নির্বাচনের আগে মুর্শিদাবাদে ২ হাজার বোমা উদ্ধার

মুর্শিদাবাদ: রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে উত্তেজনা ও উদ্বেগ। তারই মধ্যে মুর্শিদাবাদের দুই পুলিশ জেলায় গত তিন সপ্তাহে প্রায় দুই হাজার বোমা উদ্ধারের (Murshidabad bomb recovery) ঘটনা গোটা রাজ্যের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে প্রশাসন সবাই এখন তটস্থ।

Advertisements

তথ্য অনুযায়ী, গত ২০ দিনে মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলায় উদ্ধার হয়েছে ১৮০০–র বেশি বোমা। পাশাপাশি জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে উদ্ধার হয়েছে আরও প্রায় ২০০ বোমা। এই পরিসংখ্যান স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দিচ্ছে যে নির্বাচনের আগে এলাকায় কোনও বড় ধরনের অশান্তির পরিকল্পনা ছিল বা রয়েছে।

   

শনিবার নতুন করে উত্তেজনা ছড়ায় সামসেরগঞ্জ থানার জোতকাশী এলাকায়। একটি আমবাগানে বালতি ভর্তি সুতলি বোমা উদ্ধার করে পুলিশ। মুহূর্তে এলাকা ঘিরে ফেলা হয়, ডাকা হয় বম্ব স্কোয়াডকে। কে বা কারা ওই আমবাগানে বোমা লুকিয়ে রেখে গিয়েছিল, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে সামসেরগঞ্জ থানা।

নভেম্বর মাসে জেলা পুলিশ বোমা সংক্রান্ত তথ্য জানানোর জন্য একটি টোল ফ্রি নম্বর চালু করে। সেই নম্বরে একের পর এক ফোনে তথ্য আসে। এরপরই শুরু হয় লাগাতার তল্লাশি অভিযান, যার ফল বোমার পাহাড়। প্রশাসনের দাবি, সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় আরও অনেক গুপ্ত বিস্ফোরক মজুতস্থল চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে।

রানিতলা থানার পরিস্থিতিও একইরকম উদ্বেগজনক। গত ২০ দিনে ওই এলাকা থেকে উদ্ধার হয়েছে ৩০টি সকেট বোমা, সুতলি বোমা এবং প্রায় এক কেজির মতো বিস্ফোরক। নতুনগ্রাম অঞ্চলে শনিবার সকাল থেকেই বিশেষ তল্লাশি অভিযান চালানো হয়। ডগ স্কোয়াড, স্নাইপার টিম, মেটাল ডিটেক্টর সবই ব্যবহার করা হয়েছে। এলাকায় বহিরাগতদের চলাচল নিয়েও কড়া নজরদারি চলছে।

Advertisements

পুলিশ সূত্রের খবর, নির্বাচনের আগে কোনওরকম হিংসা বা গোলমাল রুখতেই এভাবে আগাম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছে মাত্র ৩০ জন। প্রশ্ন উঠছে যেখানে এত বিস্ফোরক মিলছে, সেখানে দায়ীদের সংখ্যা এত কম কেন? অনেকেই মনে করছেন, বড় মাথারা এখনও পুলিশের জালে ধরা পড়েনি।

সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় মুর্শিদাবাদে বোমা তৈরি ও মজুতের ঘটনা নতুন নয়। কিন্তু নির্বাচনের এত কাছে এসে বিপুল সংখ্যায় বোমা উদ্ধার হওয়ায় আতঙ্ক আরও বেড়েছে। প্রশাসনের বক্তব্য, এই উদ্ধার অভিযান চলবে এবং আরও বড় নেটওয়ার্ক ধরা পড়তে পারে। জেলা পুলিশের মতে, “স্থানীয়রা তথ্য দিলে বোমা মজুতকারীদের রুখে দেওয়া অনেক সহজ হবে।”

তবে সাধারণ মানুষ বলছেন, “বোমা পাওয়া যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু যারা এগুলো বানায় বা ছড়ায়, তারা ধরা না পড়লে আতঙ্ক কাটবে না।” নির্বাচনের আগেই কঠোর পদক্ষেপের দাবিতে সরব তাঁরা।