অভিষেককে সামনে রেখে কোটি টাকার প্রতারণা, জালে ২ আব্বাস

কলকাতা: এটা একটা অন্যরকমের প্রেমের গল্প। কিন্তু এই গল্পের শেষটা সুখের নয়, বরং কাঁটার মতো বিঁধে আছে প্রতারণার দংশন। অনলাইন ‘ম্যাট্রিমোনিয়াল’ ওয়েবসাইটে সম্পর্ক গড়ার স্বপ্ন দেখেই সর্বনাশ ডেকে এনেছিলেন অন্তত ২০ তরুণী। ভালোবাসার ছদ্মবেশে চলেছে কোটি টাকার প্রতারণা। হুগলী গ্রামীণ পুলিশের সাইবার সেলে জমা পড়া এক মামলার সূত্রে উন্মোচিত হয়েছে এই ভয়ঙ্কর জাল।

Advertisements

প্রথম অভিযোগ আসে সিঙ্গুরের এক ২৯ বছরের মহিলার কাছ থেকে। তিনি জানান, গত বছর ডিসেম্বর মাসে ‘অনুপম রায়’ নামে এক যুবকের সঙ্গে তাঁর আলাপ হয় এক বিবাহ সংক্রান্ত ওয়েবসাইটে। পরিচয় হয়, প্রেম গড়ে ওঠে, এবং সেই প্রেমই ধীরে ধীরে ফাঁদে পরিণত হয়।

   

শেখ শাহজাহানের জামিন আবেদন বাতিল সুপ্রিম কোর্টে

নিজেকে বর্ধমানের এক চালের কলের মালিক বলে দাবি করে যুবকটি জানায়, আয়কর দপ্তরের সমস্যার কারণে তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ‘ফ্রিজ’ হয়ে গেছে। প্রেমিকা কি তাঁকে সাহায্য করতে পারবেন? প্রথমে কিছু হাজার, পরে লক্ষ, আর শেষে প্রায় ৯ লক্ষ টাকা পাঠান মহিলা প্রেমিককে উদ্ধার করার আশায়।

একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ডিপোজিট স্লিপ পাঠিয়ে ‘অনুপম’ দেখান, টাকা ফেরত আসছে। কিন্তু টাকা আর ফেরে না, বরং শুরু হয় নতুন অজুহাত। কখনও নেটওয়ার্ক সমস্যা, কখনও পারিবারিক বিপদ—প্রেমের নামে চলতে থাকে অর্থ হাতানোর খেলা। সন্দেহ জাগলেও মাতৃত্ববোধ আর আবেগে ভেসে গিয়ে পাত্রীর মা ও দিদিমাও টাকা পাঠাতে থাকেন। এভাবেই প্রতারণার অঙ্ক দাঁড়ায় ৪৩ লক্ষ টাকায়।

Advertisements

এপ্রিলের পর থেকে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ। প্রোফাইল উধাও, ফোন আনরিচেবল। তখনই সাইবার সেলে অভিযোগ দায়ের করেন ওই তরুণী। তদন্তে নামে হুগলী পুলিশ। কিছুদিনের মধ্যেই গ্রেফতার হয় ৩২ বছরের মডেল অভিষেক রায় যার অ্যাকাউন্টে টাকা গিয়েছিল। তার সূত্রে ধরা পড়ে দুই ভাই জাহির আব্বাস (৪১) ও জামির আব্বাস (৩১)। জামিরকে ধরা হয় মন্দারমণির এক রিসর্ট থেকে, ১৪ অক্টোবর।

তদন্তে জানা যায়, এই আব্বাস ভাইরা দক্ষ প্রতারক। বাড়ি খানাকুলে। দক্ষিণ ভারতীয় এক মডেলের ছবি-ভিডিও চুরি করে তৈরি করত ভুয়ো প্রোফাইল। নাম পাল্টে কখনও অনুপম রায়, কখনও রবি সেন, কখনও সুজয় মিত্র। প্রোফাইল দেখে সম্ভাব্য পাত্রী ও তাঁদের পরিবার মুগ্ধ হয়ে পড়তেন। সেই বিশ্বাসের সুযোগ নিয়েই গড়ে ওঠে কোটি টাকার সাইবার সাম্রাজ্য। বর্ধমান, হাওড়া, তারকেশ্বর, এমনকি দিল্লি পর্যন্ত ছড়িয়ে ছিল এই প্রতারণার জাল। তদন্তে উঠে এসেছে এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ জন তরুণী তাঁদের ফাঁদে পড়ে অন্তত ৩ কোটি টাকা হারিয়েছেন।

এই ঘটনায় সমাজে এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছে পুলিশ প্রেম ও সম্পর্কের ক্ষেত্রেও প্রয়োজন যুক্তি ও সতর্কতা। প্রযুক্তি যেমন আমাদের কাছে মানুষকে এনেছে, তেমনই প্রতারণার নতুন দরজাও খুলে দিয়েছে। তাই ‘অনলাইন’ সম্পর্ক গড়ার আগে একবার ভেবে দেখা, যাচাই করে নেওয়া এবং ভিডিও কল বা সরাসরি সাক্ষাৎ ছাড়া কাউকে বিশ্বাস না করা এই বার্তাই দিয়েছে হুগলী পুলিশ। প্রেমের নামে প্রতারণা নতুন নয়, তবে এই কাহিনি মনে করিয়ে দেয় সাইবার দুনিয়ার রোম্যান্সের পেছনেও থাকতে পারে অপরাধের ছায়া। তাই আবেগ নয়, আজ প্রয়োজন সচেতনতা।