শহিদ বেদীতে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগ শুভেন্দুর

নন্দীগ্রাম: “নন্দীগ্রামের মাটির কাছে আমি চিরঋণী। নিজের চামড়া কেটে পায়ের জুতো বানিয়ে দিলেও সেই ঋণ শোধ হবে না”, অপারেশন সূর্যোদয়ের ১৮তম বর্ষপূর্তিতে শহীদ বেদীতে দাঁড়িয়ে এই আবেগতাড়িত মন্তব্য করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। নন্দীগ্রামের গোকুলনগর কর পল্লীতে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে মাল্যদানের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানানোর পর তৃণমূল সরকারকে নিশানা করে তীব্র রাজনৈতিক বার্তা দেন তিনি।

Advertisements

২০০৭ সালের ১০ নভেম্বর নন্দীগ্রামের মানুষ আজও ভুলতে পারেনি। সেদিন ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির ডাকে সোনাচূড়া থেকে মহেশপুর পর্যন্ত বিশাল মিছিল বের হয়। অভিযোগ, মাঝপথে সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীদের হামলায় সেই শান্তিপূর্ণ মিছিল রক্তাক্ত রূপ নেয়। চলেছিল গুলি, ভেঙে পড়েছিল প্রতিরোধ আন্দোলনকারীদের মানবপ্রাচীর। নিহত হন ২ জন, আর ১২ জন আজও সরকারি তালিকায় ‘নিখোঁজ’। বাংলার রাজনৈতিক অভিধানে সেই ঘটনা চিরস্থায়ীভাবে স্থান করে নেয় অপারেশন সূর্যোদয় নামে।

   

এদিন শহীদ বেদীতে দাঁড়িয়ে শুভেন্দু শুধুমাত্র আবেগ প্রকাশেই থেমে থাকেননি, রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগও তোলেন। তাঁর দাবি, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১১ সালের পর নন্দীগ্রামবাসীকে একের পর এক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ, স্কুল, আইটিআই কলেজ, পানীয় জলের ব্যবস্থা কিছুই পূরণ হয়নি। শুধুমাত্র প্রতিহিংসার রাজনীতির কারণে নন্দীগ্রামকে বঞ্চিত করা হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “২০০৭ সালে যখন গুলি চলে, পুলিশ লুকিয়ে ছিল। আজও তারা লুকিয়ে। শাসক বদলেছে, সিস্টেম বদলায়নি। নিখোঁজ ১২ জনের পরিবার এখনও সরকারি ডেথ সার্টিফিকেট পায়নি। যেটা মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব, সেটা তিনি করেননি। সেই কাজ আমাকেই করতে হয়েছে।”

তৃণমূল নেতৃত্বকে সরাসরি কটাক্ষ করে শুভেন্দু বলেন, “ভোট এলেই বাংলায় পরিযায়ী নেতাদের ঢল নামে। একটু পরেই দেখবেন তৃণমূলের নেতারা দামি ফোন, ১০ আঙুলে ১৪টা আংটি পরে এসে মোমবাতি জ্বালাবে, মালা দেবে, ছবি তুলবে, আর ভোট মিটলেই অদৃশ্য হয়ে যাবে। এরা শুধু উৎসবে আসে, মানুষের দুঃখে নয়।”

Advertisements

তিনি আরও দাবি করেন, “নন্দীগ্রামের মানুষকে আজও লড়াই করতে হয় জল, শিক্ষার অধিকার, স্বাস্থ্য পরিষেবা আর সম্মানের জন্য। মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন মা-মাটি-মানুষের সরকার হবে, কিন্তু বাস্তবে হয়েছে মিথ্যে প্রতিশ্রুতি আর রাজনৈতিক প্রতিহিংসার সরকার।”

২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে এদিনের বক্তৃতা যেন রাজনৈতিক প্রস্তুতির ঘোষণায় পরিণত হয়। শুভেন্দু স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “২০২৬–এ যদি ওরা হারে, তাহলে বাংলায় তৃণমূলের রাজনৈতিক ঝাঁপ চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে।” তাঁর এই মন্তব্যে সভাস্থলে উপস্থিত বিজেপি কর্মী–সমর্থকদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা যায়।

২০২১ সালের আগে শুভেন্দুর নেতৃত্বেই নন্দীগ্রামে অপারেশন সূর্যোদয় স্মরণ অনুষ্ঠান পালিত হতো। কিন্তু বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে তৃণমূল ও বিজেপি—দুই রাজনৈতিক শিবির আলাদা আলাদাভাবে এই স্মরণ দিবস পালন করে আসছে। ফলে শহীদদের শ্রদ্ধা ঘিরেও রাজনৈতিক বিভাজন ক্রমশ আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে নন্দীগ্রামের মাটিতে।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২৬–এর আগে নন্দীগ্রাম ফের একবার বাংলার রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে। অপারেশন সূর্যোদয় আজ শুধুমাত্র একটি স্মরণ দিবস নয়, তা শাসক–বিরোধী শক্তি প্রদর্শনের মঞ্চেও পরিণত হয়েছে।