মিলন পণ্ডা, পূর্ব মেদিনীপুর: জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র মান্দারমণিতে (Mandarmani Beach) ঘটে গেল এক লজ্জাজনক ঘটনা। বেড়াতে এসে যৌন হেনস্থার শিকার হল মাত্র চার বছরের এক শিশুকন্যা। অভিযোগের ভিত্তিতে মান্দারমণি উপকূল থানার পুলিশ ওড়িশার দুই যুবককে গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের নাম সিতুন প্রধান ও মনোজিৎ আচার্য। তারা দু’জনেই ওড়িশার ময়ুরভঞ্জ জেলার বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার বিকেলে এক পর্যটক দম্পতি তাদের ছোট্ট কন্যাকে নিয়ে মান্দারমণির এক হোটেলে উঠেছিলেন। সেই হোটেলেই ছিল সিতুন প্রধান ও তার বন্ধু মনোজিৎ আচার্য। অভিযোগ, মদ্যপ অবস্থায় সিতুন হোটেলের সামনে শিশুটিকে আদর করার নাম করে অনুচিতভাবে স্পর্শ করতে থাকে। বিষয়টি লক্ষ্য করে শিশুটির বাবা-মা প্রতিবাদ জানালে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
সিতুন দাবি করে, সে শুধুমাত্র শিশুটিকে আদর করছিল। কিন্তু শিশুর বাবা-মা জানান, এটি আদর নয়, বরং স্পষ্ট যৌন হেনস্থা। এরপর শুরু হয় বচসা ও হাতাহাতি। শিশুর বাবা সিতুনের উপর চড়াও হলে, সিতুনের বন্ধু মনোজিৎ তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসে এবং পরিস্থিতি আরও বিশৃঙ্খল হয়। হোটেলের অন্যান্য পর্যটকরা চেঁচামেচি শুনে ছুটে আসেন।
খবর পেয়ে মান্দারমণি উপকূল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুজনকে আটক করে। পরবর্তীতে শিশুর বাবা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ দুই পর্যটককেই গ্রেফতার করে। প্রাথমিক তদন্তের পর সিতুন প্রধানের বিরুদ্ধে শিশু যৌন নির্যাতন আইনে (POCSO Act) মামলা দায়ের করা হয়েছে, তবে মনোজিৎ আচার্যের বিরুদ্ধে মারপিট ও সহায়তার অভিযোগ রুজু হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, “শিশুকন্যার উপর যৌন হেনস্থার অভিযোগ অত্যন্ত সংবেদনশীল। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।” সোমবার কাঁথি আদালতে ধৃতদের তোলা হলে বিচারক তাদের জামিনের আবেদন খারিজ করে জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।
ঘটনার পর মান্দারমণি এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। স্থানীয় মানুষ ও পর্যটকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এমন ঘটনা পুরো পর্যটন এলাকার ভাবমূর্তি নষ্ট করে। পরিবার নিয়ে আসার জায়গায় এভাবে শিশুর উপর নির্যাতন অত্যন্ত নিন্দনীয়।”
হোটেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হবে। পুলিশও জানিয়েছে, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ঘটনার পূর্ণ বিবরণ যাচাই করা হচ্ছে এবং সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, মান্দারমণি ও দিঘা উপকূল এলাকায় নারীদের ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।


