামতির কাজে ফের বন্ধ থাকতে চলেছে দ্বিতীয় হুগলি সেতু (Second Hooghly Bridge), যা বিদ্যাসাগর সেতু নামেও পরিচিত। হাওড়া ও কলকাতার মধ্যে যোগাযোগের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র এই সেতুতে আগামী রবিবার সারাদিন যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে বলে জানিয়ে দিয়েছে হাওড়া সিটি পুলিশ। শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইতিমধ্যেই বিকল্প পথের নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়েছে। বহু মানুষ, বিশেষত চাকরিজীবী, পরিবহণ কর্মী, পরীক্ষার্থী এবং যাত্রীদের এই সেতুর উপর নির্ভর করে প্রতিদিন যাতায়াত করতে হয়, ফলে রবিবার এই নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়তে পারে বিস্তৃত ভাবে।
শুক্রবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) সুজাতা কুমারী বীণাপানি। তিনি জানান, মেরামতির কাজ শুরু হবে ভোর সাড়ে ৪টে থেকে ৫টার মধ্যে। তবে কাজ নির্বিঘ্নে করার জন্য তার আগেই সেতুতে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া জরুরি। মেরামত শেষ হওয়ার পরও সেতুর স্থায়িত্ব, নিরাপত্তা পরীক্ষা এবং যান চলাচল স্বাভাবিক করতে সময় লাগে, তাই সব বিবেচনা করেই ভোর ৪টা থেকে রাত ৯টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত সেতুতে যান চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
প্রতিদিন লক্ষাধিক যানবাহনের চাপ বহনকারী দ্বিতীয় হুগলি সেতু দীর্ঘ ব্যবহারের ফলে ক্ষয়ের মুখে পড়েছে। এর জংশন, এক্সপ্যানশন জয়েন্ট, বিয়ারিং এবং সেতুর একাধিক কাঠামোগত অংশে মেরামতি প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের কাজ সময়মতো না করলে ভবিষ্যতে বড়সড় দুর্ঘটনার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। সেতুর স্থায়িত্ব এবং যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই প্রশাসন বারবার পরিকল্পনা করে রবিবার যান চলাচল বন্ধ রেখে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করছে। এর আগেও একাধিক রবিবার একই কারণে এই সেতু বন্ধ রাখা হয়েছিল।
সেতু বন্ধ থাকায় শহরের যান চলাচল যাতে ব্যাহত না হয়, সেই কারণে একাধিক বিকল্প রুট ঠিক করে দিয়েছে প্রশাসন। হাওড়া থেকে কলকাতা বা কলকাতা থেকে হাওড়ায় প্রবেশের প্রধান বিকল্প হতে চলেছে হাওড়া ব্রিজ ও নিবেদিতা সেতু। ডানকুনি, কোলাঘাট বা পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে যারা কলকাতা বা হাওড়ার দিকে আসবেন, তাদেরকে নিবেদিতা সেতু ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কোনা এক্সপ্রেসওয়ে এবং দ্বিতীয় হুগলি সেতু সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে, তাই হাওড়ায় প্রবেশ করতে হলে সলপ রোড, হাওড়া–আমতা রোড, আন্দুল রোড ও আলমপুর রোড ব্যবহার করতে হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। একইভাবে যারা পূর্ব মেদিনীপুর, কোলাঘাট, খড়গপুর কিংবা জাতীয় সড়কের দিকে যাবেন, তারাও এই পথগুলি ব্যবহার করতে পারবেন। প্রয়োজনে জিটি রোড (GT Road) কে বিকল্প মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করা যাবে বলেও জানিয়েছে প্রশাসন।
ট্রাফিক পরিস্থিতি সামাল দিতে সিটি পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। রবিবার শহরের ব্যস্ত মোড়, সেতু সংযোগস্থল, হাইওয়ে এন্ট্রি পয়েন্ট এবং গুরুত্বপূর্ণ জংশনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে। ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড, ট্রাফিক নির্দেশিকা এবং সিগন্যাল ব্যবস্থার মাধ্যমে চালকদের সঠিক রুটের দিশা দেওয়া হবে। জরুরি পরিষেবা যেমন অ্যাম্বুলেন্স, দমকল, পুলিশ এবং প্রশাসনিক গুরুত্বপূর্ণ যানবাহনের জন্য বিশেষ চলাচল পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে যাতে তারা বিকল্প পথে নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারে।
সেতু বন্ধ থাকার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়তে পারে অফিসযাত্রী, বাস-ট্যাক্সি পরিষেবা, পণ্য পরিবহণ এবং চিকিৎসাজনিত জরুরি যাতায়াতের উপর। হাওড়া ব্রিজ ও নিবেদিতা সেতুতে বাড়তি যানবাহনের চাপ থাকার কারণে রবিবার সকাল থেকেই যানজটের সম্ভাবনা প্রবল। বাস ও অটো পরিষেবার রুট বদল, অ্যাপ ক্যাবের ভাড়া বৃদ্ধি এবং যাতায়াতে অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধারণ যাত্রীদের কাছে বিশেষ অনুরোধ জানানো হয়েছে যাতে তারা প্রয়োজন ছাড়া ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার না করেন এবং সম্ভব হলে গণপরিবহন ব্যবহার করেন। যাত্রা শুরু করার আগে লাইভ ট্রাফিক আপডেট দেখে রুট নির্বাচন করার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। সময় হাতে নিয়ে বের হওয়া, শহরের কেন্দ্রীয় এলাকায় অপ্রয়োজনে যাতায়াত এড়িয়ে চলা এবং বিকল্প রুট সম্পর্কে আগে থেকে সচেতন থাকলে ভোগান্তি অনেকটাই কমানো সম্ভব হবে বলে মনে করছেন ট্রাফিক বিশেষজ্ঞরা।
হাওড়া সিটি পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, মেরামতির কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ করার চেষ্টা চলছে। কাজ শেষে দ্রুত সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। জনস্বার্থ ও দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই এই সাময়িক অসুবিধা মেনে নেওয়ার আবেদন করেছে প্রশাসন।


