থানে কে পিছনে ফেলে জনসংখ্যায় রেকর্ড উত্তর ২৪ পরগনার

north-24-parganas-becomes-most-populous-district-in-india

কলকাতা: উত্তর ২৪ পরগনা জেলা এখন ভারতের সবচেয়ে জনবহুল জেলা এই খবরটা শুনে অনেকেরই চোখ কপালে উঠে যাবে। সাম্প্রতিক জনসংখ্যা অনুমান অনুসারে, এই জেলায় বাস করে প্রায় ১০.৯ মিলিয়ন মানুষ, যা মহারাষ্ট্রের থানে জেলাকে পিছনে ঠেলে দিয়েছে। ২০১১ সালের জনগণনায় থানে ছিল ১১.০৬ মিলিয়নের সঙ্গে শীর্ষে, কিন্তু ২০১৪ সালে পালঘর জেলা গঠনের পর থানের জনসংখ্যা নেমে এসেছে ৮.০৭ মিলিয়নের নিচে।

Advertisements

ফলে উত্তর ২৪ পরগনা এখন একা সামনে। এই পরিবর্তনটা শুধু সংখ্যার খেলা নয়, বরং ভারতের দ্রুত শহুরীকরণ, অভিবাসন এবং অর্থনৈতিক চাপের একটা জীবন্ত ছবি। যদি এই জেলার জনসংখ্যাকে একটা দেশ বলে ভাবেন, তাহলে এটা বলিভিয়ার মতো পুরো একটা দেশের সমান লোক এখানে কলকাতার ছায়ায় বাস করে।

   

দিল্লিতে বিলম্বিত ৮০০ বিমান! নির্দেশিকা জারি মুম্বইয়ে

কলকাতা মহানগরীর উত্তরাংশে, গঙ্গা আর ইছামতীর মাঝে বিস্তৃত এই জেলাটি ৪০৯৪ বর্গকিলোমিটার জুড়ে। বারাসাত জেলা সদর, কিন্তু এর মধ্যে বসিরহাট, বাঁটাজল, হাবড়া, দমদম, নদীয়া—এসব নাম শুনলেই মনে পড়ে কলকাতার সাবার্বস। ২০১১ সালের জনগণনায় ছিল ১০.০০৯ মিলিয়ন, যা ২০০১ সালের ৮.৯৩ মিলিয়ন থেকে ১২.০৪ শতাংশ বেড়েছে। এখন ২০২৫-এর অনুমানে ১০.৯ মিলিয়ন, যা ঘনত্বে ২৪৬৯ জন প্রতি বর্গকিলোমিটার ভারতের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ জেলা।

এটা শুধু সংখ্যা নয়, লাইফস্টাইলের স্টোরি। কলকাতা থেকে মাত্র ২০-৩০ কিলোমিটার দূরে থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ এখানে কাজ করে, বাস করে। হিন্দুস্তান মোটরসের সবুজ মাঠ থেকে আধুনিক আইটি হাব পর্যন্ত, এখানকার অর্থনীতি কলকাতার সঙ্গে জড়িয়ে আছে। কিন্তু এই বৃদ্ধির পিছনে বড় কারণ অভিবাসন—বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে হওয়ায় এবং কৃষি-ভিত্তিক অর্থনীতির চাপে অনেকে এখানে আসে।

Advertisements

সরকারি রিপোর্ট বলছে, ২০২৩-২৫-এর অনুমানে এই বৃদ্ধি ১.১ কোটির কাছাকাছি পৌঁছে গেছে, যা জাতীয় গড়ের চেয়ে দ্রুত।এই জনসংখ্যা বৃদ্ধি কীসের ফল? প্রথমত, শহুরীকরণ। কলকাতা মেট্রোর উত্তর লাইন, নতুন রাস্তা, শিল্পাঞ্চল এসব এখানে লোক টেনে আনে। দমদম বিমানবন্দর থেকে শুরু করে সল্টলেকের আইটি পার্ক, হেলথকেয়ার হাব সব মিলিয়ে চাকরির সুযোগ বেড়েছে।

দ্বিতীয়ত, শিক্ষা। এখানকার সাক্ষরতা ৮৪.০৬ শতাংশ, যা জাতীয় গড় ৭৪.০৪-এর উপরে। পুরুষদের ৮৭.৬১, মহিলাদের ৮০.৩৪—এটা দেখায় যে শিক্ষা এখানে পরিবর্তন আনছে। কিন্তু এর পিছনে অন্ধকার দিকও আছে। ঘনবসতির কারণে পরিবেশের চাপ: জলাভূমি কমছে, বন্যার ঝুঁকি বাড়ছে। গঙ্গা-ইছামতীর উপকূলে থাকায় প্রতি বছর বর্ষায় জল ঢোকে, এবং জলবায়ু পরিবর্তন এটাকে আরও খারাপ করছে।

স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, পরিবহন—সবকিছুতে চাপ। উদাহরণস্বরূপ, বাসের লাইনে লম্বা লাইন, স্কুলে সিটের অভাব, হাসপাতালে বিছানার লড়াই। জেলা প্রশাসন বলছে, ২২টা ব্লকে ১৫১৮টা গ্রাম, কিন্তু শহুরে এলাকায় ৫৯ শতাংশ লোক থাকে। এই মিশ্রণটা চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে—অবৈধ দখল, স্লাম, দূষণ। তবু, স্থানীয়রা বলেন, “এখানে জীবনের গতি আছে, সুযোগ আছে।”